।। মনজুরুল হক।।
“আওয়ামী লীগ সরকার মাদ্রাসা শিক্ষাকে সাধারণ শিক্ষার সমমান করেছিল। যার ফলে মাদ্রাসা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস শিক্ষার্থীরা সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপকভাবে ভর্তি হতে পেরছে।
📍
লিখিত পরীক্ষায়‘সাধারণ জ্ঞান’ বিষয়ে অর্ধেক নম্বর বরাদ্দ ছিল ২০১৯ সালেও। লিখিত পরীক্ষায় ১২০ নম্বরের মধ্যে ৬০ নম্বর ছিল সাধারণ জ্ঞান। ভর্তি পরীক্ষার মোট ২০০ নম্বরের মধ্যে বাকি ৮০ নম্বর ছিল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে। সেখানে দুটি পরীক্ষাতেই জিপিএ-৫ পেলে পুরো ৮০ নম্বর পাওয়া যায় যা প্রায় শতভাগ মাদরাসা শিক্ষার্থীরা পেয়ে থাকে কারণ মাদরাসায় সর্বোচ্চ নম্বর দেওয়া হয়। ‘বই দেখে পরীক্ষা’ সেখানে ‘রেগুলেশন’ সিস্টেম।
📍
আওয়ামী লীগের এই মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ‘তুলে আনার’ সরকারি ব্যাখ্যা ছিল-‘পিছিয়ে পড়া মাদরাসা শিক্ষাকে সাধারণ শিক্ষার সমতুল্য করে তাদেরকে মূল স্রোতধারায় সামিল করা। রাজনৈতিক পরিকল্পনায় ছিল-হেফাজতি হুজুর এবং হেফাজতকেন্দ্রীক শিক্ষার্থীদের ‘কাছে টানলে’ তারাই আলিয়া মাদরাসাভিত্তিক জামায়াতিদের কাউন্টার করে দেবে। ৫৬০টি মডেল মসজিদও এই প্রকল্পের অংশ।
📍
সিদ্ধান্তগুলো লীগের জন্য ব্যুমেরাঙ হওয়ারই কথা কারণ লীগ বুঝতে চায়নি ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীর মধ্যে ফেরকা নিয়ে যত মতভেদই থাকুক, সেক্যুলারিজম, সোস্যালিজম তথা মুক্তিযুদ্ধের প্রতি ঘৃণার ক্ষেত্রে এদের কোনও মতপার্থক্য নেই। তাই তিন কোটি টাকার জমি মুফতে পেয়ে হাসিনাকে ‘কওমি জননী’ আখ্যা দেওয়া হেফাজতই ৫ আগস্টের আগে-পরে সবচেয়ে বেশি আওয়ামী প্রতিহিংসা দেখিয়েছে।
📍
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আমার কোনও আগ্রহ নেই। এ নিয়ে লিখিও না। তার পরও যতটুকু চোখে পড়েছে তাতে শিবিরের জয় লাভ কাকতালীয় নয়। এ তো হতেই হতো। ২৪’ এর ৫ আগস্টের পরে প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, কলেজের প্রিন্সিপাল, স্কুলের প্রধান শিক্ষক জামায়াতের প্রেসক্রিপশনে নিয়োগ হয়েছে। এমনকি ঢাবি ভিসি নিয়াজ আহমেদ খান-এর নিয়োগের পরে অনেক লীগের পক্ষের শিক্ষককে শুকরিয়া আদায় করতে দেখা গেছে!
📍
২০১৩ সালে বাংলাদেশে ফাজিল (স্নাতক) ও কামিল (স্নাতকোত্তর) মাদরাসা শিক্ষাকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার সমমর্যাদা দেওয়া, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পরে সকল শিক্ষায়াতনে জামাতের লোকজন বসানো, ঢাবিতে সকল বাম, বামমনষ্ক, প্রগতিশীলদের সঙ্গে এক কাতারে শিবিরকে মার্চ অন করিয়ে ঢাবিকে মূলত শিবিরের হাতে তুলে দিয়েছে ছাত্রদলসহ অন্যান্য গণতান্ত্রিক দল ও বাম ধারার ছাত্র সংগঠনগুলো (বিস্ময়করভাবে তাদের মধ্যে কথিত ‘মাওবাদী’ তকমাধারী সিরাজ সিকদারের মতাদর্শের ছাত্র সংগঠনও ছিল)
তার উপর ছাত্রদল পথে-ঘাটে চাঁদাবাজী করেছে আর বাম প্রগতিশীলরা আরবী শব্দ ব্যবহার করে শিবিরের কোলে উঠে বসেছে। ফলাফল-গো হারা হেরেছে জাতীয়তাবাদী আর কথিত প্রগতিশীলরা। এখন শিবিরের কাছে পরাজিত হওয়ার মলম-প্রলেপ হিসাবে এক দল বলছে-‘নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে, এ নির্বাচন মানি না’, পতিত বামরা বলছে-‘আমরা হারলেও প্রতিক্রিয়াশীলদের দিয়ে বলাতে পেরেছি-‘রাত বারটা পর্যন্ত মেয়েরা হলে বাইরে থাকতে পারবে নির্ভয়ে’!
📍
আমরা সাধারণ নাগরিকরা চাই না আমাদের সন্তানদের ক্যাম্পাসে রগ কাটা পড়ুক, কিন্তু না চাইলে কি হবে? ক্ষমতা এমনই সর্বগ্রাসী যে জিঘাংসা রিপু কন্ট্রোলে থাকবে না। এখন কী করবেন? শিবিরের হাতে মার খাবেন আর তসবিহ টিপতে টিপতে ইয়া নফসি পড়বেন এবং সব দায় ছাত্রলীগের ওপর চাপিয়ে মনকে প্রবোধ দিয়ে বলবেন-‘মাইরা ভূত বানায়া দিলেও কান ধরবার দেই নাই, সৈয়দ বংশের একটা মর্যাদা আছে না!” ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫