ভবিষ্যতে মানুষ আর বাচ্চা জন্ম দেবে না, কারণ তারা নিজেরাই চিরকাল বেঁচে থাকবে। এই চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন বিশ্বের এক নম্বর AI নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ডক্টর রোমান ইয়ামপোলস্কি।
আমরা AI কে আরও শক্তিশালী করতে পারলেও, তাকে নিরাপদ করতে জানি না। তার মতে, আমরা এমন এক Alien Intelligence তৈরি করছি, যার ওপর আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। বড় বড় কোম্পানিগুলো শুধু টাকার জন্য এই ভয়ঙ্কর রেসে নেমেছে, মানবজাতির নিরাপত্তার জন্য নয়।
তিনি বলেন, প্রথম ৫ বছর আমি ভেবেছিলাম আমরা নিরাপদ AI তৈরি করতে পারব। কিন্তু আমি যত গভীরে গেছি, ততই বুঝতে পেরেছি যে এর প্রতিটি অংশই সমাধান করা অসম্ভব। তার মতে, AI এর ক্ষমতা বাড়ছে এক্সপোনেনশিয়াল গতিতে, কিন্তু এর নিরাপত্তার উন্নতি হচ্ছে খুবই ধীর গতিতে। এই গ্যাপটাই আমাদের ধ্বংসের কারণ হবে।
২০২৭: আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স (AGI) চলে আসবে। কম্পিউটারে করা যায় এমন প্রায় সব চাকরি (যেমন: কোডিং, ডিজাইনিং, লেখালেখি, অ্যাকাউন্টিং) স্বয়ংক্রিয় হয়ে যাবে। ৯৯% বেকারত্ব দেখা দেবে।
২০৩০: হিউম্যানয়েড রোবট চলে আসবে। শারীরিক পরিশ্রমের চাকরি (যেমন: প্লাম্বার, ড্রাইভার, ফ্যাক্টরি কর্মী) শেষ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, এরপর আর কোনো প্ল্যান বি থাকবে না। কারণ AI সব নতুন কাজও শিখে ফেলবে।
ডক্টর রোমান বলেন, অর্থনৈতিক সমস্যাটা হয়তো সমাধান করা যাবে (যেমন: ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম)। কিন্তু আসল সমস্যা হবে মানসিক। মানুষ তার জীবনের উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলবে। অবসর নেওয়া মানুষেরা যেমন অবসাদে ভোগেন, তেমনি কর্মহীন এক বিশাল জনগোষ্ঠী তৈরি হবে, যা সমাজে ভয়ঙ্কর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে।
২০৪৫ সালের পর যা ঘটবে, তা আমাদের কল্পনারও বাইরে। সিঙ্গুলারিটি হলো সেই মুহূর্ত, যখন AI এতটাই উন্নত হয়ে যাবে যে সে নিজেই নতুন প্রযুক্তি তৈরি করতে শুরু করবে। তখন প্রযুক্তিগত উন্নতি এত দ্রুত হবে যে মানুষ আর তার সাথে তাল মেলাতে পারবে না। ডক্টর রোমান বলেন, এই মুহূর্তের পর কী হবে, তা ভবিষ্যদ্বাণী করা অসম্ভব, ঠিক যেমন আপনার পোষা কুকুরটি বুঝতে পারে না আপনি কেন পডকাস্ট করেন।
অনেকেই বলেন, বিপদ দেখলে AI কে আনপ্লাগ করে দেব। ডক্টর রোমান বলেন, এটা একটা বোকা ধারণা। একটি সুপার ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেমকে আনপ্লাগ করা আর ইন্টারনেট বা বিটকয়েন নেটওয়ার্ককে বন্ধ করে দেওয়ার মতো অসম্ভব। সে আপনার পদক্ষেপ আগেই আঁচ করতে পারবে এবং আপনাকে বন্ধ করে দেবে।
ডক্টর রোমান মনে করেন, সুপার ইন্টেলিজেন্স আসার আগেই হয়তো অন্য কোনো বিপদ ঘটবে। যেমন, কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী AI ব্যবহার করে এমন এক নতুন ভাইরাস তৈরি করতে পারে, যা কয়েক দিনের মধ্যে কোটি কোটি মানুষের জীবন কেড়ে নেবে।
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হলো, যারা AI তৈরি করছেন, তারাও পুরোপুরি জানেন না এটি কীভাবে কাজ করে। তারা শুধু ডেটা দিয়ে একে ট্রেইন করে, তারপর পরীক্ষা করে দেখে যে এটি কী কী করতে পারে। অর্থাৎ, আমরা এমন এক প্রযুক্তি তৈরি করছি, যার ওপর আমাদের কোনো বোঝাপড়া বা নিয়ন্ত্রণ নেই।
ডক্টর রোমান মনে করেন, স্যাম অল্টম্যানের মতো ব্যক্তিরা ক্ষমতা এবং খ্যাতির জন্য পুরো মানবজাতিকে নিয়ে জুয়া খেলছেন। তাদের কাছে নিরাপত্তার চেয়ে এই রেসে জেতাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ডক্টর রোমান প্রায় নিশ্চিত যে আমরা একটি সিমুলেশনের মধ্যেই আছি। তার যুক্তি হলো, যখন আমাদের প্রযুক্তি এতটাই উন্নত হয়ে যাবে যে আমরা বাস্তব থেকে অভেদ্য সিমুলেশন তৈরি করতে পারব, তখন আমরা কোটি কোটি সিমুলেশন চালাব। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমাদের আসল জগতে থাকার সম্ভাবনা তখন বিলিয়নে এক হবে। এর মানে, আমরা সম্ভবত এখনই কোনো সিমুলেশনের অংশ।
ডক্টর রোমান বলেন, বার্ধক্য একটি রোগের মতো, যা নিরাময় করা সম্ভব। তিনি মনে করেন, AI এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে মানুষ অমরত্ব লাভ করতে পারে। তখন মানুষ আর বাচ্চা জন্ম দেবে না, কারণ তারা নিজেরাই চিরকাল বেঁচে থাকবে।
অর্থনীতিবিদ্যায় নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ডগলাস ডায়মন্ড বলেন, ভবিষ্যতে বিটকয়েনই হবে একমাত্র দুর্লভ সম্পদ। সোনা বা অন্য যেকোনো সম্পদের জোগান বাড়ানো সম্ভব, কিন্তু বিটকয়েনের সংখ্যা ২১ মিলিয়নে সীমাবদ্ধ। তাই দীর্ঘমেয়াদে এর মূল্য বাড়তেই থাকবে।