ভেনিসে শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন পুরুলিয়ার অনুপর্ণা রায়। অনুপর্ণা রায় তাঁর ছবি “Songs of Forgotten Trees” এর জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালক পুরস্কারটি জিতেছেন।
ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক অনুপর্ণা রায় ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ৮২তম সংস্করণে ইতিহাস গড়লেন। তিনি ফেস্টিভ্যালের ‘অরিজন্টি’ বিভাগে শ্রেষ্ঠ পরিচালক (Best Director) হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
অনুপর্ণার এ বিজয়ে এক নেটিজন লিখেছেন
প্রিয় অনুপর্ণা,
নাহ, ব্যক্তিগত ভাবে চিনি না আপনাকে। তাতে কিছু যায় আসে না। কিন্তু আপনার জয়ে গর্বিত। একজন বাঙালি হিসাবে আমি, আমরা গর্বিত। এ জয় শুধু আপনার একার নয়। শুধু পুরুলিয়াবাসীর নয়, এ জয় সমগ্র বাংলার। এ জয় সকল বাংলা ভাষাভাষীদের। এ জয় বিশ্বের সকল বাঙালির।
পুরস্কার হাতে নিয়ে আপনার ছোট্ট ধন্যবাদ বক্তব্যটি শুনলাম। আহা, সাধু সাধু। স্রোতের উল্টাদিকে সবাই যেতে পারে না। আপনার বক্তব্যে আপনি তাই বলেছেন। কুর্ণিশ জানাই আপনাকে, সেল্যুট জানাই আপনার সাহসকে।
হয়তো কোনোদিন জানবেন না আপনার শুভেচ্ছা বক্তব্য সুদূর বস্টনে একজন সামান্য মানুষের চোখ আদ্র করে দিয়েছে। আপনার জয় হোক অনুপর্ণা রায়। আপনার ছবিটি দেখার সৌভাগ্য এখনো হয় নি, দেখে ফেলব। আরো ভালো ভালো কাজের প্রত্যাশায় রইলাম। আপনার জয় হোক। সুন্দরের জয় হোক। জীবন সুন্দর, আনন্দম।
আরেক নেটিজন লিখেছেন-
এখন অনেকেই পুরুলিয়ার এই বঙ্গ তনয়ার নাম জেনে গেছেন। ভারতীয় চলচ্চিত্রকে বিশ্বমঞ্চে আবারও তিনি পৌঁছে দিয়েছেন। ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক অনুপর্ণা রায় তাঁর প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র Songs of Forgotten Trees-এর জন্য ৮২তম ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের ওরিজ্জোন্তি বিভাগে সেরা পরিচালক হিসাবে পুরস্কার অর্জন করেছেন। এটি ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের জন্য এক গর্ব ও সম্মানের মুহূর্ত।
এটাও বড় কথা নয়!
বড় কথা ১
অনুপর্ণা এই পুরস্কার পাওয়ার আগে পর্যন্ত বাংলার কোনো কাগজ- যারা দশপাতার মধ্যে তিনপাতা সিনেমার গল্প ছাপে- তারা কেউ ওর নাম পর্যন্ত উল্লেখ করেনি। এরা সব “সূত্রের খবর” ছাপতে ওস্তাদ। তাই আমরা তাঁর খবর আগে জানতাম না।
বড় কথা ২
অনুপর্ণা রায় বাংলা মাধ্যমের ছাত্রী কিনা জানি না, তবে পরিষ্কার শুনলাম, আমরা যারা বাংলা মাধ্যমের ক্যাবলা, তাদের মত করেই “অ্যাওয়ার্ড” বললেন। নাতিদীর্ঘ বক্তৃতার সবটাই অ্যাকসেন্ট-সচেতন বাঙালিকে লজ্জিত করবে। কলকাতার কনভেন্ট এবং পাড়ায় পাড়ায় গজিয়ে ওঠা ইংলিশ মিডিয়ামের সায়েব, মেমরা আড়ালে আবডালে “সো এম্ব্যার্যাসিং” বলছেন হয়ত। কিন্তু ব্যাপার হল, তাতে ঘন্টা এসে যায়। অ্যাকসেন্টের ধার না ধেরে একটা পুরুলিয়ার মেয়ে অত বড় মঞ্চে পুরস্কার পাওয়ার মত ছবি বানিয়ে ফেলল। ওদিকে কলকাতার যেসব নির্দেশক দাড়ি চুলকে একটা বাক্যে দশটার মধ্যে আটটা ইংরিজি শব্দ বলেন আর সিনেমায় আর্বানা, সাউথ সিটির পরিবার দেখান তাঁরা ধারে কাছে পৌঁছতে পারছেন না।
বড় কথা ৩
বিশ্বমঞ্চে অনুপর্ণা বলেছেন, এই সম্মান তাঁর ব্যক্তিগত জয় নয়, বরং নিঃশব্দে লড়াই করা সব নারীর প্রতি শ্রদ্ধা। তাছাড়া, ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাত নিয়ে তিনি বলেছেন, প্রত্যেক শিশুর শান্তি ও স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে। প্যালেস্টাইনও এর ব্যতিক্রম নয়। স্পষ্ট কথা সুস্পষ্ট ভাবে।
শেষ কথা
যখন শিল্প, সাহিত্য, ভাস্কর্য, চলচ্ছিত্র, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য কিংবা সংস্কৃতি বাংলার মাটি থেকে বিতাড়িত হচ্ছে—এমনকি মানবিকতাও—তখন Songs of Forgotten Trees যেন এক ভেসে চলা খড়ের টুকরো, যাকে আশ্রয় করে আমরা বাঁচতে চাই। অনুপর্ণা এই মর্যাদাপূর্ণ সম্মান অর্জনকারী প্রথম ভারতীয় পরিচালক —এটাই আমাদের গর্ব।
বিশ্ব দরবারে ভারত তথা বাঙালিদের মুখ আবারও উজ্জ্বল করার জন্য তাঁকে কুর্ণিশ জানাই।