বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটময় সময় পার করছে। গত কয়েক মাসে রাজনৈতিক তাণ্ডব, গ্রাম-শহরে ছড়িয়ে পড়া মব-হিংসা এবং বিচারবহির্ভূত শাস্তির ঘটনাগুলো দেশের সামাজিক বন্ধনকে ছিন্নভিন্ন করে তুলছে। এই অরাজকতা শুধু স্থানীয় গুজব নয়, স্বাধীন মানবাধিকার সংস্থা ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বারবার উঠে এসেছে বাস্তব নিরাপত্তা সূচক হিসেবে। ফলে প্রশ্ন জাগছে,আমরা কি আইনশৃঙ্খলার শাসন হারিয়ে প্রতিশোধের সংস্কৃতিতে প্রবেশ করছি? জনগণের ক্ষোভের কারণ সুস্পষ্ট। দীর্ঘ অর্থনৈতিক কষাঘাত, দুর্নীতি ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার বোঝা বইতে বইতে মানুষ আজ ক্ষুব্ধ। কিন্তু আরও ভয়াবহ হলো, যে শাসনব্যবস্থাকে জনগণ শেষ আশ্রয় হিসেবে দেখে, সেই প্রশাসন ও সরকারের ভেতর থেকেই যদি মব-সন্ত্রাসের প্রশ্রয় মেলে, তবে আইন কেবল কাগজে-কলমে থেকে যায়। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছেন—স্বচ্ছ তদন্ত ও জবাবদিহি ছাড়া এই প্রবণতা অপরাধের সংস্কৃতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবে। এই অবস্থায় ইউনুস নেতৃত্বাধীন ইন্টারিম সরকারের দায়িত্ব নির্ণায়ক। যদি সরকার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়, ভয় ও অপব্যবহার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, অথবা ক্ষমতার ছত্রছায়ায় থাকা গোষ্ঠীগুলোর অপরাধ ঢাকতে ব্যস্ত থাকে, তবে এটি কেবল প্রশাসনিক দুর্বলতা নয় বরং একটি নৈতিক ব্যর্থতা। দেশের মানুষ তখন প্রতিশোধকেই ভরসা হিসেবে দেখবে যা রাষ্ট্রের জন্য বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত। আজ আমাদের সামনে দুটি পথ খোলা,স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মাধ্যমে ন্যায়বিচারের রাষ্ট্র গড়া, অথবা প্রতিশোধের সংস্কৃতি মেনে নিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাধীনতা ও ন্যায়বোধ ধ্বংস করা। নির্বাচন আমাদের হাতেই।