Close Menu

    সাবস্ক্রাইব

    সর্বশেষ খবরের সাথে আপডেট থাকুন।

    জনপ্রিয় সংবাদ

    ন্যায়বিচারহীন রাষ্ট্রে মব যেন স্বাভাবিক ঘটনা —

    September 16, 2025

    বিশিষ্ট কবি,ছড়াকার, সাংবাদিক মিলু কাসেম আর নেই

    September 16, 2025

    ২০ বছরের অর্জন এক বছরে মুছে দিল অবৈধ সরকার

    September 16, 2025
    Facebook Instagram WhatsApp TikTok
    Facebook Instagram YouTube TikTok
    JoyBangla – Your Gateway to Bangladesh
    Subscribe
    • হোম পেইজ
    • বিষয়
      • দেশ (Bangladesh)
      • আন্তজাতিক (International)
      • জাতীয় (National)
      • রাজনীতি (Politics)
      • অথনীতি (Economy)
      • খেলা (Sports)
      • বিনোদন (Entertainment)
      • লাইফ স্টাইল (Lifestyle)
      • শিক্ষাঙ্গন (Education)
      • টেক (Technology)
      • ধম (Religion)
      • পরবাস (Diaspora)
      • সাক্ষাৎকার (Interview)
      • শিল্প- সাহিত্য (Art & Culture)
      • সম্পাদকীয় (Editorial)
    • আমাদের সম্পর্কে
    • যোগাযোগ করুন
    JoyBangla – Your Gateway to Bangladesh
    Home » মিলু : তুইও চলে গেলি বন্ধু! …
    Art & Culture

    মিলু : তুইও চলে গেলি বন্ধু! …

    JoyBangla EditorBy JoyBangla EditorSeptember 16, 2025No Comments20 Mins Read
    Facebook WhatsApp Copy Link
    Share
    Facebook WhatsApp Copy Link

    ।। লুৎফর রহমান রিটন ।।

    আমার শৈশবের ছড়াবন্ধু মিলু। সিলেটের মিলু। সৈয়দ আবুল কাশেম মিলু ওরফে মিলু কাশেম।সত্তরের দশকে একই সময়ে লেখালেখি শুরু  করেছিলাম আমরা। চমৎকার ছড়া লিখতো। অসাধারণ ফিচার লিখতো। আমার একজীবনের কাছের বন্ধু ছিলো সে।

    মিলু নামের আমার এই বন্ধুটা বেশ কয়েকটা দিন জীবন মৃত্যুর সন্দিক্ষণে লাইফ সাপোর্টে ছিলো। লাইফ সাপোর্টে ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিলো মিলু। অসহনীয় ব্যথায় কাতরাচ্ছিলো সে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সেই কষ্টের দৃশ্যটা সার্বক্ষণিক হাসপাতালে থাকা পলি, সবচে ছোট বোনটা আমার কাছে বর্ণনা করতে করতে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলো।

    নদীর ছোট্ট বেলায় নদীকে খুবই ভালোবাসতো মিলু।

    জার্মানি কিংবা সিলেট থেকে ঢাকায় আমাদের বাসায় এসে দরোজায় দাঁড়িয়ে সব সময় উচ্চকণ্ঠে সে নদীকেই ডাকতো। আমাকে না।

    মিলুর কোলে বসে আমাদের ছোট্ট নদী কতো যে গল্প করতো ওর মিলু চাচ্চুর সঙ্গে! যখনকার কথা বলছি, মিলু তখনো বিয়ে করেনি। পরবর্তীতে সিলেটে মিলুর বিয়েতে নদী উপস্থিত ছিলো। মিলুর গায়ে হলুদ, বিয়ে এবং বৌভাত অনুষ্ঠানে রীতিমতো বিয়ের সাজে সজ্জিত হয়ে সীমাহীন আনন্দে মেতে ছিলো আমার ছোট্ট মেয়েটা।

    মিলু, মিলু রে, প্রাণের বন্ধু আমার, তোর অনন্তযাত্রা শান্তিময় হোক।

    অমৃতলোকে পরম শান্তিতে থাকিস তুই।

    ………………….

    মিলুকে নিয়ে একটা স্মৃতিগদ্য লিখেছিলাম বছর দশেক আগে।ওর সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের ব্যাপ্তি ও সীমানাটা বুঝতে সেই রচনাটা পড়া যেতে পারে। সিলেটের সঙ্গে আমার সখ্য এই মিলুর কারণেই।

    মিলুর প্রয়াণে সেই রচনাটাই আমার ভালোবাসার নৈবেদ্য—

    “[ আমার বন্ধু মিলু এবং

    স্মৃতিময় প্রীতিময় বন্ধুময় প্রিয় সিলেট

    লুৎফর রহমান রিটন

    দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ বলা হয় সিলেটকে।  সিলেটের চা পৃথিবীর সেরা।  সিলেটের মানুষজনের আন্তরিকতা অতুলনীয়। তাঁদের খাদ্য তালিকার অনিবার্য আইটেম সাতকরা। জীবনে প্রথম সাতকরাযোগে গরুর মাংস খেয়েছিলাম সিলেটের আম্বরখানায়, আমার বন্ধু মিলুদের বাড়িতে, ১৯৮১ সালে। তারও আগে আমি সিলেটে এসেছিলাম একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে, ১৯৭৪ সালে। কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার সদস্য ছিলাম। রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই এবং কবি সুফিয়া কামালের সঙ্গে সিলেট সুরমা কচি-কাঁচার মেলার একটি অনুষ্ঠানে সেবার আমিও গিয়েছিলাম সিলেটে। দুইরাত দুই দিনের সেই সফরের সময় আমরা অবস্থান করেছিলাম একটি বিখ্যাত পরিবারের সঙ্গে। বাড়িটি ছিলো রাজনীতিবিদ হুমায়ূন রশীদ চৌধুরীর ভাই যুগভেরী পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা আমিনুর রশীদ চৌধুরীর।  আমিনুর রশীদ চৌধুরীর সুদর্শন পুত্র  যুবক হ্যারল্ড আমাকে পিয়ানো বাজানো শিখিয়েছিলেন। ঝাঁকড়া চুলের বাবড়ি দোলানো যুবকটিকে দিনের বেলা খুব একটা দেখতাম না। তিনি বাড়িতে ফিরতেন রাতে। বাড়ি ফিরে কিছুক্ষণ পিয়ানো বাজাতেন। পিয়ানোয় তাঁর তোলা সুরের মূর্ছনা আমাকে মুগ্ধ করেছিলো।  পিয়ানোর প্রতি আমার আকর্ষণ দেখে এক সকালে তিনি আমাকে খুব আপন ভঙ্গিতে কাছে ডেকে এইকথা সেইকথার মাঝখানে আমি হারমোনিয়ম বাজাতে পারি জেনে উচ্ছসিত হয়ে  জিজ্ঞেস করেছিলেন আমিও পিয়ানোটা বাজাতে আগ্রহী কিনা। আমি হ্যাঁ  সূচক মাথা দোলাতেই তিনি আমাকে শিখিয়ে দিয়েছিলেন কিছু টিপস। দুটি গানের দুটি কলি আমি বাজিয়েছিলাম জীবনে প্রথম পিয়ানোয়। গান দুটি ছিলো–আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো আর আমার সোনার বাংলা। হারমোনিয়মের রিডের সিস্টেমেই পিয়ানোটা বাজানো যায় বলে আমার কোনো অসুবিধেই হয়নি। পিঠ চাপড়ে আমাকে উৎসাহ দিয়েছিলেন হ্যারল্ড ভাই–নিয়মিত প্র্যাকটিস করলে একদিন আমার চেয়েও ভালো বাজাতে পারবে তুমি।  ক্লিন শেভড একমাথা উড়ন্ত চুল চকচকে জুতো আর মোটা বেল্টের মেরুন রঙা বেলবটম প্যান্টে ইনকরা ঝলমলে শাদা শার্ট পরা আমার দেখা সেই দুর্দান্ত হ্যান্ডসাম যুবক হ্যারল্ডকে পরবর্তীকালে লম্বা দাঁড়ি শোভিত ফতুয়া পরিহিত শীর্ণদেহী বাউলের বেশে দেখে খুবই ভড়কে গিয়েছিলাম যদিও। জীবন যাপন এবং অভ্যেসের আমূল পরিবর্তন ঘটেছিলো তাঁর জীবনে। সে আরেক প্রসঙ্গ। 

    ১৯৭৮ সালের এক বিকেলে সিলেট সুরমা  কচি-কাঁচার মেলার সেই অনুষ্ঠানে আমি প্রথম দেখি তখনকার বিখ্যাত কিশোরী লেখক রোকেয়া খাতুন রুবীকে। সুরমা ব্রিজের পাশেই একটা অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠানটা হচ্ছিলো। আমি তাঁকে চিনি এবং কচি-কাঁচার আসরে আমি তাঁর লেখা পড়েছি বলার পর রুবী আপা আমাকে খুব আদর করে পাশে বসিয়েছিলেন।  সুফিয়ান আহমদ চৌধুরী নামের এক কিশোর সাহিত্যকর্মীর সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে সেই অনুষ্ঠানেই। সুফিয়ান আমাকে ওর সম্পাদিত পত্রিকা ‘জীবন মিছিল’-এর একটি কপি উপহার দিয়েছিলো।  প্রথম আলাপেই বুঝেছিলাম খুবই সহজ সরল এই ছেলেটা। সুফিয়ানের সঙ্গে আমার সেই পরিচয়টি পরবর্তীতে বন্ধুত্বে রূপ নিয়েছিলো। আমার সঙ্গে ওর প্রায় নিয়মিত যোগাযোগ হতো চিঠিতে। আমাকে প্রায়ই নিজের সম্পাদনায় প্রকাশিত বিভিন্ন সংকলন ও স্মরণিকার কপি পাঠাতো সুফিয়ান, ডাকযোগে। সিলেটে ধোপাদীঘির পূর্ব পাড়ে ওর বাড়িতেও গিয়েছি একাধিকবার। সিলেট ছড়া পরিষদের সভাপতি ছিলো সুফিয়ান। ছড়াপরিষদের উদ্যোগে  ১৯৯৮ সালে সুফিয়ান একটা ছড়া উৎসবে আমাকে অতিথি হিশেবে নিয়ে গিয়েছিলো। সেবার সেই ছড়া উৎসবের আরেকটি সেগমেন্ট ছিলো ওর  ছড়ার বই ‘নিধিরাম সর্দার’-এর প্রকাশনা উৎসব। সেই অনুষ্ঠানে হঠাৎ  বক্তৃতার মাঝখানে একটা পাগলামি করেছিলাম আমি। বলেছিলাম–শোকের অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। আজ আনন্দের অনুষ্ঠান। আসুন আনন্দ অনুষ্ঠানে আমরা সরবতা পালন করি। নিধিরাম সর্দারের লেখক সুফিয়ান আহমদ চৌধুরীকে  অভিনন্দন জানিয়ে করতালিতে মুখর হয়ে আসুন আমরা এক মিনিট সরবতা পালন করি। আমার সঙ্গে দাঁড়িয়ে হলভর্তি দর্শক তুমুল করতালিতে টানা এক মিনিট সরবতা পালন করেছিলো সেবার। আর এইরকম অবাক করা ঘটানায় লজ্জামেশানো আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিলো আমার সহজ সরল বন্ধুটির মুখ।  সুফিয়ানের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব অটুট আছে আজও। স্ত্রী কন্যার সঙ্গে এখন সে নিউইয়র্ক থাকে। আমি কখনো নিউইয়র্ক গেলে খুব দ্রুত ছুটে আসে সে, আমার সঙ্গে খানিকটা সময় কাটাবে বলে। আমার সময় কম থাকলে একটা হাগ, কিছু সময়ের হ্যান্ডশেক আর কয়েকটা ছবি তুলে হাসিমুখেই বিদায় নেয় সে। গেলো মে মাসে নিউ ইয়র্ক মুক্তধারার বইমেলায় গিয়েছিলাম। এক বিকেলে জেকসন হাইটস-এর ইত্যাদি রেস্টুরেন্টে বসে চা পান করছি এমন সময় সুফিয়ানের ফোন–বন্ধু তুমি কই? বুঝতে পেরেও না বোঝার ভান করে আমি জিজ্ঞেস করি–কে বলছেন? অপর প্রান্ত থেকে জবাব আসে–আমি সুপিয়ান।

    হাহ্ হাহ্ হাহ্। 

    ১৯৭৪ সালে সিলেট সুরমা কচি-কাঁচার মেলার সেই অনুষ্ঠানে আমার পরিচয় ঘটেছিলো সৈয়দ আবুল কাশেম মিলু নামের আরেকজন কিশোরের সঙ্গে। প্রথম আলাপেই মিলুকে আমার ভালো লেগেছিলো। আমাদের দুজনার মধ্যে বন্ধুত্ব স্থাপিত হতে সময় লাগেনি। ফিরে আসার দিন রেল স্টেশনে এসেছিলো মিলু, আমাকে বিদায় জানাতে। ঢাকায় ফিরে সপ্তাহ খানেক পর মিলুর একটা চিঠি পেয়েছিলাম। অনেক আবেগভরা চিঠি।  সিলেট থেকে রাতে  আমাদের বহন করা রেলগাড়িটা যখন ঢাকার পথে রওনা হলো, তখনকার বিষণ্ণতার কথা বলতে গিয়ে মিলু লিখেছিলো–মনে হচ্ছিলো রেললাইন দিয়ে নয় রেলগাড়িটা যাচ্ছিলো বুঝি বা ওর বুকের ওপর দিয়ে! নিঃসঙ্গ স্টেশনে অশ্রুসজল মিলু নাকি দাঁড়িয়েছিলো দীর্ঘক্ষণ। এরপর খুব দ্রুতই মিলু আর আমার ব্যক্তিগত বন্ধুত্বের সীমানাটা বিস্তারিত হয়ে মিশে গিয়েছিলো পারিবারিক বন্ধুত্বের সীমানায়।

    ১৯৮১ সালে আমি শার্লিকে নিয়ে সিলেটে বেড়াতে গিয়েছিলাম। লাক্কাতুরা চা বাগানসহ বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটা দিন আমরা হুলুস্থুল আনন্দে কাটিয়েছিলাম।  মিলুর ছোট ভাইবোনগুলো  আমাকে এবং শার্লীকে এতোটাই আপন করে নিয়েছিলো যে, চল্লিশ বছর পরেও শার্লি ওদের সবার প্রিয় আপাটিই হয়ে আছে। আর আমি ওদের রিটন ভাই।  আপন ভাই না হলেও তারচেয়ে কমও নই।  আমাকে ছাড়া ওদের কোনো বড় পারিবারিক অনুষ্ঠান হয় না। ওদের ছাড়াও হয় না আমাদের কোনো পারিবারিক বড়  অনুষ্ঠান। আমার সঙ্গে মাঝেমধ্যে মান অভিমানে জড়িয়ে পড়লেও শার্লির সঙ্গে ওদের কোনো ঝামেলা নেই।  বিশেষ করে মিলুর বাবার সঙ্গে শার্লির সম্পর্কটা ছিলো অপরূপ মমতায় আঁকা, মধুময়।  বিনা নোটিশে হুটহাট মিলুর বাবা ঢাকায় আমাদের বাড়িতে চলে আসতেন। টেলিভিশন ও পত্রিকার কাজকর্ম সেরে রাতে বাড়ি ফিরে আমি দেখতাম মিলুর বাবা আমাদের গেস্টরুমে গভীর নিদ্রায় মগ্ন। কিংবা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখতে পেতাম আমাদের ডায়নিং টেবিলে মিলুর বাবাকে খুব যত্ন করে সকালের নাস্তা খাওয়াচ্ছে শার্লি। আর  খেতে খেতে মিলুর বাবা  অজস্র গল্প করে চলেছেন শার্লির সঙ্গে।

    মিলুর বাবার খুব প্রিয় ছিলো ‘বিরান কৈ’ অর্থাৎ কৈ মাছ ভাজা। আমাদের ফ্রিজে মিলুর বাবার জন্যে শার্লি নিয়মিত যোগান রাখতো কৈ মাছের। বলা তো যায় না কখন তিনি এসে পড়েন! বিশেষ করে ইজতেমার সময়টায় তিনি আসতেনই। তাঁর সঙ্গে কোনো একজন সঙ্গীও থাকতো মাঝেমধ্যে।  শার্লির সঙ্গে মিলুর বাবার গভীর মমতার সম্পর্ক অবলোকন করে সঙ্গী ভদ্রলোক এক পর্যায়ে জিজ্ঞেস করতে বাধ্য হতেন–এরা কারা? কাদের বাড়িতে নিয়ে এসেছেন আমাকে? মিলুর বাবা বলতেন–এটা আমার আরেকটা মেয়ে। কিন্তু তাঁর এই মেয়েটা সিলেটি একসেন্টে কথা বলে না। কথা বলে বিশুদ্ধ বাংলায়, প্রমিত উচ্চারণে।

    আমাদের কন্যা নদী ছিলো মিলুর খুবই আদরের। ঢাকায় আমাদের বাড়িতে এসে জানালায় উঁকি দিয়ে মিলু কখনো আমাকে বা শার্লিকে ডাকতো না। ডাকতো নদীকে। আর নদীও মিলুর ডাক শুনে আনন্দে লাফিয়ে উঠতো।  আমাদের ড্রয়িং রুমের সোফায় মিলুর কোলে বসে কতো যে কথা বলতো নদী! আমাদের ছোট্ট এইটুকুন মেয়েটাকে মিলু তুই করে বলতো। নদীও মিলুকে তুই করেই বলতো এবং ডাকতো নাম ধরেই। বাংলাদেশ টেলিভিশনে তখন ‘মিলুপা’ নামের একটা দুগ্ধজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারিত হতো। সেই বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল মি-লু-পা/ মি-লু-পা/ মিলুপা-র অনুকরণে নদীও মিলুর কোলে বসে গাইতো–মি-লু-ভাই/ মি-লু-ভাই/ মিলুভাই!  মিলুর বাবার সঙ্গেও খুব ভাব ছিলো নদীর। মিলুর বাবাও নদীকে আদর করে তুই সম্বোধন করতেন।

    মিলুর সবক’টা ছোট ভাইবোনের সঙ্গেই আমার দারূণ সখ্য। লন্ডনে সৈয়দ আবুল মনসুর লিলুর বাড়িতে গিয়েছি একাধিকবার। লিলুও সপরিবারে এসেছে আমার এলিফ্যান্ট রোডের বাড়িতে।  লিলুর ছেলেমেয়েগুলো তখন একেকটা এইটুকুন ছিলো। এখন ওরা একেকজন কতো বড় হয়ে গেছে! মিলুর একটা ভাই, সৈয়দ আবু নাসের দিলু ছড়া লিখতো। সপরিবারে লন্ডনে বসবাসকারী দিলু নাম পালটে হয়েছে দিলু নাসের। লন্ডনে ছড়াকার হিশেবে খুবই খ্যাতিমান এই ছেলেটা। 

    মিলুর আরেক ছোটভাই লিটুর সঙ্গে আমার এক্সট্রা খাতির। খুবই চটপটে আর বুদ্ধিমান ব্যবসাবুদ্ধিসম্পন্ন সে ছেলেবেলা থেকেই। হোন্ডা কিনতো কিছুদিন চালাতো তারপর পাঁচ-দশ হাজার বেশি দামে হোন্ডাটা বিক্রি করে দিয়ে আবার আরেকটা হোন্ডা কিনতো। এবং এক পর্যায়ে সেটাও বেশি দামে কাউকে গছিয়ে দিতো। এই কারণে আমি লিটুকে বাটপার বলে ক্ষেপানোর চেষ্টা করলে চমৎকার হাসিতে ফেটে পড়ে লিটু বলতো–‘আরে ভাই আপ্নে বুঝবেন না। এইটা ব্যবসা।’

    সেই লিটু বিয়ে করে সংসার পেতেছে লিভারপুলে। আমার সঙ্গে দীর্ঘদিন দেখা হয় না বলে খুবই আফসোস তার। লিলু একবার লন্ডন থেকে ড্রাইভ করে আমাকে একদিনের জন্যে নিয়ে গেলো লিটুর ওখানে। চব্বিশ ঘন্টার মতো ছিলাম লিটুদের বাড়িতে। লিটুর ছোটখাটো সরল বৌটা খুব মিষ্টি করে কথা বলে। টেলিফোনে যতোবার অদেখা ওই মেয়েটার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে ততোবারই বলেছে সে–‘তুমি কবে আইবায় আম্রারে দ্যাখ্‌তে…!’  মিলুর আর কোনো ভাইয়ের স্ত্রী আমাকে তুমি করে বলে না। কিন্তু এই মেয়েটা বলে, অবলীলায়। আমিও খুব উপভোগ করি ওর এইরকম আন্তরিক সম্বোধন।

    বার্মিংহাম থেকে ফেরার সময় লিটু আমার হাতে কিছু পাউন্ড ধরিয়ে দিতে চাইলো। আমি বললাম, কাহিনি কি? লিটু বললো, এইটা আমাদের সিলটি খাস্টম। কেউ বেড়াইতে আইলে আমরা ডলার খিংবা পাউন্ড ধরাইয়া দেই। আমি বললাম, মাইর খাইবা। তোমাদের সিলটি খাস্টমের খ্যাতা পুড়ি।  হাসতে হাসতে মুঠোয় ধরা পাউন্ডগুলো নিজের পকেটে চালান করে দিয়ে লিটু বললো, আপ্নারে ধইন্যবাদ। আমার তো কুনু লুকসান নাই, উলটা লাভই হইলো…। 

    মিলুর বোন রিপা-শিল্পী-লিপি আর পলির সঙ্গে আমার সম্পর্কটাও এখানে উল্লেখ করতেই হয়। টেলিফোনে এক বোনের সঙ্গে কথা বললে অন্য বোনেরা কী যে অভিমান করে আমার ওপরে! সবার সঙ্গেই কথা বলতে হবে আমাকে। কোনো একজনকে বেশি ভালোবাসা চলবে না। শিল্পী থাকতো নিউইয়র্কে, সপরিবারে । এখন থাকে নিউজার্সিতে। কানাডায় আসার আগে শিল্পীদের নিউইয়র্কের বাড়িতে ছিলাম মাসখানেক।  শিল্পীর কিউট পিচ্চি একটা মেয়ে আর একটা ছেলে ছিলো তখন। এখন ওর মেয়ের সংখ্যা বেড়েছে। ২০০২ সালের শুরুতে আমার সংগে দেখা হওয়া  বাচ্চা দুটি এখন অনেক বড় হয়ে গেছে! ছেলেটা এই তো সেদিন একলা একা ঘুরে এসেছে বাংলাদেশ থেকে।   

    মিলুর সুবাদেই সিলেটে আমি আরো দু’জন বন্ধু পেয়েছি। সৈয়দ নাহাস পাশা এবং সৈয়দ বেলাল আহমেদ। ওরা সহোদর।  এখন লন্ডনে থাকে।  নাহাস আর বেলালের সঙ্গেও আমার বন্ধুত্বটা লম্বা সময় ধরে টিকে আছে। নাহাস আর বেলাল দুজনেই লিখতো এক সময়। সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত ছিলো দুজনই। নাহাস এখন লন্ডনের লোকাল একটি বাংলা সাপ্তাহিকের সম্পাদক। আর বেলাল খুবই সফল একজন ব্যবসায়ী হিশেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। 

    সিলেটে আমার খুব প্রিয় আর শ্রদ্ধেয় একজন কবি ছিলেন। তিনি দিলওয়ার। সিলেটের বন্ধুরা তাঁকে ‘গণমানুষের কবি’ বলতেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। সেই আশির দশকের শুরুতে, যখন আমি একজন সদ্য তরুণ ছড়াকর্মী, টগবগ করছি সাহিত্যের নেশায়, ছুটছি সর্বত্র—দেশের এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে, তখন এক বিকেলে সিলেটের ভার্থখোলায় কবি দিলওয়ারের বাড়িতে গিয়েছিলাম। বন্ধু মিলু কাশেম আমাকে নিয়ে গিয়েছিলো তাঁর কাছে। আমার মতোন অতি তরুণ নবীন এক ছড়াকারকে প্রবীন কবি দিলওয়ার বরণ করেছিলেন বিপুল ভালোবাসায়। কথাবার্তা আচরণে একেবারেই আটপৌরে, শাদামাটা। কোনো ব্যাপারেই কোনো লুকোছাপা নেই, নেই কোনো ওপরচালাকি। রাজধানীর যাবতীয় কৃত্রিমতা আর সারাক্ষণ নিজেকে প্রচারের ইঁদুরদৌড় এবং গোষ্ঠীবদ্ধ দলকানাদের মুখর ডামাডোলের বাইরে মফস্বল শহরে বসবাস করেও চিন্তায় চেতনায় ও মননে অত্যন্ত আধুনিক মনস্ক ছিলেন কবি দিলওয়ার। রাজধানীর অমানবিক যান্ত্রিক কোলাহল থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন তিনি সযত্নে। সিলেটের শান্তস্নিগ্ধ মায়াময় পরিবেশকেই তিনি তাঁর স্বর্গ বিবেচনা করেছেন। যখন খোলসে আবৃত ও মুখোসে পারঙ্গম তাঁর সতীর্থ সুযোগ-সন্ধানী লেখক-কবিরা রাজধানীতে বসে সাহিত্যের জমিদারিকে আরো বিস্তারিত করার কূট-কৌশলে নিয়োজিত, তিনি তখন মফস্বলের পত্র-পল্লবের গাঢ়সবুজের নেশার ঘ্রাণে মাতাল। দিলওয়ারের এই রাজধানী বিমুখতা তাঁকে দিয়েছে অনন্য বৈশিষ্ট্যের সিলমোহর। সেই সিলমোহর নিয়েই সগৌরবে মাথা উঁচু করে বেঁচে ছিলেন তিনি বিপুল মর্যাদায়।

    আমরা স্মরণে আনতে পারি, সত্তরের দশকের শেষান্তে কিংবা আশির সূচনায়, বাংলাদেশ টেলিভিশনে শিল্প- সাহিত্য ভিত্তিক একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতেন লেখক সৈয়দ শামসুল হক। তার একটি পর্ব ছিলো সিলেটের ওপর। শাদাকালো টিভির সেই জমানায় আমরা প্রত্যক্ষ্য করেছিলাম সৈয়দ হকের সঙ্গে দিলওয়ারের অসাধারণ একটি কথোপকথন, সেই অনুষ্ঠানে। সিলেটের ভার্তখোলায় অগণন বৃক্ষশোভিত তাঁর গৃহক্যাম্পাসে, পাখির সুমিষ্ট কুজনে সৃষ্ট স্বর্গীয় আবহসমৃদ্ধ চমৎকার একটি পরিবেশে শহুরে আধুনিক রুচিবান লেখক ও চৌকশ উপস্থাপক সৈয়দ হক নানান প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন কবি দিলওয়ারের প্রতি। কবি দিলওয়ার তাঁর আটপৌড় ভঙ্গিতে সিলেটের আঞ্চলিক ডায়ালেক্টের সঙ্গে প্রমিত বাংলার মিশেলে নির্মোহ সব উচ্চারণে কী রকম নাড়িয়ে দিচ্ছিলেন স্মার্ট কথক সৈয়দ হককে। হুবহু না হলেও অনেকটা এরকম একটা প্রশ্ন করেছিলেন সৈয়দ হক—আচ্ছা কবি, এই যে রাজধানী থেকে দূরে নিজেকে গুটিয়ে রেখে সাহিত্য চর্চা করে যাচ্ছেন আপনি দীর্ঘকাল ধরে, আপনার কি মনে হয়না যে আপনি রাজধানীতে অবস্থান করে এই চর্চাটি অব্যাহত রাখলে আপনি আরো বড় পরিসরে নিজেকে মেলে ধরতে পারতেন?

    তাৎক্ষণিক এবং খুবই সংক্ষিপ্ত উত্তরে দিলওয়ার রীতিমতো ঘায়েল করে ফেলেছিলেন উপস্থাপক সৈয়দ শামসুল হককে। সহজাত নিঃশব্দ হাসিতে উদ্ভাসিত দিলওয়ার বলেছিলেন তাঁর সেই মিশ্রডায়ালেক্টে—‘‘যুক্তরাজ্য নিবাসী আমার একজন ইংরেজ কবিবন্ধু বলেছিলেন—‘তুমি যদি মেট্রোপলিটান সিটিতে যাও তো কিছু বুকার দেখা পাবে!’’ দিলওয়ারের সেই উচ্চারণে মেট্রোপলিটান সিটির প্রতিনিধি লেখকের চেহারার অভিব্যাক্তিটি ছিলো দেখার মতো।

    কবি দিলওয়ারের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ছিলো দুই প্রজন্মের পরষ্পরের প্রতি পরষ্পরের বিপুল শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার। এক্ষেত্রে আমার একটি বাড়তি পাওনা ছিলো স্নেহ। যেটা তিনি আমার প্রতি সরবরাহ বা বর্ষণের ক্ষেত্রে ছিলেন অকৃপণ। কী বিপুল স্নেহই না পেয়েছি আমি তাঁর তরফ থেকে!

    আজ, এই রচনাটি লিখবার সময়ে কবি দিলওয়ারকে আমি স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।

    সত্তরের দশকে কিংবা আশির দশকে ঢাকার দৈনিক পত্রিকাগুলোর ছোটদের পাতায় সিলেটের একঝাঁক লেখক বন্ধুর নিয়মিত উপস্থিতি ছিলো। ইত্তেফাকের কচি-কাঁচার আসর, দৈনিক বাংলার সাতভাই চম্পা, সংবাদের খেলাঘর, পূর্বদেশের চাঁদের হাট এবং  পরবর্তীতে সাপ্তাহিক কিশোর বাংলায় সিলেটের লেখক বন্ধুদের উজ্জ্বল উপস্থিতি  আমাদের প্রাণিত করতো।  সিলেটের রোকেয়া খাতুন রুবী, তুষার কর, শাহাদাত করিম, শামসুল করিম কয়েস, আজিজ আহমদ সেলিম, সৈয়দ আবুল কাশেম মিলু, সুফিয়ান আহমদ চৌধুরী, সৈয়দ নাহাস পাশা, সৈয়দ বেলাল আহমদ, মোসলেহউদ্দিন  বাবুল, রব্বানী চৌধুরী, ফতেহ ওসমানী এরকম তারুণ্যের দীপ্তিতে দীপ্যমান তরুণদের সঙ্গে তখন  চট্টগ্রাম কিংবা ঢাকায় বসবাসকারী আমাদের অঘোষিত একটা প্রতিযোগিতা বা অদৃশ্য একটা লড়াই জারি ছিলো। আমরা সবাই একটা কিছু ভালো গল্প-ছড়া-কবিতা বা ফিচার লিখতে চাইতাম। তখন প্রায়শঃ চট্টগ্রাম কিংবা ঢাকার বন্ধুদের খুব অনায়াসেই পরাজিত করতো সিলেটের বন্ধুদের কেউ কেউ। 

    সিলেট চাঁদের হাট থেকে মিলুরা একটা চমৎকার সংকলন করেছিলো ‘আমরা ক’জন  নবীন মাঝি’ নামে। খুব আকর্ষণীয় লেটারিং সমৃদ্ধ প্রচ্ছদটি এঁকেছিলেন আফজাল হোসেন। সেই সংকলনে অনেকের সঙ্গে বদরউদ্দিন কামরান নামের একজনের কবিতাও ছিলো। ‘স্টেন’ নামের সেই কবিতাটির শেষ দুটি চরণ আজো মনে আছে–‘স্টেন ধরেছি ধরবো প্রয়োজনে/স্টেন রেখেছি তাই জাগিয়ে মনে।’ সিলেটের মেয়র বদর উদ্দিন কামরানই কি তিনি? তরুণ নেতা ছিলেন তখন। কেউ একজন কবিতাটি তাঁর নামে লিখে দিয়েছিলেন অনুমান করি। তা না হলে ওই কবিতার পরে আর কোনো কবিতা তিনি  লিখলেন না  কেনো! কিংবা হয়তো লিখেছেন কিন্তু আমার পড়ার সুযোগ হয়নি। যদি আমি নাম ভুল করে না থাকি তাহলে তো বলতেই হয়–মেয়র সাহেবের উচিৎ কবিতার চর্চা অব্যাহত রাখা।  

    সিলেটে যাই না বহুদিন। বিশেষ করে ২০০২ সাল থেকে কানাডায় থিতু হবার পর সিলেটে আর যাওয়া  হয়না বললেই চলে।  অথচ এক সময় আমি নিয়মিত সিলেটে যেতাম। তরুণ লেখক বন্ধুদের সঙ্গে যুগভেরী অফিসে আড্ডা দিয়েছি তখন। আড্ডা দিয়েছি সাপ্তাহিক ফেঞ্চুগঞ্জবার্তা অফিসেও।  মনে পড়ে একবার, ফেঞ্চুগঞ্জ বার্তা অফিসে তরুণ ছড়াবন্ধু (প্রয়াত)শারিক শামসুল কিবরিয়া আমার সিলেট আগমন উপলক্ষ্যে একটি চমৎকার আড্ডার আয়োজন করেছিলো। শারিক শামসুল কিবরিয়া খুব পছন্দ করতো আমাকে। সে ঢাকায় এলে একবার হলেও ঢুঁ মারতো বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে, আমার সঙ্গে কিছুটা সময় কাটাবে বলে। পোশাকে ধোপদুরস্ত কিবরিয়াকে খুব মনে পড়ছে। ‘গুডবাই’ নামে একটা ছড়ার বই ছিলো তার। 

    সিলেটের চা বাগানগুলোয়, আম্বরখানায়, জিন্দাবাজারে, ধোপাদীঘির পূর্ব পাড়ে, জগন্নাথপুরে, হবিগঞ্জে, সুনামগঞ্জে, মৌলভীবাজারে, জাফলঙে কতো চক্কর খেয়েছি!

    আহা তারপর কতোদিন সিলেটে যাই না!

    অবশেষে অনেকদিন পর, (প্রায় সতেরো বছর পর) ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ তে আবারো যাওয়া হলো সিলেটে।  শিক্ষা-সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র ‘একুশে বাংলা ফাউন্ডেশন’-এর এক দশক পূর্তি উপলক্ষ্যে ৩০ জানুয়ারি আয়োজিত ‘জাতীয় সাহিত্য উৎসবে’ আমাকে প্রধান অতিথির আসনে হাজির করেছে প্রীতিভাজন ছড়াকার বশীর আহমেদ জুয়েল।  অনেক চেষ্টা করেও ফেরানো যায়নি তাকে। ০১ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলা একাডেমির একুশের বইমেলা। চ্যানেল আই-এর প্রতিদিনের লাইভ ‘বইমেলা সরাসরি’ অনুষ্ঠানটি আমি উপথাপনা করি। এই সময়টায় তাই ব্যস্ততার শেষ নেই। তারপরেও জুয়েলের আন্তরিক আমন্ত্রণকে উপেক্ষা করার উপায় ছিলো না।  আমার বিশেষ প্রীতিভাজন সে।  উৎসবের বিশেষ অতিথি  বন্ধু আহমাদ মাযহারকে সঙ্গে নিয়ে অতঃপর ৩০ জানুয়ারি সকালের ফ্লাইটে উড়ে গেলাম সিলেটে, আমার স্মৃতিময় প্রীতিময় বন্ধুময় প্রিয় সিলেটে, মাত্র একদিনের জন্যে। (৩০ তারিখ দুপুরে সিলেট পৌঁছুলাম আর ৩১ তারিখ দুপুরেই আমরা ফের ঢাকায়।)  

    সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে আমাদের দু’জনকে স্বাগত জানালো মিলু কাশেম এবং শামসুল আলম সেলিম।  সেলিম একজন কবি এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতা।  বিকেলে সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের উন্মুক্ত চত্বরে শুরু হলো অনুষ্ঠান।  সিলেটের নবনির্মিত শহিদ মিনারটি  এককথায় অসাধারণ। শাদা মার্বেল পাথরের মাঝখানে টকটকে লাল সূর্যের নান্দনিক স্থাপনাটি দেখে মনপ্রাণ জুড়িয়ে গেলো।   নানা অনুষ্ঠানের সুবাদে  বলতে গেলে সারা বাংলাদেশই  সফর করেছি আমি। বলতে দ্বিধা নেই, বাংলাদেশের যে কোনো অঞ্চলের যে কোনো শহিদ মিনারের চেয়ে এটা অনন্য। শেষ বিকেলের নরম সোনালি রোদের অপরূপ বিভায় ঝলমল করছিলো শহিদ মিনারটি।

    মিনারের পাদদেশের ডানপাশে উন্মুক্ত মঞ্চে ‘উদীচী’র বন্ধুদের পরিবেশনায় দেশাত্ববোধক  জাগরণের গানগুলো শুনে এবং  ‘ছন্দ নৃত্যালয়ের’  পরিবেশনায় শাদাশাড়ি পরা একদল তরুণীর সঙ্গে একজনমাত্র পুরুষ নৃত্যশিল্পীর  চমৎকার দলীয় উপস্থাপনা দেখে মুগ্ধ হতেই হলো।  নিষ্ঠা-একাগ্রতা আর শর্তহীন দেশপ্রেম না থাকলে এমন আন্তরিক পরিবেশনা একেবারেই সম্ভব নয়। রাজধানীর আরোপিত এবং ওপরচালাকিতে পরিপূর্ণ কর্পোরেট কালচারের শিকার সংস্কৃতিকর্মীদের পক্ষে কী এমন স্নিগ্ধ-নিটোল উপস্থাপনা সম্ভব? বিশেষ করে স্যাটেলাইট টিভি শাষিত শ্রেষ্ঠত্বের তকমাযুদ্ধে নাকাল যখন সাংস্কৃতিক অঙ্গণ। বন্ধু মাযহারও একমত হলো। আমার মতো মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন দেখলাম আহমাদ মাযহারও।  খুব ছোটদের একটা দল ‘পাঠশালা’র খুদে আবৃত্তিকাররা আবৃত্তি পরিবেশন করলো।  নাজমা পারভীন নামের একজন শিক্ষয়িত্রীর তত্ত্বাবধানে বাচ্চাগুলো আবৃত্তি শিখেছে। কী যে ভালো লাগলো ছোটদের আবৃত্তিগুলো!

    এই অনুষ্ঠানে যাবার সুবাদে কতোদিন পর দেখা হলো ছড়াকার তুষার করের সঙ্গে! দর্শনের প্রবীন অধ্যাপক সুবক্তা প্রশান্ত কুমার সাহার সঙ্গে! কতো কতো তরুণ কবিবন্ধুর সঙ্গে পরিচিত হলাম! কিশোরগঞ্জ থেকে ছড়াকার জাহাঙ্গীর আলম জাহান এসেছিলেন উৎসবে অংশ নিতে। জাহানের ছড়া দর্শকদের আনন্দ দিয়েছিলো।  সংস্কৃতি বিষয়ে চমৎকার বক্তৃতা করেছিলেন প্রশান্ত কুমার সাহা।

    রাতে আম্বরখানা বড় বাজারের বনানী ভবনে মিলুদের বাড়িতে আমাদের জন্যে নৈশভোজের আয়োজন ছিলো। এই বাড়িটা আমার অনেক দিনের চেনা। বিয়ের আগে শার্লিকে নিয়ে মিলুদের এই বাড়িতেই প্রথম এসেছিলাম ১৯৮১ সালে। এরপর নদীকে নিয়েও এসেছি, নদী এইটুকুন ছোট্টটি ছিলো তখন।

    মিলুর সঙ্গে আমি আর মাযহার বনানী ভবনে প্রবেশ করেই বুঝতে পারলাম বাড়িতে একটা উৎসব উৎসব আমেজ। টানা বারান্দায় অনেকগুলো খুদে সদস্যসহ মিলুর বউ আর ওর তিন বোন রিপা-লিপি আর পলি অপেক্ষমান।  স্বামীর সঙ্গে আলাদা বাড়িতে বসবাস করা  মিলুর বোনেরা ওদের সন্তানদের নিয়ে  এসেছে আমার সঙ্গে দেখা করবে বলে। সবক’টা বোনের উপস্থিতিতে বনানী ভবন একটা মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। ছোট্ট এইটুকুন একটা মেয়ে, যার সঙ্গে ইতোপূর্বে দেখা হয়নি কখনো, এগিয়ে এলো সবার আগে–রিটোম্মামা রিটোম্মামা কেমন আছো? জানলাম এটা লিপির মেয়ে নুসরাত। ওকে আদর করা হলো সবার আগে। কিন্তু ও আমাকে চিনলো কি করে? লিপি ওকে আমার ছবি দেখিয়েছে। ছবি দেখে দেখেই রিটন মামাকে চিনে ফেলেছে এইটুকুন পুঁচকেটা। আমার পাশে বসে কতো যে কথা বললো! মনে হলো আমার সঙ্গে ওর অনেক দিনের জানাশোনা। একবারও মনে হলো না জীবনে এই প্রথম দেখা হয়েছে আমাদের!

    মিলুর বড় মেয়ে প্রিয়া, যার সদ্য বিয়ে হয়েছে সে এসেছে ওর বর আর শাশুরিকে নিয়ে। শাশুরিটা আগে ওর ফুপু ছিলো। রিপার ছেলে বাপ্পীর সঙ্গে ওর বিয়ে হয়েছে। শিগগিরই বাপ্পীর সঙ্গে লন্ডনে চলে যাবে মেয়েটা।

    ইউরোপের বিভিন্ন শহরে বিশেষ করে জার্মানিতে চৌদ্দ বছরের উদ্দাম পিছুটানহীন একাকী মুক্ত জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে মিলু এখন পাকাপোক্ত সংসারী। ফেসবুকে শুক্রবার স্ট্যাটাস দেয়–আজ জুম্মাবার…। মনে হয় মিলু কন্যা রাশির জাতক। চারচারটে ফুটফুটে কন্যার গর্বিত জনক সে। ১৯৯০ সালে মিলুর বিয়ের গায়ে হলুদের মঞ্চে মিলুর পাশে বসেছিলো আমার ছোট্ট নদীটা। শার্লি রাখি পরিয়ে দিচ্ছে মিলুর হাতে আর নদী আনন্দময় একটা লুক দিচ্ছে ক্যামেরার দিকে। মিলুদের পারিবারিক এলবামে এই ছবিটা দেখে ওর কন্যা নওরীন নাকি দাবি করেছে বাবার গায়ে হলুদের মঞ্চে বাবার পাশে বসে থাকা ছোট্ট মেয়েটা সে নিজে। ওটা কিছুতেই নদী আপু হতে পারে না…।

    মিলুর সবচে ছোট বোন পলিও এসেছে ওর  সদাহাস্যোজ্জ্বল স্বামী বাবলু ও কন্যা নাফিসাকে নিয়ে। সাত আট বছর বয়েসী নাফিসা মেয়েটা ভীষণ লাজুক। কথা কম বলে আর খালি হাসে। ওকে বললাম–তোমার মাকে যখন প্রথম দেখি তখন সে তোমার চাইতেও ছোট্ট ছিলো। শুনে মেয়েটা অবাক হয়ে গেলো! মিলুদের পরিবারে আমার সঙ্গে সবচে বেশি খাতির পলির সঙ্গে। আমার সঙ্গেই ওর যতো ঝগড়া-অভিমান-ভালোবাসা।  আমার কথাবার্তা আচার আচরণে খুবই ইম্প্রেসড মেয়েটা ছোটকাল থেকেই। একবার কী একটা কারণে পলি খুব মন খারাপের দীর্ঘ একটা সময়কে অতিক্রম করছিলো। লন্ডন থেকে সিলেট গিয়ে লিলু সেটা টের পেলো। ফিরে এসে আমাকে টেলিফোনে অনুরোধ করলো–আমি যেনো সময় করে পলির সঙ্গে একটু কথা বলি। কঠিন ডিপ্রেশনাক্রান্ত মেয়েটা। সারাক্ষণ মন খারাপ করে বসে থাকে। আমি বললাম–তুমি দুশ্চিন্তা করো না। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি কথা বলবো পলির সঙ্গে।

    কানাডা থেকে ফোন দিলাম পলিকে। ওর কণ্ঠস্বরে বিষণ্ণতা থাকলেও আমার একটা বেকায়দা ডায়ালগে খিলখিল হাসিতে যেনো বা গড়িয়ে পড়লো মেয়েটা। কিছুক্ষণ নানান কথাবার্তার পর বললাম–তোর নাকি মন খারাপ? মন খারাপ করিস না। কানাডায় তোর জন্যে বর খুঁজছি। থুত্থুড়ে একটা হোয়াইট বৃদ্ধকে তোর বর হিশেবে ঠিক করেছি। পলি প্রতিবাদ করে ওঠে–আমার জন্যে শেষে একটা বৃদ্ধকে পছন্দ করলেন! ভাইগুলো এমনই হয়। বোনের দু:খ বোঝে না।

    আমি বললাম, বোঝে। বোনের দু:খ ঠিকই বোঝে ভাইয়েরা। তোর যে মন খারাপ এটা আমি কী করে জানলাম তা না হলে?

    পলি বললো, বুঝেছি। লিলু ভাই বলেছেন আপনাকে।

    আমি বললাম, তুই জানলি কী ভাবে? আমি তো একবারও বলিনি সেই কথা!

    পলি বললো, লিলু ভাই এসেছিলেন। আমাকে বলে গেছেন তোর যখন খুব মন খারাপ লাগবে তুই রিটন ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলিস। আপনাকে কানাডায় ফোন করার জন্যে আমাকে কিছু টাকাও দিয়ে গেছেন। বাবার মৃত্যুর পর এই লিলু ভাইই আমাদের পরিবারে বাবার ভূমিকায় থাকেন। আপনার সঙ্গে কথা বললে আমার মন খারাপটা কমবে এটা লিলু ভাই ছাড়া আর তো কেউ বুঝলো না!

    সেদিন অনেক কথা বলেছিলাম মেয়েটার সঙ্গে। আমার উলটাপাল্টা কথায় হাসতে হাসতে মেয়েটা ভুলেই গিয়েছিলো যে সে বিষণ্ণতায় আক্রান্ত। ভুলেই গিয়েছিলো ওর মন খারাপ।  

    কাজের চাপে কিছুদিন পলিকে ফোন না করলে ভার্জিনিয়া থেকে শিল্পী আমাকে বলে–আপনার আদরের বোন তো অভিমান করে আছে আপনার সঙ্গে। একটা ফোন দিয়েন রিটন ভাই…।

    এবছর বইমেলা চলার সময় ক্যুরিয়ার সার্ভিসে লাল একটা পাঞ্জাবি এলো আমার কাছে। প্রেরক পলি ফ্রম সিলেট। টেলিফোনে পলি বললো–১৪ই ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন ডে তে আপনি চ্যানেল আই-এর  লাইভ অনুষ্ঠানটি করবেন এই লাল পাঞ্জাবিটা পরে। টিভি পর্দায় দর্শকরা সেদিন আমাকে ওই লাল পাঞ্জাবিতেই দেখেছিলেন।

    আসলে ব্যক্তিকেন্দ্রিক ভ্যালেন্টাইনকে যদি অঞ্চলকেন্দ্রিক ভাবার অপশন থাকতো তাহলে আমার প্রথম ভ্যালেন্টাইনের নাম হতো সিলেট। কারণ আমি আমার ভ্যালেন্টাইন শার্লিকে নিয়ে প্রথম ঢাকার বাইরে এই সিলেটেই গিয়েছিলাম, ১৯৮১ সালে। সিলেট আমার খুবই প্রিয়। সিলেট আমার ভ্যালেন্টাইন।

    অটোয়া ১৮ জুলাই ২০১৬]”

    ০২.

    মিলু হাসপাতালে ভর্তি হবার পর, পলি আমাকে টাইম টু টাইম আপডেট দিয়েছে। ওর লাইফসাপোর্টে যাওয়া, লাইফ সাপোর্ট থেকে ফেরা, ফের লাইফ সাপোর্টে যাওয়ার ঘটনাক্রম আমি জানতে পারছিলাম পলির কাছ থেকে। যতোবার সে আমাকে কল দিয়েছে কিংবা যতোবার আমি কল দিয়েছি পলি কথা বলছিলো কাঁদতে কাঁদতে।

    মিলুর লাইফ সাপোর্ট খুলে নেবার পর লিলু, পলি, লিটুর সঙ্গে কথা বলেছি। মিলুর ভাইবোনদের কান্নায় ভেসে যাচ্ছিলাম আমিও।

    কথা বলেছি লিভারপুলে বসবাসরত মিলুর কন্যা প্রিয়া এবং বাফেলোতে

    থাকা কন্যা নওরীনের সঙ্গে।

    আমার সঙ্গে ওর বাবার সম্পর্কের কথাগুলো বলতে বলতে মেয়ে দুটি কাঁদছিলো আকুল হয়ে। প্রিয়া বলছিলো–রিটন চাচ্চু আমি আমার ছোট বেলা থেকে জেনে এসেছি আপনি আমার বাবার সবচে প্রিয় বন্ধু ছিলেন।  আমাদের পারিবারিক এলবামে আপনাদের কতো যে ছবি দেখতে দেখতে বড় হয়েছি আমি! আমার জন্মেরও আগে থেকেই আপনি আমাদের পরিবারের প্রিয় মানুষ।

    আমার বাবাটা এতো আগে চলে যাবে ভাবতে পারছি না!…

    মিলুর আরো দুই কন্যা নূপুর ও প্রীতি আছে বাংলাদেশেই।

    মিলুর ভাই লিটুর সঙ্গে আগামীকাল বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হবে প্রিয়া।

    কিন্তু দুখি এই মেয়েটা ওর বাবার দেখা পাবে না।

    প্রিয়া সিলেটে পৌঁছার আগেই শেষ শয্যায় শায়িত হবে মিলু।

    বাংলাদেশকে নিয়ে মিলুর কয়েকটি ছড়া ছিলো রীতিমতো অভিভূত হবার মতো। সেই বাংলাদেশের মৃত্তিকার সঙ্গে মিশে যাবে মিলুর দেহটা।

    (মিলুর কবরে আমার পক্ষ থেকে রঙিন কিছু ফুল ছিটিয়ে দিস পলি)…

    প্রিয় মিলু, লাইফ সাপোর্টে জীবনের শেষ কয়েকটা দিন অবর্ণনীয় কষ্টে ছিলি। এবার পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে থাক তুই, বন্ধু আমার…

    অটোয়া ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

    Share. Facebook WhatsApp Copy Link
    Previous Articleলন্ডনে লক্ষ  মানুষের সমাবেশ: অবৈধ ইউনুস সরকারের পদ্যতাগ দাবী
    Next Article লেখক-পাঠক-সংস্কৃতিসেবীদের উপচেপড়া উপস্থিতিতে ত্রয়োদশ বইমেলা লন্ডনে অনুষ্ঠিত
    JoyBangla Editor

    Related Posts

    বিশিষ্ট কবি,ছড়াকার, সাংবাদিক মিলু কাসেম আর নেই

    September 16, 2025

    শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধা, কুষ্টিয়ায় বাবা-মার কবরে শায়িত ফরিদা পারভীন

    September 15, 2025

    একজন ফরিদা পারভীনের মহীরুহ হয়ে ওঠা

    September 15, 2025

    বাংলাদেশ বইমেলা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব ২০২৫ শুরু আজ ১৪ সেপ্টেম্বর

    September 14, 2025
    Leave A Reply Cancel Reply

    সম্পাদকের পছন্দ

    ন্যায়বিচারহীন রাষ্ট্রে মব যেন স্বাভাবিক ঘটনা —

    September 16, 2025

    ২০ বছরের অর্জন এক বছরে মুছে দিল অবৈধ সরকার

    September 16, 2025

    বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভাঙার খেলা

    September 15, 2025

    লন্ডনে র‌্যালি ফর বাংলাদেশ, স্ট্রাফাগাল স্কয়ারে একাত্তরের মতো আবার মহাসমবেশ

    September 15, 2025
    • Facebook
    • Twitter
    • Instagram
    • TikTok
    মিস করবেন না
    Uncategorized

    ন্যায়বিচারহীন রাষ্ট্রে মব যেন স্বাভাবিক ঘটনা —

    By JoyBangla EditorSeptember 16, 20250

    বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটময় সময় পার করছে। গত কয়েক মাসে রাজনৈতিক তাণ্ডব, গ্রাম-শহরে ছড়িয়ে…

    বিশিষ্ট কবি,ছড়াকার, সাংবাদিক মিলু কাসেম আর নেই

    September 16, 2025

    ২০ বছরের অর্জন এক বছরে মুছে দিল অবৈধ সরকার

    September 16, 2025

    জুলাইয়ের ৫২ ভুয়া শহীদ, ইউনুস সরকারের মিথ্যার নগ্ন মুখোশ

    September 16, 2025

    সাবস্ক্রাইব

    সর্বশেষ খবরের সাথে আপডেট থাকুন।

    About Us
    About Us

    মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও লালন করে দেশ ও বিদেশের খবর পাঠকের কাছে দুত পৌছে দিতে জয় বাংলা অঙ্গিকার বদ্ধ। তাৎক্ষণিক সংবাদ শিরোনাম ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পেতে জয় বাংলা অনলাইন এর সঙ্গে থাকুন পতিদিন।

    Email Us: info@joybangla.co.uk

    Our Picks

    ন্যায়বিচারহীন রাষ্ট্রে মব যেন স্বাভাবিক ঘটনা —

    September 16, 2025

    ২০ বছরের অর্জন এক বছরে মুছে দিল অবৈধ সরকার

    September 16, 2025

    বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভাঙার খেলা

    September 15, 2025

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.