কক্সবাজার বিমান ঘাঁটিতে চলছে মার্কিনিদের বিশেষ বৈঠক, ইমিগ্রেশন ছাড়াই মার্কিন সেনার বাংলাদেশে অবাধে প্রবেশ ঘিরে রহস্য ঘনীভূত
বিশেষ প্রতিবেদক
বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন মাত্রা যোগ করে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে শুরু হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর আরও একটি গোপন সামরিক মহড়া। অন্তত ১২০ জন মার্কিন সেনা সদস্যের অংশগ্রহণে এই মহড়া ঘিরে নজিরবিহীন গোপনীয়তা বজায় রাখা হচ্ছে, যা দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষত, কক্সবাজার বিমান ঘাঁটিতে এমন একটি গোপন বৈঠক এবং কোনরকম ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া ছাড়াই মার্কিন সেনাদের দেশে অবাধে প্রবেশের খবর ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগ ও শঙ্কা তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষের মনে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি, গত ১০ই সেপ্টেম্বর ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এসে পৌঁছান মার্কিন সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রায় ১২০ জন সদস্য। তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে শহরের অভিজাত র্যাডিসন ব্লু বে ভিউ হোটেলে, যেখানে তাদের জন্য ৮৫টি কক্ষ আগে থেকেই সংরক্ষিত ছিল। তবে অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় হলো, হোটেলের গেস্ট রেজিস্টারে তাদের কারও নাম বা পরিচয় নথিভুক্ত করা হয়নি, যা এই অভিযানের গোপনীয়তা ও স্পর্শকাতরতাকে স্পষ্ট করে তুলেছে।
অন্যান্য গণমাধ্যম যখন শুধু চট্টগ্রামের কার্যক্রম নিয়েই সংবাদ পরিবেশন করছে, তখন অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সূত্র জানিয়েছে, মার্কিন সামরিক প্রতিনিধি দলের একটি অংশ চট্টগ্রামের কার্যক্রমের পাশাপাশি কক্সবাজার বিমান ঘাঁটি পরিদর্শন করেছে এবং সেখানে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলিত হয়েছে। এই বৈঠকের আলোচ্যসূচি এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করা হচ্ছে। কক্সবাজারের এই কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিমান ঘাঁটিতে মার্কিনীদের এমন গোপনীয় তৎপরতা এই মহড়ার উদ্দেশ্য নিয়ে নতুন প্রশ্ন তৈরি করেছে।
সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, এই মহড়ায় অংশ নিতে আসা মার্কিন সেনারা কোনো ধরনের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া অনুসরণ করেননি।
জানা গেছে, মার্কিন সামরিক বাহিনীর নিজস্ব পরিবহন বিমানে করে তারা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে অবতরণ করেন এবং তাদের কোনো পাসপোর্ট পরীক্ষা করা হয়নি। এটি দেশের সার্বভৌমত্ব ও প্রচলিত আইন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
১৪ই সেপ্টেম্বর কক্সবাজার বিমান ঘাটিতে মার্কিন ইন্দোপ্যাসিফিক কমাণ্ডের বিমান বাহিনীর সদস্যদের সাথে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর উচ্চ পদস্থ সদস্যদের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং রাতে মার্কিন বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা কক্সবাজার বিমান ঘাটি পরিদর্শন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায়।
এই মহড়া এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে নানারকম শঙ্কাজনক খবর শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যেই গত ৩১শে আগস্ট ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেল থেকে টেরেন্স আরভেল জ্যাকসন (৫০) নামে এক মার্কিন স্পেশাল ফোর্সেস কমান্ড (এয়ারবোর্ন) কর্মকর্তার রহস্যজনক মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়, যিনি বাংলাদেশি সেনাদের গোপন প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন।
পূর্বেও বাংলাদেশে ‘অপারেশন প্যাসিফিক অ্যাঞ্জেল’ বা ‘টাইগার লাইটনিং’-এর মতো মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা উভয় দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে আন্তঃকার্যক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে আয়োজিত বলে জানানো হয়েছিল। তবে এবারের মহড়ার প্রকৃতি ও গোপনীয়তা অতীতের সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে।
নর্থইস্ট নিউজের তথ্য অনুযায়ী, এই মহড়ায় মার্কিন বিমানবাহিনীর দুটি শক্তিশালী সি-১৩০জে সুপার হারকিউলিস পরিবহন বিমান ব্যবহার করা হচ্ছে, যা কৌশলগত পরিবহন এবং বিশেষ অভিযানে অত্যন্ত পারদর্শী। গত ১৪ই সেপ্টেম্বর মিশরীয় বিমানবাহিনীর একটি পরিবহন বিমানও চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে, যা এই অঞ্চলের সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধিরই ইঙ্গিত দেয়।
আগামী ২০শে সেপ্টেম্বর মার্কিন সেনাদের চট্টগ্রাম ত্যাগ করার কথা থাকলেও তাদের গোপনীয় কার্যক্রম এবং নজিরবিহীন উপস্থিতি দেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বা আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।