।। ওমর ফারুক শুভ।।
রাজনৈতিক ভন্ডামারা যখন রাজনীতি করে সুবিধা লুটা শুরু করে দিলেন তখন একদল ভন্ডামা বলা শুরু করে দিলো ” হাত পাখা ও দাঁড়িপাল্লা মার্কায় ভোট দিলে আপনি জান্নাতে যাবেন।” এই দেশের একদল ধর্মান্ধ মুসলমান ভন্ডামাদের ভন্ডামি বুঝতে না পেরে জান্নাত পেয়ে গেছে এইভেবে এসব মার্কায় সিল মেরে দিলো।
আহম্মকের দল এটা ভাবেনি যে কোরআন ও হাদীসের কোথায় বলা আছে হাতপাখা ও দাড়িপাল্লায় ভোট দিলে জান্নাত পাওয়া যাবে ?
এটাকেই বলে ধর্মান্ধতা।ধর্মে অন্ধ হয়ে এরা যাছাই বাছাই না করে ভন্ডামাদের মিষ্টি কথায় বিভ্রান্ত হয়। ছোটবেলায় দেখতাম ওয়াজ হতো কোরআন ও হাদিসের আলোকে।বর্তমানে দেখছি একদল কমেডিয়ান এইসব ইসলামিক আলোচনাকে হাসির পাত্র বানিয়ে ফেলেছে।এরা অর্থনীতির ছাত্র না হয়েও অর্থনীতি নিয়ে বড় ভাষণ দিয়ে ফেলছে, বিজ্ঞানের ছাত্র না হয়েও আইনষ্টাইন ও হকিংয়ের চেয়ে বড় বিজ্ঞানী হয়ে যাচ্ছে। এজন্য বিজ্ঞজনেরা বলে থাকেন , ‘ অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী। এদের ওয়াজ শুনলে মনে হয় পৃথিবী থেকে মহাকাশ সব এদের মাথার মধ্যে। কিন্তু মহাকাশ মুখস্থ বিজ্ঞান নয় এটা একটা পদার্থের সমীকরণের ভীষণ জটিল কিছু সুত্র।।
মহাকাশ বিজ্ঞানী কার্ল সেগান পৃথিবীকে বলেছেন,এই A pele blue dot. ডট শব্দের অর্থ যাদের জানা আছে তারা একটিবার চোখ বন্ধ করে বিষয়টি ভাবুন।ডট শব্দের অর্থ হচ্ছে বিন্দু। এই একটি বিন্দুর মধ্যে পৃথিবীর ৮০০ কোটি মানুষ , ৪৩০০ ধর্ম আর সাত হাজারের অধিক মানুষ বাস করছে।এই বিন্দুর মধ্যে পৃথিবীর ২০৫ টি দেশ আছে। সেই দেশের প্রায় দুইশো ভাগের একভাগ হচ্ছে বাংলাদেশ। একটি বিন্দুকে দুইশো ভাগ করলে সেই বিন্দুকে কোন মানুষের পক্ষেই আর দেখা সম্ভব নয়। তাহলে সেই ক্ষুদ্র বিন্দুর দুইশো ভাগের এক ভাগের দেশে দাঁড়িয়ে কোন পাগল যদি ভাবে তার বক্তব্যে পৃথিবীর ৮০০ কোটি মানুষ শুনছে তবে সে বোকার স্বর্গে বাস করছে।সে পৃথিবী পাল্টানোর স্বপ্ন দেখছেনা।সেই ভন্ডামারা ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ১৫ কোটি মুসলমানের বাজারের সুবিধা লুটছে।।এই বাজারকে টার্গেট করেই তারা তাদের ধর্মের দোকান খুলে বসেছে।।
বাংলাদেশের ইতিহাসে কোন ইসলামী বক্তার মাহফিলে এক লক্ষ লোকের সমাগম হয়েছে এমন নজীর কেউ দেখাতে পারবেনা।অর্থাৎ দেশের ১৫ কোটি মানুষের মধ্যে এক লক্ষ তথা এই দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় দুই হাজার ভাগের এক ভাগ মানুষও সেই ওয়াজ শুনতে যায়না।এই দেশে ষাট বছরের বেশি সময় রাজনীতি করেও জামায়াতে ইসলাম কখনো এক লক্ষ মানুষের সমাবেশ ঘটাতে পারেনি। তার মানে কি এই দাঁড়ায় বাকি ১৪ কোটি ৯৯ লক্ষ মুসলমান তারা মুসলমান নয় ? তার মানে কি এই দাঁড়ায় যারা জামায়াতকে ভোট দিবেনা তারা জান্নাতে যেতে পারবেনা। এসব জামায়াতে ইসলামের মত রাজনৈতিক দলগুলোর ভাওতাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়।।অথচ ইবনুল জাওজি রহিমূল্লাহ যখন বাগদাদে ইসলামিক আলোচনা করতেন তখন মানুষ কেঁদে বুক ভাসাতো এবং তার হাত দিয়ে অন্তত বিশ হাজার ইহুদী ও খ্রিষ্টান মুসলমান হয়েছেন।কারণ তখনকার বক্তারা ইসলামিক আলোচনায় আমাদের দেশের ভন্ডামাদের মত মাইক লাগিয়ে রাজনৈতিক ভন্ডামি করতেন না।তিনি এই ভন্ডামাদের মত মন্ত্রী , এমপি ও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য রাজনীতি করতেন না।
ইসলামের প্রচার আর ভন্ডদের রাজনৈতিক ধর্ম ব্যাবসার পার্থক্য এইখানে। এই কারণে বাংলাদেশ , ভারত ও পাকিস্তান ছাড়া পৃথিবীর আর কোন মুসলিম দেশে ওয়াজের বিনিময়ে অর্থগ্রহণের নজির নেই ।।।
ওয়াজের নামে এইসব রাজনৈতিক ভন্ডামি শুধু আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশেই সম্ভব। কারণ এই অঞ্চলের মানুষদের একটা বড় অংশই চরম মাত্রার সাম্প্রদায়িক ভন্ড ও উগ্র ধর্মান্ধ।।।
ভন্ডামাদের এসব ওয়াজ মাহফিল এখন হয়ে গেছে রাজনৈতিক মাহফিল। নব্বইয়ের দশক থেকে এক ভন্ডামার নেতৃত্বে ওয়াজ মাহফিলের নামে এই রাজনৈতিক ভন্ডামি শুরু হয়েছিলো । ছোটবেলায় আমরা ওয়াজ মাহফিলের নামে এসব রাজনৈতিক ভন্ডামি দেখিনি যা নব্বইয়ের দশকের পর দেখছি।এতে এতো বছরে সারাদেশে এই ভন্ডামাদের বিশাল সমর্থক গোষ্ঠীও তৈরি হয়ে গেছে।তৈরি হয়েছে একটা উগ্র ধর্মান্ধ জনগোষ্ঠী । এই ভন্ডামাদের হাত ধরেই সমগ্র দেশে ১৯৯৯ সাল থেকে শুরু হলো ধর্মের নামে বোমাবাজি ও নিরীহ মানুষ হত্যা।এর একটা পরিসংখ্যান নিম্নে তুলে ধরা হলো :
১৯৯৯ সালে থেকে ২০১৬ সাল তথা যশোরে উদীচীর জনসভায় বোমা হামলা , রমনার বটমূলে বোমা হামলা, আহমদিয়া মসজিদে বোমা হামলা থেকে থেকে শুরু করে ১৭ ই আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা , ২১ শে আগষ্ট আওয়ামীলীগের জনসভায় বোমা হামলা করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা এবং ২৩ জন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী হত্যা ও সর্বশেষ হোলি আর্টিজান হত্যা সব মিলিয়ে এই পর্যন্ত জঙ্গীদের হাতে নিহত হয়েছে প্রায় তিন শতাধিক নিরীহ মানুষ আর পঙ্গু হয়ে গেছে প্রায় তিন হাজারের উপরে মানুষ।এসব কোন ধর্মের শান্তির আলামত ভাই?
আমার প্রশ্ন হচ্ছে – ৯২ শতাংশ মুসলমানের দেশে ৩৩ টি জঙ্গি সংগঠন কাদের উস্কানিতে তৈরি হয়েছে?
এইসব কিছুর পেছনে দায়ী হচ্ছে কিছু লুটেরাদের সুবিধাভোগের ভন্ডামির রাজনীতি।।এই ক্ষমতালোভীদের নষ্ট রাজনীতির খেসারত নিজেদের জীবন দিয়ে দিয়েছে এই দেশের নিরীহ সব মানুষ।এই সব হত্যাকান্ডের পেছনে রয়েছে কিছু ভন্ডামার উগ্রবাদী ও ধর্মীয় মৌলবাদী রাজনৈতিক ওয়াজ।।।এরাই এই দেশে ওয়াজকে ব্যাবসা বানিয়ে এদের রাজনৈতিক সুবিধা হাসিলের জন্য রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য জঙ্গীবাদের সৃষ্টি করেছে।।
ওয়াজ মানেই এখন চিল্লাপাল্লা, হাসি তামাশা , সিনেমা ও বায়োস্কোপের গান, ব্যাঙ্গ – বিদ্রুপ , পরনিন্দা , গলার রগ ফুলিয়ে শরীরের সব শক্তি এক করে গরুর মত চিল্লাচিল্লি করা।একটা সময় শ্রুতিমধুর ওয়াজ শুনে মানুষ কেঁদে কেঁদে চোখের জলে ভাসাতো আর এখন ওয়াজ শুনে হাসে। অথচ ইসলাম হাসি ও তামাশার বিষয় নয়।বর্তমানে ওয়াজ হয়ে গেছে সবচেয়ে বড় ধর্মব্যাবসা।একথা বললেও ধর্ম ব্যাবসায়ীদের পটুতে আগুন লেগে যায়। জামায়াত শিবিরের সারা শরীরে জ্বলন শুরু হয় এই ভেবে যদি এই ধান্দা বন্ধ হয়ে যায় !!
ওয়াজ মানে কি এটা আপনাকে জানতে হবে ?
ওয়াজ হচ্ছে নসীহত তথা উপদেশ।ধর্মীয় আলোচনা সুন্দর করে করবেন , মানুষকে শান্তি ও সাম্যর শিক্ষা দিবেন । অথচ তা না করে গলার রগ ফুলিয়ে , যাকে তাকে কাফের সাজিয়ে নেশাখোরদের মত চোখ লাল করে হুমকি ও ধামকি দিয়ে বাঘের গর্জন ছেড়ে বিলাইয়ের মত মেও করে পকেটে টাকা ঢুকিয়ে মানুষের মাঝে উগ্রতা ছড়িয়ে দেওয়া এটা মানবতার জন্য সবচেয়ে বড় অভিশাপ।যারা মানুষ হয়ে মানুষের অভিশাপের কারণ হচ্ছেন তাদের ভোট দিলে জান্নাত পাওয়া যাবে এটা আমি মরে গেলেও বিশ্বাস করবোনা।।।
যে সমস্ত ভন্ডামাদের উস্কানীমূলক বক্তব্য দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গীবাদ সৃষ্টি করেছে তাদের যদি নব্বইয়ের দশকে কলার ধরে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা হতো তবে এই দেশে আমাদের কোনদিনও এই জঙ্গীবাদ দেখতে হতোনা।।এই স্বাধীন দেশে ধর্মের নামে যারাই গলার রগ ফুলিয়ে উগ্রবাদ ও জঙ্গীবাদের সৃষ্টি করবে এদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিয়ে আইন করে বাংলাদেশকে বাঁচান।।
“লাখো শহীদ ডাক পাঠালো সব সাথীদের খবর দে ,
সারা বাংলা ঘেরাও করে এইবার জঙ্গীবাদ কবর দে।”
#বাংলাদেশ_ফোর্স১৯৭১
নিজ নিজ বিবেককে প্রশ্ন করুন : জঙ্গী হামলায় নিহত হোলি আর্টিজানের ২২ জন নিরীহ মানুষের কি অপরাধ ছিলো ?
মানুষ হওয়ার শপথ নিন ,
জঙ্গীবাদ রুখে দিন।।আলো_আসবেই