মাত্র তিন মাসে নতুন করে ৫ হাজার ৯৭৪টি কোটিপতি হিসাব যুক্ত হয়েছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে মাত্র ৫টি কোটিপতি হিসাব থেকে ২০২৫ সালে তা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজারে। সংখ্যার এই অভূতপূর্ব উল্লম্ফনকে কেউ কেউ অর্থনীতির অগ্রগতি বলছেন, আবার কেউ এটিকে বৈষম্যের বিপজ্জনক সংকেত হিসেবে দেখছেন। প্রশ্ন উঠছে আসলেই কারা এই কোটিপতি?
*কে হলো নতুন কোটিপতি*
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উৎপাদনশীল খাত দীর্ঘদিন ধরেই সংকটে। কৃষি খাতে ন্যায্য দাম নেই, শিল্প খাতে বিনিয়োগ স্থবির, রপ্তানি নির্ভর খাত টিকে থাকার লড়াই করছে। এই বাস্তবতায় সাধারণ কৃষক, শ্রমিক কিংবা মধ্যবিত্ত মানুষ কোটি টাকার মালিক হতে পারছে না। বরং নতুন কোটিপতিরা মূলত রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা এক শ্রেণির লুটেরা। চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, এমনকি অবৈধ অর্থপাচারের টাকাই ব্যাংকের তথাকথিত “কোটিপতি হিসাব” ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তুলছে।
*ছাত্ররাজনীতি থেকে চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য*
বৈষম্যবিরোধী স্লোগান দেয়া ছাত্রনেতাদের প্রায় ৯০ ভাগ এখন কোটিপতি। জুলাই ঘটনার আহতদের ভেতর ৬০ ভাগ কোটি টাকার মালিক। বিএনপি-জামাতের আঞ্চলিক নেতারা দাপটের সঙ্গে চাঁদাবাজি করে সম্পদের পাহাড় গড়ছে। যারা একসময় সাধারণ মানুষের ভিড়ে রিকশা চেপে চলত, আজ তারাই বিলাসবহুল গাড়ির বহরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
*সাধারণ মানুষের অর্থনীতি*
অন্যদিকে দেশের প্রকৃত অর্থনীতি রক্তশূন্য। শিল্পকারখানা বন্ধ হচ্ছে, কর্মসংস্থান হ্রাস পাচ্ছে, রপ্তানি বাজার সংকুচিত হচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ চাল-ডাল-তেল কেনার সামর্থ্য হারাচ্ছে। গরিব আরও গরিব হচ্ছে, অথচ সরকারি ছত্রছায়ায় কিছু রাজনৈতিক কোটিপতির পকেট ভারী হচ্ছে প্রতিদিন।
*বৈষম্যের ঝুঁকি*
অর্থনীতিতে কোটিপতির সংখ্যা বাড়া সব সময় ইতিবাচক সূচক নয়। এটি তখনই উন্নয়নের প্রতীক, যখন তা উৎপাদন, শিল্প, রপ্তানি ও বৈধ ব্যবসা থেকে আসে। কিন্তু যখন তা দুর্নীতি, লুটপাট ও রাজনৈতিক প্রভাব থেকে জন্ম নেয়, তখন তা বৈষম্যের আগুনে ঘি ঢালে। এ ধরনের বৈষম্য সমাজে হতাশা, অস্থিরতা ও সহিংসতার ঝুঁকি বাড়ায়।
যেখানে একদিকে রাতারাতি কোটিপতির জন্ম হয়, অন্যদিকে কোটি কোটি মানুষ অনাহার-দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করে সে অর্থনীতি জনগণের নয়, বরং লুটেরাদের।
কোটিপতির সংখ্যা বাড়া দেশের সমৃদ্ধির প্রমাণ নয় বরং অর্থনৈতিক বৈষম্যের নগ্ন প্রতিচ্ছবি। এই প্রবণতা যদি বন্ধ না হয়, তবে ব্যাংকে কোটিপতির হিসাব ফুলতে ফুলতে দেশের অর্থনীতি ভেতর থেকে খালি হয়ে যাবে। ফলে, কোটি কোটি সাধারণ মানুষের হাহাকারেই চাপা পড়বে এই রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ।(আওয়ামীলীগ পেইজ)