।। আজম খান।।
নেপাল ছিল আগামীর পৃথিবী কেমন হবে তার একটা টেস্ট কেস। নেপালে কিছুদিন আগে জেনজি দাঙ্গা গেলো সরকার বিরোধিতার নামে সেটা ছিল এক অর্থে ব্রিকসের ভবিষ্যত কি হবে তথা চীন-ভারত সম্পর্কের জন্য এক পরীক্ষা। চীন সমর্থক নেপালের মাওবাদী সরকারকে সরানোর জন্য মার্কিন পন্থীরা দায়ী করেছিল ভারতকে।
কিন্তু ভারত সাথে সাথে ওখানে হাত ধুয়ে ফেলছে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর মতন নেপালের সেনাবাহিনীও বিক্রি হয়ে গেছিলো ডলারের কাছে। কিন্তু চীন-ভারতের যৌথ চাপে দেশের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তারা সেখান থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছে। সীমানার একদিকে চীন, আরেকদিকে ভারত। কিছু করার ছিল না।
আমাদের হাঁটুবাহিনী যারা নিজেদের নিজেরা দেশপ্রেমিক বলে ডাকে তাদের কাছে দেশ কোনদিন ম্যাটার করে নাই, করবেও না। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মূলত একটা মার্সেনারি সেনাবাহিনী যারা অন্যদের জন্য ভাড়া খাটে এবং বারবার নিজের দেশ দখল করে। যেমনটা করে তাদের জমজ ভাই পাকিস্তান সেনাবাহিনী পাকিস্তানে।
নেপালে প্রাথমিক অবস্থায় ভারত-চীনে কিছুটা অবিশ্বাস তৈরি হয়েছিল। সেটা দ্রুতই মিটে যায় যখন নেপালের ভারতপন্থীরা সহিংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ওখানে আমাদের দেশের পিনাকি, ইলিয়াস, ফারুক ওয়াসিফ গং এবং অনান্য এনজিও সুশীলরা থাকলে এখনো সহিংসতা চলতো। বরং সুশীলা কার্কির সরকার ক্ষমতা হাতে নিয়েই ঘোষনা দেয় আন্দোলনকারীরা সহিংসতা করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে এবং তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। আর আমাদের ইউনুস ক্ষমতা নিয়ে বলেছেন যে সহিংসতা ক্ষোভ থেকে করা হচ্ছে। তাই মব করা জায়েজ। ফারাকটা দেখেন। এটাই মানুষ এবং অমানুষের ফারাক।
নেপাল এখন শান্ত। ভারত-চীনের গত কয়েক মাসে যে সখ্যতা তৈরি হয়েছে এবং তাদের মধ্যে বানিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারের যে উদ্যোগ চলছে তা দুটো দেশের জন্য ভালো খবর। কারন এই দুটো দেশে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৪০ ভাগ থাকে। বিশাল বাজার, বিশাল সম্ভাবনা। চীন প্রথমদিকে দ্বিধা দ্বন্দে থাকলেও ভারতের উদ্যোগ তাকে আশ্বস্ত করে এখানে তৃতীয় কোন পক্ষ খেলেছে। পরবর্তীতে তাদের যৌথ উদ্যোগ নেপালের সেনাবাহিনীকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পক্ষে খেলা থেকে নিবৃত করে।
নেপালের ঘটনা চীন-ভারতের সম্পর্কে ফাটল ধরানোর জন্য হয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ দুই দেশেই। তবে ফাটল ধরানো সম্ভব হয় নাই। ভারত-চীনের যুথবদ্ধতা নেপালের পরীক্ষায় উতরে গেলো। পরের পরীক্ষা ক্ষেত্র হতে যাচ্ছে সম্ভবত বাংলাদেশ। চীনের যুদ্ধ জাহাজ এই মুহুর্তে বঙ্গোপসাগরে অবস্থা করছে। ভারতের সেনারা মায়ানামারে মহড়া দিচ্ছে।
অন্য সময় হলে ভারত চীনের বঙ্গোপসাগরে উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে চিৎকার করে দুনিয়ার সবার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিতো, চীনও মায়ানমারে ভারতের সেনাবাহিনীর উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে একই কান্ড করতো। কিন্তু এবারে দুই দেশই চুপ। সম্ভবত যা হচ্ছে তা যৌথ পরিকল্পনার ফসল। ভারত-চীনের যুথবদ্ধতার উপরে নির্ভর করছে ব্রিকসের সফল হওয়া। এমনকি দুনিয়া মাল্টিপোলার ওয়ার্ল্ড অর্ডারও। এসব হবে কিনা ভবিষ্যত জানে। তবে চীন-ভারতের এবারের সম্পর্কের গাঁথুনি মনে হচ্ছে অন্য যে কোন সময়ের চাইতে আলাদা।