।। জাকির তালুকদার।।
শুনতে পাচ্ছি ঢাকাতে প্রতিদিনই মিছিল করছে আওয়ামী লীগ। অন্যান্য শহরেও করছে মাঝে মাঝে। এই মিছিল কি বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের ফিরে আসার লক্ষণ। আমার কাছে সেটাই মনে হয়।
৫ই আগস্টের পর চায়ের আড্ডায় অবশ্যম্ভাবী আলাপ ছিল আওয়ামী লীগ কি আবার ফিরতে পারবে? কারো কারো অভিমত ছিল লীগ কোনোদিন আর ফিরতে পারবে না। আমি বলেছিলাম, আওয়ামী লীগ ফিরবে কি ফিরবে না তা অনেকগুলো ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করে। তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে ড. ইউনূস, তার সরকার, আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্ররা, এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল কী করে, দেশকে কোথায় নিয়ে যায়, সেগুলোর ওপর নির্ভর করবে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তি এবং বংশানুক্রমিক বিশাল সমর্থক গোষ্ঠী নিয়ে আলোচনা বাদই রাখছি।
আজ এক বছর পর যখন লীগের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে, পেছনের কারণ হিসাবে উপরোক্তদের মূল্যায়ন করা দরকার হয়ে পড়েছে।
১. ড. ইউনূস: বিশাল ভাবমূর্তি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার আসনে বসেছিলেন তিনি। কিন্তু যত দিন পার হয়েছে তার অযোগ্যতা জাতির সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মানুষের জান-মাল রক্ষার ক্ষেত্রে তিনি নির্বিকার। বড় বড় কথা বলেছেন, কিন্তু সেগুলো কোনো ফল এনে দেয়নি। বিদেশি বিনিয়োগের স্বপ্ন দেখিয়েছেন, কিন্তু দেশি বিনিয়োগ পর্যন্ত শূন্য। দেশের মানুষের বেকারত্ব, ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া, বেশি বেশি মানুষের দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়া নিয়ে তাকে চিন্তিত বলে মনে হয়নি একদিনও।
গ্রামীণ ব্যাংকের ট্যাক্স মওকুফ, নিজের বিশ্ববিদ্যালয়, নিজের ম্যান পাওয়ার বিজনেসের লাইসেন্স করে নিয়েছেন।
মানুষের মনে এমনকি তার দেশপ্রেম নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কিছু লোকের পারসেপশন, তিনি দেশের চাইতে আমেরিকার স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দেন। এটি মারাত্মক।
২. ড. ইউনূসের সরকার: মূলত এনজিও এবং পরিচিতদের নিয়ে সরকার গঠন করেছেন তিনি। কয়েকজন আছেন যারা বয়স এবং অসুখের ভারে নুব্জ। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা অন্যতম। তিনি ইউনূস সাহেবের গ্রামীণের পুরনো সাথী এটাই তার একমাত্র যোগ্যতা। তিন ছাত্র উপদেষ্টা নিয়ে অন্যত্র আলোচনা করছি।
৩. অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা: তিনজন উপদেষ্টা পদে ছিলেন। এখন দুইজন। ব্যাপক দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতির অভিযোগ কারো কারো নামে। উপদেষ্টা পরিষদের বাইরের ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেক বেশি। গরিব নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেরা ক্ষমতা পাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই আঙুল ফুলে কলাগাছ। রিকশাভাড়া থাকত না যার, সে এখন কোটি টাকা দামের প্রাদো, পোরশে চালায়। নির্বাচনের পরে এদের অনেককেই হয়তো আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, এক বছর আগে যাদের একডাকে লক্ষ মানুষ জড়ো হয়ে যেত, এখন তারা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করলেও পাঁচজন লোক জমায়েত হবে না।
৪. অন্যান্য রাজনৈতিক দল: হাসিনা-পতনের আন্দোলনে যারা একসাথে লড়াই করেছে, তাদের সেই ঐক্য কয়েকদিনের মধ্যেই ভেঙে গেছে। এখন তারা পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বি। আওয়ামী লীগের মিছিল বা কার্যক্রম ঠেকানোর গরজ কারো নেই। মামলা-বাণিজ্য তারা করে নিয়েছে।
৫. শিবির এবং চরম ধর্মীয় উগ্র দলগুলোর উত্থান: খুব ছোট পরিসরে হলেও মানুষ বলতে শুরু করেছে উগ্রবাদ ঠেকানোর জন্য আওয়ামী লীগকেই দরকার।