কবির য়াহমদ
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যখন বক্তব্য দিতে যান, তখন অনেকেই অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করছেন–এমন একটা ভিডিয়ো দৃষ্টিতে পড়েছে। সঙ্গে আরও একটা ছবি চোখে পড়েছে আশপাশে অনেকগুলো খালি চেয়ার, তবে বসে আছেন মুহাম্মদ ইউনুস, মির্জা ফখরুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ তাহের, আখতার হোসেন গং। ছবি দেখে মনে হয়, নেতানিয়াহুর বক্তব্যের সময়ে ইউনুসগং অধিবেশন কক্ষে ছিলেন।
ইউনুসসাহেব যদি নেতানিয়াহুর বক্তব্যের সময় অধিবেশন কক্ষে থেকে থাকেন, তবে এটা ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতি বাংলাদেশের ইন্তেরিম সরকার-বিএনপি-জামায়াত-এনসিপির সর্বাত্মক সম্মান প্রদর্শনের প্রমাণ বহন করে। এটাকে অনেকেই সমালোচনা করবেন হয়তো, কিন্তু আমি সমালোচনা করব না। বরং নেতানিয়াহুর প্রতি প্রকাশ্যে নৈতিক সমর্থন দানের জন্যে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস সাহেবকে অভিনন্দন জানাব। একই সঙ্গে অভিনন্দন জানাব বিএনপি-জামায়াত-এনসিপিকেও। পাশাপাশি এটাকে জুলাই আন্দোলনের অংশীদার সকল ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলের সর্বাত্মক সমর্থন বলে ধরে নেব।
জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে নেতানিয়াহু যথার্থই বলেছেন, অনেক দেশ প্রকাশ্যে তাদের নিন্দা জানায় আবার গোপনে জানায় অভিনন্দন। এ-বয়ান অসত্য নয়। বিশ্বপরিস্থিতি সে কথাই বলে। সে কথাও বলে বাংলাদেশের ইন্তেরিম সরকার ও এর সমর্থক সকল রাজনৈতিক দলগুলো।
জাতিসংঘে ইন্তেরিমপ্রধান-বিএনপি-জামায়াত ও এনসিপি যখন নেতানিয়াহুর ভাষণের দর্শক ও শ্রোতা ছিল, তখন ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে দলগুলো একটা ইতিবাচক সিদ্ধান্তে তারা আসার পথে রয়েছে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। আমার ধারণা বর্তমান ইন্তেরিম সরকার সে কাজটাই করতে যাচ্ছে। এবং তারা যদি ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে, তবে এটাকে ইতিবাচক ভাবে দেখবে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো।
গত তেরো মাসের দেশ পরিস্থিতি বলছে, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হচ্ছেন প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস। দেশে ধর্মভিত্তিক দলগুলো তাকে যেভাবে ইমাম মেনেছে, এমন একক ইমাম গত চুয়ান্ন বছরের বাংলাদেশ আর কাউকে দেখেনি। দেশে জামায়াতের সঙ্গে কওমি-সুন্নি-মাজারপন্থীদের প্রকাশ্য বিরোধ রয়েছে, এবং এটা ঐতিহাসিক। কিন্তু আকিদাগত সকল বিরোধকে মিটমাট করে দিয়েছেন প্রফেসর ইউনুস। সবাই তাকে মানে। সবাই তার পেছনে কাতারে-কাতারে দাঁড়িয়ে।
জাতিসংঘে যখন ইউনুস সাহেব সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে নেতানিয়াহুর বক্তব্য শুনছিলেন, তখন দেখুন ধর্ম নিয়ে যারা রাজনীতি করতে আগ্রহী, তারাও ইসরায়েলের এই নেতার বক্তব্য শুনেছে। সবাই নেতানিয়াহুর বক্তব্যকালে অধিবেশনকক্ষ ত্যাগ করলেও তারা নেতানিয়াহুকে একা ছেড়ে যায়নি। অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত থেকে নেতানিয়াহুকে সমর্থন যুগিয়ে প্রচ্ছন্নভাবে বলতে চেয়েছে–বাংলাদেশের সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও আমরা ইসরায়েলের পাশে আছি।
বাংলাদেশ কি সত্যি ইসরায়েলের সঙ্গে থাকছে–এই প্রশ্ন তবু করতে চাইছি। তবে ইউনুসসাহেব যখন তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে বক্তব্য শুনেছেন, তখন নিশ্চয় এখান থেকে বাংলাদেশের জন্যে ভালো কিছুর জন্যেই শুনেছেন।
এতগুলো কথা যে বললাম, কীভাবে নিশ্চিত হচ্ছি যে নেতানিয়াহুর বক্তব্য শুনেছে বাংলাদেশের ইন্তেরিম? এটা মূলত ভিডিয়ো ও ছবি দেখে; এছাড়া ওয়াকআউটের কোন তথ্য যখন পাওয়া যায়নি, তখন প্রাথমিকভাবে ধরে নিতে হচ্ছে বক্তব্য শোনা হয়েছে।
খালি অধিবেশন কক্ষে দলবল নিয়ে ছবি–এটা যদি নেতানিয়াহুর বক্তব্যকালের না হয়ে থাকে, তবে এটা হতে পারে স্রেফ ফটোসেশান। ইউনুসসাহেব তার দুই মেয়েসহ যে শতাধিক লোক নিয়ে গেলেন আমেরিকায়, তাদের সবাইকে নিয়ে একটা ফটো তুলে নিলে ভালো হতো।
একজন আমাকে আজ প্রশ্ন করলেন– ইন্তেরিম সরকারপ্রধান যত লোক নিয়ে আমেরিকা ভ্রমণে গেলেন এবার, ঠিক ততটা দেশ কি জাতিসংঘের সদস্য? আমি প্রশ্নকর্তার ভুল ভাঙিয়ে দিয়েছি; বলেছি–জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রের সংখ্যার চাইতে কম লোক নিয়ে ইউনুসসাহেব আমেরিকায় গেছেন। আমি এও বলেছি–জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্র ১৯৩; ইউনুসসাহেব নিয়ে গেছেন মাত্র ১০৪। আরও ৮৯ জন নিতে পারতেন তিনি। রাষ্ট্রের খরচ সাশ্রয়ে তিনি এই কৃচ্ছ্র সাধন করেছেন।