২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা, স্বাধীন বাংলাদেশে ’৭৫ পরবর্তী সময়ে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল রাষ্ট্রনায়ক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার ৭৯তম জন্মদিন।
১৯৭৫-এর ১৫ই আগস্ট কালরাতে ঘাতকের নির্মম বুলেটে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। এসময় বিদেশে থাকায় পরম করুণাময় আল্লাহর অশেষ রহমতে প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ইডেন হোটেলে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক কাউন্সিল অধিবেশনের মধ্য দিয়ে জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ডাক আসে দেশমাতৃকার হাল ধরার। সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। এরপর দীর্ঘ সময় ধরে সামরিক জান্তা, স্বৈরশাসন ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে চলে একটানা অকুতোভয় সংগ্রাম। জেল-জুলম, অত্যাচার কোনোকিছুই তাঁকে টলাতে পারেনি এক বিন্দু। হেঁটেছেন বিপদসংকুল বন্ধুর পথ। দেশের মানুষের পাশে সর্বদা থেকেছেন তাদের একজন হয়ে। মানুষের ভাগ্যোন্নয়নই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নব পর্যায়ের বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা। হিমাদ্রী শিখর সফলতার মূর্ত-স্মারক, উন্নয়নের কাণ্ডারি। উন্নত সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার। বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার একান্ত বিশ্বস্ত ঠিকানা, বাঙালির বিজয়ের স্বপ্ন-সারথি। বারবার মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা ‘নীলকণ্ঠ পাখি’, মৃত্যুঞ্জয়ী মুক্তমানবী। তিমির হননের অভিযাত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেধা-মনন, সততা, নিষ্ঠা, যোগ্যতা, প্রজ্ঞা, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, উদারমুক্ত গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছিল। এক সময়ের কথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ দারিদ্র্য-দুর্ভিক্ষে জর্জরিত যে বাংলাদেশকে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করতে হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার কল্যাণমুখী নেতৃত্বে সেই বাংলাদেশ বিজয়ের নবতর অভিযাত্রায় এগিয়ে চলছিল। বিশ্বসভায় আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাঙালি জাতি।
১৯৯৬ সালের ১২ জুনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তাঁর সরকারের আমলেই ভারতের সাথে স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি। সম্পাদিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি। বাংলাদেশ অর্জন করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা। জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৬.৪ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। মুদ্রাস্ফীতি নেমে আসে ১.৫৯ শতাংশে। দারিদ্র্য হ্রাস পায়। খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ক্রীড়াসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ হাসিনার প্রথমবারের (১৯৯৬-২০০১) শাসনকাল চিহ্নিত হয় ’৭৫ পরবর্তী সময়ের স্বর্ণযুগ হিসেবে।
এর পর ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামাত জোটের অপশাসন ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রাম। গ্রেনেড-বুলেটের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে জনগণের ব্যালটের অধিকার রক্ষা করা। যার ফলে শত্রু পক্ষের প্রধান ও একমাত্র নিশানাই ছিলেন তিনি। তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে বারবার। ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট তারেক রহমানের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় বিএনপি-জামাত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় নারকীয় গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা-সহ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করার লক্ষ্যে নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে চাওয়া হয়েছিল। মহান আল্লাহর কৃপায় বারংবার মৃত্যুর দুয়ার থেকে মৃত্যুঞ্জয়ী হয়ে ফিরে এসেছিলেন বলেই বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি, একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য সম্পন্ন করা, সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি ও সমুদ্রবক্ষে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ব্লু ইকোনমির নতুন দিগন্ত উন্মোচন, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন ও ছিটমহল বিনিময়, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সফল উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ জয়, সাবমেরিন যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন নতুন উড়াল সেতু, মহাসড়কগুলো ফোর লেনে উন্নীত করা, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি, যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন, সাক্ষরতার হার ৭৬.০৮ শতাংশে উন্নীত করা, বছরের প্রথম দিনে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া, মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতি দান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, প্রত্যেকটি জেলায় একটি করে সরকারি/বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ, নারী নীতি প্রণয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, ফাইভ-জি মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার চালুসহ অসংখ্য ক্ষেত্রে কালোত্তীর্ণ সাফল্য অর্জন করেছিল বাংলাদেশ। ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষ পেয়েছে ঘর, আশ্রয় ও ঠিকানা। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে জ্ঞানভিত্তিক উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গেড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বির্নিমাণে জননেত্রী শেখ হাসিনা ‘প্রেক্ষিত পরিকল্পনা তথা রূপকল্প-২০৪১’ ঘোষণা করেছেন এবং তা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছিল তাঁর নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। এছাড়াও আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ, কল্যাণকর ও নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি জলবায়ু সহিষ্ণু ব-দ্বীপ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০’ ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছিল।
একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তাঁর অবদান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ইতোমধ্যে তিনি শান্তি, গণতন্ত্র, স্বাস্থ্য ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার, দারিদ্র্য বিমোচন, উন্নয়ন এবং দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে সৌভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য ভূষিত হয়েছেন অসংখ্য মর্যাদাপূর্ণ পদক, পুরস্কার আর স্বীকৃতি লাভ করেছিলেন। ’৭৫ পরবর্তী বাঙালি জাতির যা কিছু মহৎ অর্জন তা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই অর্জিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার জন্মদিন গোটা বাঙালি জাতির জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। বাঙালির জাতীয় জীবনে অন্ধকারে আলোর দীপশিখা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। জনগণের ক্ষমতায়ন আর কল্যাণ তাঁর জীবনের লক্ষ্য। গভীর সংকটেও তিনি বিশ্ববাসীকে পথ দেখিয়েছেন। তাই জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রদত্ত ‘শান্তি, ন্যায়বিচার ও উন্নয়নের জন্য জনগণের ক্ষমতায়ন মডেল’ রেজুলেশন আকারে জাতিসংঘে চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়। আজ শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশ রাহুর গ্রাসে পড়েছে, চারদিকে ঘোর অমানিশা। মানুষ দিশেহারা। অবৈধ দখলদার খুনি-ফ্যাসিস্ট ইউনূসের নেতৃত্বে দেশের মানচিত্র আর জাতীয় পতাকা খামছে ধরেছে পরাজিত শকুনের দল। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব চরমভাবে প্রাসঙ্গিক। জনগণের বিশ্বাস করে হতাশার এই অকূল পাথারে তিনিই জাতির ত্রাতা। দেশের সাধারণ মানুষ শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল থেকে অবচেতন মনে বলে ফেলে আগেই ভালো ছিলাম। দেশের জনগণের এই অকৃত্রিম ভালোবাসা ও বিশ্বাসই শেখ হাসিনার জীবন চলার পাথেয়।
*কর্মসূচি*
২৮ সেপ্টেম্বর জননেত্রী শেখ হাসিনার ৭৯ তম জন্মদিন যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা- কর্মী -সমর্থক এবং দেশবাসীর প্রতি আহবান
—
আগামীকাল সেপ্টেম্বর,২০২৫ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা, বাংলাদেশের সফল প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংগ্রামী সভাপতি, দেশের গরীব- দুঃখী-মেহনতি মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল জননেত্রী শেখ হাসিনার ৭৯ তম জন্মদিন যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা- কর্মী -সমর্থক এবং দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহবান জানানো হচ্ছে।
এ উপলক্ষে দেশের সকল মসজিদে দোয়া ও মোনাজাত এবং মন্দির, প্যাগোডা,গির্জা-সহ সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে তাঁর দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা এবং দেশবাসীর জীবনে চলমান দুর্যোগ থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। এছাড়া অসহায় ও দুস্থ মানুষের মাঝে মানবিক সাহায্য ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হবে।
***ভার্চুয়াল আলোচনা সভা।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল সাংগঠনিক জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো যাচ্ছে।
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।