জানাজার মাইকিং করতে দেওয়া হয়নি
ঢাকা, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫: কারাগার হেফাজতে অবহেলামূলক আচরণ ও বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর শিকার হয়েছেন সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও নরসিংদী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। ৭৫ বছর বয়সী এই মুক্তিযোদ্ধা রাজনীতিবিদের মৃত্যু কারাগারের মানবিকতাহীনতা ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রতীক হয়ে উঠেছে, যা আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে চলমান নির্যাতনের আরেকটি অধ্যায় যোগ করেছে।
কারা সদর দপ্তরের মুখপাত্র সহকারী কারা মহাপরিদর্শক জান্নাত-উল ফরহাদ জানান, নুরুল মজিদকে ‘আনকন্ট্রোলড বাউয়েল অ্যান্ড ব্লাডার’ রোগের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) ৬০২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতির পর রোববার বিকেল ৪টায় তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হলেও সকাল ৮টা ১০ মিনিটে তাঁর মৃত্যু হয়।
তাঁর ছেলে মঞ্জুরুল মজিদ মাহমুদ সাদী ফেসবুকে পোস্ট করে মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন, যাতে তিনি পিতার দীর্ঘদিনের কারাবাসের কষ্টের কথা উল্লেখ করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলোতে দেখা যায়, কারা হেফাজতে থাকাকালীন নুরুল মজিদ ঢামেকের জনাকীর্ণ ওয়ার্ডে চাদর ছাড়া একটি বিছানায় হাতে হাতকড়া পরে শুয়ে আছেন। এই ছবিগুলো কারাগারের অবহেলা ও অমানবিক আচরণের সাক্ষ্য বহন করে।
সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে (বিএমএমএইচ) আওয়ামীপন্থী কোনো কারাবন্দিকে চিকিৎসা না দেওয়ার অলিখিত নির্দেশ দেয়া হয়েছে জামাত শিবির সমর্থিত করতৃপক্ষ থেকে। এর ফলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি নুরুল মজিদকে চিকিৎসা অসম্পূর্ণ রেখে কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়। কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের নির্জন সেলে বিনা চিকিৎসায় তিনি ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যান।
রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে পুনরায় ঢামেকে আনা হয় এবং সারাদিন চিকিৎসাহীন থাকার পরে অবস্থা খুব বেশী খারাপ হলে আইসিইউতে নেওয়া হয়, কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল।
নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের রাজনৈতিক জীবন ছিল সমৃদ্ধ। ১৯৮৬ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নরসিংদী-৪ (মনোহরদী-বেলাব) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০০৮, ২০১৪, ২০১৯ ও ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের টিকিটে পাঁচবার নির্বাচিত হন। ২০১৯ ও ২০২৪ সালে শিল্পমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নবম জাতীয় সংসদে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং দশম সংসদে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। তাঁর পেশা ছিল আইনজীবী; তিনি বৃহত্তর ঢাকা জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালের সভাপতি ছিলেন।
তিনি ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২৪ সেপ্টেম্বর রাত ১টা ২২ মিনিটে তাঁর ছেলে ফেসবুকে গ্রেফতারের খবর জানান। পরদিন সকালে র্যাবের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার আ ন ম ইমরান খান নিশ্চিত করেন যে, গুলশান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে নুরুল মজিদকে। অভিযোগ ছিল—৪ আগস্ট নরসিংদীর মাধবদীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার উপর হামলা, আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ডের। এরপর থেকে তিনি কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। সামাজিক মিডিয়ায় এই মৃত্যু নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জাগছে। এক পোস্টে বলা হয়েছে, “অবৈধ ফ্যাসিস্ট খুনী ইউনুসের অত্যাচারে একের পর এক আওয়ামী লীগ নেতা জেলখানায় মৃত্যুবরণ করছে।”
এই ঘটনা কারাগারের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। আওয়ামী লীগ নেতারা একে ‘হত্যাকাণ্ড’ বলে অভিযোগ করছেন, যখন অনেকে ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছেন। নুরুল মজিদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে সকলে এই অবহেলার বিচারের আওয়াজ তুলছেন।
জানাজা নামাজ নিয়ে নানারকম প্যারা!মাইকিং করতে দেয়া হয় নাই।জানাজা নামাজ শেষ করেই দ্রুত মাঠ ত্যাগ করতে হবে। এতকিছুর পরও হাজার হাজার গণমানুষের নিবিড় ভালোবাসায় সিক্ত হলেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান,বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন।