মনজুরুল হক
মোহাম্মাদ ইউনূসের ব্যবসায়ী হিসাবে উত্থানের মূল পুঁজি―’Optimism seller’. মাঝে মাঝে বেফাঁস বলেন রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতা থেকে। এবারকার জাতিসংঘ অধিবেশনের সাইড লাইনে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন―” যে কোনও সময় আঃলীগের কার্যক্রম সচল করা হতে পারে।“ আবার কৌশল করে বলেছেন―’আমরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করিনি।‘
🍭
এটা মনে করার কারণ নেই যে তিনি দয়া পরবশ হয়ে এসব বলেছেন। অ্যান্তেনীয় গুতারেস যতই তার ‘বন্ধু’ হোন জাতিসংঘের নিয়মের বাইরে কোনও ‘প্রেম’ দেখাবেন না। International law and the right to vote প্রসঙ্গে জাতিসংঘের Universal Declaration of Human Rights ১৯৯৬ সালের আর্টিকেল ২১ এব২ ২৫-এ বলা আছে― “Participation rights may only be subject to limitations that are established by law, are non-discriminatory and are based on objective and reasonable criteria. The right to vote may be subject only to reasonable restrictions, such as setting a minimum age limit. The Human Rights Committee has clarified these criteria in its General Comment No. 25 (1996).”
🍭
অর্থাৎ অংশগ্রহণের অধিকার কেবলমাত্র আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, বৈষম্যহীন এবং বস্তুনিষ্ঠ এবং যুক্তিসঙ্গত মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করে সীমাবদ্ধতার অধীন হতে পারে। ভোটাধিকারের অধিকার কেবলমাত্র যুক্তিসঙ্গত বিধিনিষেধের অধীন হতে পারে।
জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস চিফ সেই বিতর্কীত ভলকার টুর্ক বলেছেন― “Elections are a litmus test of civic space and of effective governance. States and societies cannot afford to fail this test.”
🍭
“Does the UN support not allowing a country’s largest party to participate in elections?” জাতিসংঘকে এই প্রশ্ন করলে উত্তর আসবে―” জাতিসংঘ দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখা সমর্থন করে না।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার (OHCHR) এর কার্যালয় এবং অন্যান্য জাতিসংঘ সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানদণ্ড অনুসারে সকল রাজনৈতিক দল এবং নাগরিকের পূর্ণ অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয় এমন অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন সক্রিয়ভাবে সমর্থন করে।
🍭
এ বিষয়ে জাতিসংঘের মূল নীতিগুলোঃ
(১) ভোটদান এবং নির্বাচনে দাঁড়ানোর অধিকারসহ রাজনৈতিক অংশগ্রহণের অধিকার হল আন্তর্জাতিক আইনে নিবন্ধিত একটি মৌলিক মানবাধিকার। যা বৈষম্যমূলক বর্জন করা সমর্থন করে না।
(২) জাতিসংঘ জোর দিয়ে বলে যে-অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনী প্রক্রিয়া রাজনৈতিক মেরুকরণ, অস্থিরতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধ করার জন্য অপরিহার্য। একটি প্রধান রাজনৈতিক দলের বর্জন ভোটারদের একটি বৃহৎ অংশকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে।
(৩) জাতিসংঘ বিশ্বাস করে যে- সুস্থ গণতন্ত্রের জন্য বিরোধী দলের সুরক্ষিত এবং অর্থবহ ভূমিকা প্রয়োজন। নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে একটি প্রধান দলকে অপসারণ করা এই নীতিকে লঙ্ঘন করে এবং প্রতিযোগিতায় আসতে না দিলে রাজনৈতিক জবাবদিহিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
(৪) জাতিসংঘ অবাধ, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা নির্বাচনী সততাকে উৎসাহিত করে। UNDP এবং অন্যান্য জাতিসংঘ সংস্থা নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী দেখতে চায়।
(৫) জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা স্পষ্টভাবে রাজনৈতিক দল এবং ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন এবং সহিংসতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
🍭
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের সাম্প্রতিক বিবৃতিঃ “২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি গণঅভ্যুত্থানের পর OHCHR বলেছিল যে বাংলাদেশে কোনও রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা উচিত নয়, কারণ এটি প্রকৃত গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের পথকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ২০২৫ সালের জুনে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুইন লুইস জোর দিয়েছিলেন যে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে অন্তর্ভুক্ত করলে তবেই রাজনৈতিক সংঘর্ষ এড়ানো যাবে। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচন থেকে বাদ দেযয়ার পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং গণতান্ত্রিক শাসনের জন্য হুমকি হিসেবে অভিহিত করে বলে মনে করে জাতিসংঘ।
🍭
ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বাতিলের খাতায় ফেলেই ইন্টেরিম, নির্বাচন কমিশন এবং জামাত-বিএনপি-এনসিপি এই তিন ‘সরকারি স্টেকহোল্ডার’ গুটি সাজাচ্ছিল। সেখানেই ‘স্ক্রু টাইট’ দিয়েছে জাতিসংঘ এবং ইউরোপ-আমেরিকার দক্ষিন এশীয় এক্সপার্টরা।
🍭
সে কারণেই ইউনূসের মুখ দিয়ে ‘স্ট্র্যাটিজিক্যাল ট্যাক্টিস’ হিসাবে ‘যাহ ক্ষমা করে দিলাম’ মার্কা বাণী এসেছে (যদি এই ফটোকার্ডের বক্তব্য ফেক না হয়) ।
🍭
জানা কথা; এই বক্তব্যের জবাবে ইউনূসকে তার প্রিয় দল তিনটির কাছে জবাবদিহি করতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের “ভারতের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ যুবক যুদ্ধ করবে” কিংবা বিএনপি নেতা ফখরুল ইসলামের-“ড.ইউনূসের বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছিল জিয়াউর রহমানের কণ্ঠ শুনছি” এসবই এক সূতোয় বাঁধা ‘গেম অব থ্রন’ ফ্যান্টাসি।
🍭
ক্রমশ আওয়ামী লীগের মিছিল বড় হওয়া, অক্টোবরে লীগের ‘যমুনা ঘেরাও’ কর্মসূচির ঘোষণাও ইন্টেরিম ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের এইসব কৌশলী বাকচাতুর্যের কারণ। এর মানে এমন নয় যে সত্যি সত্যিই তারা জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যদি সত্যিই ওইসব সংস্থা থেকে চাপ আসে, তখন তারা নির্বাচনটাকেই হিমঘরে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে। আর সে জন্যই ইউনূস আগাম বলে রেখেছেন―” এমন মানুষও আছেন যারা বলছেন ৫ বছর থাকুন, ১০ বছর থাকুন ৫০ বছর থাকুন। “
🍭
৫ নয় ১০ নয়, এক্কেবারে ৫০ বছর! ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’ সংস্থাটিকে আরও একটি নোবেল-এর ব্যবস্থা করতেই হচ্ছে! ১ অক্টোবর ২০২৫