জাকির তালুকদার
২০২৬ এর অমর একুশে বইমেলা হচ্ছে না, এই ব্যাপারে আমি মোটামুটি নিশ্চিত।
সবচেয়ে ভালো বিকল্প প্রস্তাবটি এসেছে ফেব্রুয়ারির সংসদ নির্বাচন এগিয়ে ডিসেম্বরে এনে ফেব্রুয়ারি মাসেই বইমেলা করার।
ধারণা করি, সেটাও সম্ভব নয়। নির্বাচন ডিসেম্বরে করলেও নতুন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে অন্তত দুই সপ্তাহ লেগে যাবে। নতুন সরকার ১৫ দিনের মধ্যে কোনোভাবেই বইমেলার আয়োজন করতে পারবে না।
মানুষের ধারণা, বইমেলা করে বাংলা একাডেমি। আসলে সেই ক্ষমতা বাংলা একাডেমির নেই। বইমেলার সম্পূর্ণ সমন্বয় করা হয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে। অনেক প্রতিষ্ঠান, সংস্থা এবং মন্ত্রণালয়কে দরকার হয় বইমেলা চালাতে। এত কাজ, এত ভিন্ন ভিন্ন মন্ত্রণালয়কে কাজে লাগানো প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের পক্ষেই কেবল সম্ভব। বাংলা একাডেমি দূরের কথা, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একার পক্ষেও বইমেলা করা সম্ভব নয়।
ইউনূস সাহেবের দপ্তর যে কাছাঢিলা তা গতবারের বইমেলার সময়েই দেখা গেছে। এখন নির্বাচন ছাড়া আর কিছুই মাথায় নেই তাদের। আসলে মাথায় জায়গা নেই।
তাছাড়া বই কোনো সরকারের ঠিক পছন্দসই জিনিস নয়। চিত্তরঞ্জন সাহা চট বিছিয়ে বইমেলার আয়োজন করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছিলেন। আর পৃথিবীর সব দেশই নিজেদের সভ্য দেশ বলে পরিচিত করার জন্য বইমেলার আয়োজন করে। বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ সরকারকেও করতে হয়। এবার মোক্ষম অজুহাত পেয়েছে। এড়িয়ে যাওয়ার। সেই সুযোগ ছাড়বে না।
পাশাপাশি মাথায় রাখতে হবে ডাকসু তথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা এখন ছাত্র শিবিরের দখলে। লেখকদের জন্য বিষয়টি অস্বস্তিকর। বইমেলা হলে মুক্তচিন্তার বই তারা স্টলগুলোকে রাখতে দেবে কি না, সে বিষয়ে ঘোরতর সন্দেহ আছে। নিজেরা সামনে না এসে মব লেলিয়ে দেবে টার্গেট করা বই, লেখক এবং প্রকাশকের বিরুদ্ধে।
সব মিলিয়ে বলাই যায়, বইমেলা কারো কাছেই খুব স্বস্তির বিষয় নয় বর্তমানে। তাই কোনো পক্ষ থেকেই খুব একটা তোড়জোর করা হবে না।
লেখক-কবিরা নিজেদের উদ্যোগে প্রকাশকদের সহযোগিতা নিয়ে নিজেদের এলাকায় ছোট ছোট বইমেলার আয়োজন করতে পারেন। এটি কোনো বিকল্প নয়। সান্ত্বনা। আমরা করব ভাবছি। তবে নির্বাচনের ডামাডোলের মধ্যে সেটুকুও করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।