Close Menu

    সাবস্ক্রাইব

    সর্বশেষ খবরের সাথে আপডেট থাকুন।

    জনপ্রিয় সংবাদ

    গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার জাহাজগুলো আটক শুরু করেছে ইসরায়েল

    October 2, 2025

    গাজা অভিমুখে ৪৪ দেশের ১০০ জাহাজ, কী ঘটতে যাচ্ছে

    October 2, 2025

    মরক্কো জেনজি বিক্ষোভে উত্তাল: পুলিশ স্টেশনে আগুন, নিহত ২

    October 2, 2025
    Facebook Instagram WhatsApp TikTok
    Facebook Instagram YouTube TikTok
    JoyBangla – Your Gateway to Bangladesh
    Subscribe
    • হোম পেইজ
    • বিষয়
      • দেশ (Bangladesh)
      • আন্তজাতিক (International)
      • জাতীয় (National)
      • রাজনীতি (Politics)
      • অথনীতি (Economy)
      • খেলা (Sports)
      • বিনোদন (Entertainment)
      • লাইফ স্টাইল (Lifestyle)
      • শিক্ষাঙ্গন (Education)
      • টেক (Technology)
      • ধম (Religion)
      • পরবাস (Diaspora)
      • সাক্ষাৎকার (Interview)
      • শিল্প- সাহিত্য (Art & Culture)
      • সম্পাদকীয় (Editorial)
    • আমাদের সম্পর্কে
    • যোগাযোগ করুন
    JoyBangla – Your Gateway to Bangladesh
    Home » মরেও বেঁচে আছে লর্ড ক্লাইভ
    International

    মরেও বেঁচে আছে লর্ড ক্লাইভ

    JoyBangla EditorBy JoyBangla EditorOctober 1, 2025No Comments9 Mins Read
    Facebook WhatsApp Copy Link
    Share
    Facebook WhatsApp Copy Link

    রিচার্ড ক্লাইভ ছেলেকে পাঠালেন এক বন্ধুর কাছে। লন্ডনে। সেই বন্ধু একটি কোম্পানির অন্যতম ডিরেক্টর। বেশ প্রভাবশালী। চিঠি লিখে রিচার্ড বললেন, আমার ছেলেকে পাঠাচ্ছি। যদি সম্ভব হয় কোনো একটি কাজ দেওয়া যায় নাকি দেখ। রিচার্ড লন্ডন থেকে দূরে থাকেন। একটি গ্রামীণ জনপদ, শ্রপশায়ার। রিচার্ড ছেলেকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। চূড়ান্ত দুর্বিনীত, অসহিষ্ণু। দলবল জুটিয়ে স্থানীয় গ্রামের দোকানগুলিকে ব্ল্যাকমেল করে অর্থ আদায় করে। দ্রুত একটা কাজে ঢুকিয়ে দেয়া ভালো। রিচার্ডের ছেলের বয়স মাত্র ১৭। ১৭৪২ সালের ১৫ ডিসেম্বর সেই ছেলেটি লন্ডনে এসে সেই কোম্পানির দপ্তরে প্রথমবার ঢুকল একজন চাকরিপ্রার্থী হিসেবে। তাকে যে পদে নেয়া হলো, সেই পদের নাম ‘রাইটার।’ সবচেয়ে নিচুতলার কাজ বলা যায়। সামান্য বেতন। তবে যেতে হবে অন্য দেশে। কোম্পানির কাজকর্ম ওই দেশেই বেশি। কোন দেশে যেতে হবে? জানতে চাইল ছেলেটি। বলা হয় ইন্ডিয়া। সে বলল, আমি রাজি। কবে যেতে হবে? তিন মাস পর। রিচার্ড ক্লাইভের ১৭ বছরের সেই ছেলেটির নাম রবার্ট ক্লাইভ। আর যে কোম্পানির সবচেয়ে কম বেতনের ‘রাইটার’ পদে সে চাকরি পেল, সেই সংস্থার নাম ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ১০ মার্চ ১৭৪৩। রবার্ট ক্লাইভ নামে ১৭ বছরের তরুণ ইন্ডিয়াগামী জাহাজে চেপে বসল।

    মাদ্রাজে জাহাজ থেকে নেমে প্রথম দর্শনেই এই দেশটাকে সে অপছন্দ করল। কাজে যোগ দেয়ার পর ক্লাইভের ডিপ্রেশন এতটাই বেড়ে যায় যে, এক বছরের মধ্যে সে আত্মহত্যার চেষ্টা করে একদিন। রবার্টের একটি গুণ আচমকা প্রকাশ পেল। এতদিন তাকে কেউ সিরিয়াসলি নেয়নি। কিন্তু আচমকা ১৭৫১ সালে ফ্রেঞ্চ বাহিনীর বিরুদ্ধে অ্যাটাকে যাওয়া হবে বলে জনিয়ে রবার্ট সকলকে অবাক করে দিলো। একাই নেতৃত্ব দিলো প্রায় ৩০০ সিপাহির। আর যুদ্ধটা জিতেও গেল। আবার পরের বছর আরো বড় একটা জয়। রবার্টের কৃতিত্বে ফ্রেঞ্চ বাহিনী সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত ত্রিচিনোপল্লিতে। এই বিপুল সাফল্যের জন্য রবার্ট ক্লাইভকে কোম্পানি কমিশনারির কোয়ার্টার মাস্টারি পদে প্রোমোশন দিলো। যা সাংঘাতিক উচ্চপদই শুধু নয়, পুরস্কার ও ভাতা হিসেবে তার আয় হলো ৪০ হাজার পাউন্ড (আজকের দিকে ৪০ লক্ষ পাউন্ড)। মাত্র ১০ বছরের মধ্যে একটি সাফল্যময় জীবন। বয়স ২৭। অ্যাস্ট্রোনমাল রয়্যালের বোন মার্গারেট ম্যাসকেলিনকে বিয়ে করলেন ক্লাইভ। এবার ভারতকে বিদায় জানানোর পালা। বিপুল সম্পত্তি। সফল জীবন। আর কী চাই! ২৩ মার্চ ১৭৫৩। বম্বে ক্যাসল নামের একটি জাহাজে চেপে রবার্ট আর মার্গারিট ফিরে গেলেন লন্ডন।

    কিন্তু নিয়তি অন্যরকম এক চিত্রনাট্য তৈরি করেছিল ক্লাইভের জন্য। ভারতবর্ষের জন্যও। ঠিক ১৮ মাস পর আবার তাকে ফিরতে হলো। কারণ, ফরাসিরা আবার মারাত্মক আগ্রাসী হয়ে উঠেছে সেখানে। কোম্পানির কাজকর্ম ধ্বংস হয়ে যাবে ফরাসিদের অত্যাচারে। অতএব ক্লাইভ ছাড়া আর কে যাবে? যে ছেলেটি সামান্য রাইটারের চাকরি নিয়ে ভারত গিয়েছিল ১৭৪৩ সালে, এবার তা কেই পাঠানো হচ্ছে মাদ্রাজের ডেপুটি গভর্নর হিসেবে। ১৭৫৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ক্লাইভ যখন ভারতে দ্বিতীয়বার এলেন, তখন মাদ্রাজ নয়, অন্য একটি শহর হয়ে উঠেছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সবচেয়ে বড় বাণিজ্যকেন্দ্র। ২ লক্ষ জনসংখ্যার ওই শহরটির নাম কলকাতা। ইংল্যান্ডের ৬৫ শতাংশ টেক্সটাইল আমদানি হতো এই বেঙ্গল নামক প্রদেশ থেকে। বছরে যে শহর পেত ১ লক্ষ ৮০ হাজার পাউন্ড। আর্মেনিয়ানদের ন্যাজারাথ, ফোর্ট উইলিয়ম নামের কেল্লার উচ্চ মিনার, গভর্নর রজার্স ড্রেকের আবাস অট্টালিকা, হাসপাতাল, বিরাট এক জলের ট্যাঙ্ক। এ এক উজ্জ্বল শহর হয়ে ওঠার লক্ষণ দেখাচ্ছে। শান্তিপুর, কাটোয়া, গলাগোড়, হরিপাল, ক্ষীরপাই, মালদহ, সোনামুখী, ধনেখালি ইত্যাদি বিস্তীর্ণ জনপদে ছড়িয়ে থাকা রেশম আর সুতোর ব্যবসায় বছরে ১৩ লক্ষ টাকা টার্নওভার ছিল। গ্লাস, সিন্দুক, নারিকেল দড়ি, তামাকু, আতসবাজি, শাল ও সেগুন কাঠ, মেটেসিন্দুর, তুঁতে, পুরনো লোহা ইত্যাদির দোকান এবং কারখানা ছিল বৃহত্তর কলকাতা জুড়ে। প্রতি বৃহস্পতিবার এবং রোববার সুতানটি আর শোভাবাজারে বসত বিপুল এক আর্থিক লেনদেনের বাজার।

    এহেন সম্পদশালী একটি রাজ্যের শাসক অবশ্য থাকতেন কলকাতা থেকে দূরে। মুর্শিদাবাদে। নাম আলিবর্দি খাঁ। বস্তুত যার আমলে শেষবার বাংলা দেখেছিল অর্থনৈতিক উন্নতির একটি উল্লেখযোগ্য রূপরেখা। মারাঠি শাসক রঘুজি ভোঁসলের লেঠেলবাহিনী ভাস্কর পণ্ডিতদের মতো নির্মম ডাকাত… সেই বর্গিদের চরম ১৭৪১ থেকে ১০ বছর ধরে অত্যাচারে বিপুল ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাঙালি। মৃত্যু হয় ৪ লক্ষাধিক মানুষের। কতটা নিষ্ঠুরতা? গোটা গ্রাম ঘিরে টাকাপয়সা লুট করাতেই সীমাবদ্ধ নয়। প্রাণভয়ে পালানো গ্রামবাসীদের তাড়া করে গলায় ঘোড়ার পা তুলে চাপ দিয়ে দিয়ে মেরে ফেলা। বাঙালির দুর্ভাগ্য তাড়া করে বেরিয়েছে বারংবার। চৌথ হিসেবে বর্গিদের অগাধ অর্থ প্রদান করে নিষ্কৃতি মিলেছিল। কিন্তু মারাঠা তথা বর্গিদের এই লুটতরাজ বস্তুত বাংলাকে পিছিয়ে দিয়েছিল। সেই অত্যাচার সত্ত্বেও বাংলা আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে ১৭৫২ সাল থেকে। সবেমাত্র আরো একবার মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু হয়েছিল আলিবর্দি খাঁয়ের শাসনসকালে। ১৭২০ সালের তুলনায় তার আমলে বাংলার রাজস্ব বেড়েছিল অন্তত ৪০ শতাংশ। কতটা শস্যসম্পদে পরিপূর্ণ ছিল বাংলা?

    শুধুমাত্র একটি বাজারের কথা জানা যাক। কাশিমবাজারের নিকটবর্তী ওই বাজারেই বছরে ৭ লক্ষ টন ধানচালের ক্রয়বিক্রয় হতো। চিনি, বস্ত্র, আফিম, তুঁতে বিদেশে রফতানির প্রধান কেন্দ্রই ছিল বাংলা। তন্তুবায় এবং মসলিন নির্মাতা অন্তত লক্ষাধিক ছিল বাংলাজুড়ে। যা ব্রিটেন থেকে পশ্চিম এশিয়া… সর্বত্র বিক্রি হতো। এহেন এক সম্পদশালী বাংলার সবচেয়ে বড় ভরসাস্থল ছিলেন আলিবর্দি খাঁ।

    * * *

    ১৭৫৬ সালের মার্চ মাসে আলিবর্দি খাঁয়ের হঠাৎ একটা স্ট্রোক হলো। প্রথম সাত দিন তিনি গোটা শরীর নাড়াতে পারছিলেন না। সম্পূর্ণ পঙ্গু। একটানা চিকিৎসার পরও সম্পূর্ণ সুস্থ হলেন না নবাব। কিছুটা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়েই রইলেন। ঠিক সেরকমই সময় তিনি দু’টি খবর পেলেন। প্রথমত, কর্ণাট প্রদেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কীভাবে মোগল নবাবদের সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করে বস্তুত হাতের পুতুল করে ফেলেছে। আর দ্বিতীয় সংবাদ হলো, কোম্পানি কলকাতায় কিছু কিছু এলাকায় হঠাৎ নতুন বিল্ডিং তৈরি করছে, কেল্লা মেরামত করছে এবং প্রাচীর নির্মাণের কাজে হাত দিয়েছে। হঠাৎ কলকাতায় প্রাচীর কেন? এরা তো ব্যবসা করবে? এদের এই অধিকার তো দেয়া হয়নি!

    আলিবর্দি খাঁ তাঁর এক কর্মচারী নারায়ণ সিংকে বললেন, গিয়ে গভর্নরকে বল এসব আমরা সহ্য করব না। সব কাজ বন্ধ করতে হবে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গভর্নর রজার ড্রেককে সেই বার্তা দিতে গেলেন নারায়ণ সিং। আর তিনি ফিরে আসার আগেই ৯ এপ্রিল ১৭৫৬ আলিবর্দি খাঁয়ের জীবনাবসান হলো। বিকেলে দাদুর মৃত্যু হয়েছে। সেই রাতেই সিরাজউদ্দৌল্লাহ মাসি ঘসেটি বেগমের প্রাসাদ আক্রমণ করে সর্বস্ব লুটপাট করলেন। আর পরের মাসে বিপুল সেনাবাহিনী নিয়ে চললেন পূর্ণিয়া। সেখানে তার এক সম্পর্কিত ভাই থাকে। তাকে পরাস্ত ও হত্যা করতে। কারণ সিরাজের লক্ষ্য, সিংহাসন যেন কণ্টকহীন হয়। পুর্ণিয়া যাওয়ার পথেই আচমকা সেই নারায়ন সিং ফিরে এলো প্রায় কাঁদতে কাঁদতে। তার অভিযোগ, কোম্পানির গভর্নর রজার্স ড্রেক যাচ্ছেতাই অপমান করেছে তাকে। এমনকী আটকে রেখে দিয়েছিল এতদিন। শুনে সিরাজ এক মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিলেন, গোরাদের শিক্ষা দেয়া দরকার। তিনি গোটা সেনাবাহিনীর মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। কাশিমবাজারে কোম্পানির ফ্যাক্টরি আক্রমণ করলেন। এবং সেখানে ঢুকে কোম্পানির সেপাইদের কচুকাটা করে সোজা কারখানা, ট্রেজারি, অফিস দখল করে নিলেন। কাশিমবাজার ফ্যাক্টরির দায়িত্বে থাকা উইলিয়ম ওয়াটস হাতজোড় করে নবাবের পায়ের কাছে বসে বলেছিলেন, আমি আপনার গোলাম। আমরা আপনার গোলাম। সেই শুরু হলো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে নবাব সিরাজের প্রত্যক্ষ বিরোধ। কোম্পানির কাশিমবাজার কারখানার এই পরাজয় এবং আত্মসমর্পণ দেখে তখন ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে কাঁপছিলেন এক কর্মী। মাত্র ২৪ বছর বয়স যুবকের। তার নাম ছিল ওয়ারেন হেস্টিংস!

    এরপর সিরাজউদ্দৌল্লার কলকাতা আক্রমণ, কলকাতাকে রক্ষা করতে মাদ্রাজ থেকে রবার্ট ক্লাইভের আগমন, ফলতায় এসে ঘুঁটি সাজিয়ে পুনরায় কলকাতা ফোর্ট দখল করা এবং নবাবের বিরুদ্ধে একঝাঁক বিশ্বাসঘাতককে নিয়ে চক্রান্তকাহিনী, পলাশীর যুদ্ধ, সিরাজের মৃত্যু, মিরজাফর হয়ে মিরকাশিমের হাতে রাজ্যপাট আসা… এসব কাহিনী বহুচর্চিত। সেই বিস্তারিত বিবরণ এই প্রতিবেদনের প্রতিপাদ্য নয়। শুধু মনে রাখা দরকার যে, ১৭৫৪ সালে গোটা মোগল সাম্রাজ্য এবং ব্রিটিশ কোম্পানির কাছে সবচেয়ে স্বর্ণোজ্জ্বল, সম্পদশালী রাজ্য বেঙ্গল মাত্র ১৪ বছরের মধ্যে ১৭৬৮ সালে হঠাৎ কীভাবে এক ইতিহাসের অন্ধকারে প্রবেশ করল। সেই অন্ধকারের জন্য শুধু‌ই খরা, অনাবৃষ্টি দায়ী নয়। তার থেকেও বেশি দায়ী অপরিসীম কোষাগার লুণ্ঠন। ১৭৫৭ সালে সিরাজের ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহ গোটা শহরে ঘোরানোর পর ৭ জুলাই এই যুদ্ধে কোম্পানির সহায়তার পেমেন্ট হিসেবে ক্লাইভ একাই পেয়েছিলেন ২ লক্ষ ৩৪ হাজার পাউন্ড। প্রথম ইনস্টলমেন্ট হিসেবে ৭৫ লক্ষ। কয়েক কোম্পানি সেনা এবং ২০০ নবাবী বজরা নিয়ে কাটোয়া, চন্দননগর হয়ে কলকাতায় ফিরেছিলেন ক্লাইভের অ্যাসিস্ট্যান্ট লুক স্ক্র্যাফটন। ১০০টি নৌকায় ছিল ৭৫০টি সিন্দুক। শুধুই বাংলার টাকা। এছাড়া পলাশীর যুদ্ধের পর নতুন নবাব মিরজাফর কোম্পানিকে দিয়েছিলেন ১২ লক্ষ ৩৮ হাজার পাউন্ড। যার মধ্যে একা ক্লাইভের তহবিলে গিয়েছিল ১ লক্ষ ৭০ হাজার পাউন্ড। ১৭৫৭ থেকে ১৭৬৫ পর্যন্ত মুর্শিদাবাদের নবাবের কোষাগার থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে গিয়েছিল প্রায় ২২ লক্ষ পাউন্ড। আজকের দিনে হিসেব করলে কত? ক্লাইভ দফায় দফায় ইংল্যান্ড ফিরেছেন আবার এসেছেন। শুধু ক্লাইভ? কলকাতার তাবৎ বাবু, মহতাব রাই নামের জগৎশেঠ, এমনকী কলকাতার বিখ্যাত বাবুদের পালিত গণিকারা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পেয়েছিল হাজার হাজার টাকা। বস্তুত বাংলার জেলে, চাষি, তন্তুবায়, রাজমিস্ত্রী, কর্মকার, স্বর্ণকারদের ঘামঝরানো আয়ের টাকা লুটতরাজ হয়ে গিয়েছে বছরের পর বছর। তারপর এলো অন্ধকারের কালো মেঘ।

    রবার্ট ক্লাইভ, ১ম ব্যারন ক্লাইভ , কেবি , এফআরএস

    (২৯ সেপ্টেম্বর ১৭২৫ – ২২ নভেম্বর ১৭৭৪)

    —————————————————-

    ১৭২৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ সেপ্টেম্বর, ইংল্যান্ডের ওয়েস্ট মিডল্যান্ডের শ্রোপশায়ার (Shropshire) কাউন্টির উত্তরাংশের মার্কেট ড্রাইটোন (Market Drayton) নামক শহরের ক্লাইভ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রবার্ট। তার বাবার নাম ছিল রিচার্ড ক্লাইভ এবং মায়ের নাম রেবেকা গ্যাসকেল ক্লাইভ। রবার্ট ক্লাইভ ছিলেন তার পিতামাতার ১৩টি সন্তানের মধ্যে (৭ কন্যা ও ৬ পুত্র) বড়। শৈশবে তিনি তার খালার কাছে প্রতিপালিত হন। রবার্টের ৯ বছর বয়সে তার খালার মৃত্যু হয়।

    তার বাবা তাকে প্রথমে মার্কেট ড্রাইটোন গ্রামার স্কুলে ভর্তি করে দেন। কিন্তু উচ্ছৃঙ্খল আচরণের জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ তোলে, পরে তার বাবা তাকে লণ্ডনের মার্চেন্ট টেইলরস স্কুলে ভর্তি করে দেন। এখানেও উচ্ছৃঙ্খল আচরণের জন্য বহিস্কৃত হলে তাকে হার্টফোর্ডশায়ারের একটি স্কুলে ভর্তি করে দেয়া হয়। এই স্কুল থেকে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করতে সক্ষম হন। স্কলারশিপ না পাওয়ায় তার পরবর্তী শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এই সময় তিনি নিজের মতো করে লেখাপড়া করতে থাকেন।

    রবার্টের বাবা তাকে ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি-তে একটি লেখকের চাকরির ব্যবস্থা করে দেন।

    রবার্ট ক্লাইভ সামান্য কেরানি হিসেবে ১৭৪৪ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে যোগ দেন এবং একই বছরে কোম্পানির ব্যবসার কাজে ভারতে আগমন করেন।

    ভারতে কিছু দিন চাকরির পর তিনি নিজ দেশে ফিরে যান এবং সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে যুদ্ধে অংশ নেন।

    দ্বিতীয়বার তিনি ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে ডেপুটি গভর্নর হিসেবে ভারতে আসেন ১৭৫৬ সালে।

    এই যাত্রায় ভারতে এসেই তিনি ভারতবর্ষ তথা বাংলা বিহার উড়িষ্যায় ব্রিটিশ আধিপত্য বিস্তারে কূটকৌশল চালাতে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় পলাশীর যুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা করে মীর জাফর এবং তার মিত্ররা।

    নবাব সিরাজউদ্দৌলার মৃত্যু এবং মীর জাফরের ক্ষমতাগ্রহণের ঘটনা ঘটলেও প্রকৃতপক্ষে অস্তমিত হয় বাংলার স্বাধীনতার সূর্য। আর উত্থান ঘটে লর্ড ক্লাইভ তথা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের।

    পলাশীর যুদ্ধের ১০ বছর পর ১৭৬৭ সালে ক্লাইভ ইংল্যান্ড ফিরে যান। কিন্তু ভারতে রেখে যান ঘুষ, দুর্নীতি, সম্পদ আত্মসাত, প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, দুর্বৃত্তায়ন আর অপরাজনীতির এক জঘন্য ইতিহাস।

    তার দুর্নীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে ১৭৭২ সালে ইংল্যান্ডের পার্লামেন্ট তার দুর্নীতির তদন্ত শুরু করতে বাধ্য হয়।

    এতে করে একে একে তার দুর্নীতির তথ্য বেরুতে থাকে। আত্মসম্মানের কথা বিবেচনা করে তিনি সব সম্পদের বিনিময়ে তদন্ত বন্ধ তথা তার সম্মান রক্ষার করুণ আর্তনাদ জানান।

    তবুও চলতে থাকে তদন্ত,

    এতে অপমানের জ্বালা সহ্য করতে না পেলে ১৭৭৪ সালের ২২ নভেম্বর আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। কোনও সুইসাইড নোট লিখে যাননি ক্লাইভ। আত্মহত্যার জন্য তিনি নিজের শরীরে ছুরি চালান বা নিজেই নিজের গলায় ছুরি ঢুকিয়ে দেন বলে প্রচলিত আছে। যদিও তার পরিবার একথা অস্বীকার করেন। তবে সম্মান রক্ষার্থে কেউ কেউ প্রচার করেন, অতিরিক্ত আফিম বা মাদক গ্রহণ অথবা হৃদরোগে তার মৃত্যু হয়েছে। তার মৃত্যু ঘটে মাত্র ৪৯ বছর বয়সে।

    তাকে সমাহিত করা হয়েছিল রাতের বেলা গোপনে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। তার কবরে পরিচিতিমূলক কোনও ফলক বা চিহ্নও রাখা হয়নি। ১৭৭৪ সালে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের প্রতিষ্ঠাতা রবার্ট ক্লাইভ যখন আত্মহত্যা করেন, তিনি তখন ইংল্যান্ডের অন্যতম ঘৃণ্য ব্যক্তিদের একজন। ব্যাপকভাবে নিন্দিত ব্যক্তি ছিলেন তিনি।

    তবে মরেও বেঁচে আছে লর্ড ক্লাইভ এক ঘৃণিত বিদেশি প্রভুর আদলে।

    সূত্র : বর্তমান

    Share. Facebook WhatsApp Copy Link
    Previous Articleএবার বইমেলা হচ্ছে না!
    Next Article ইউনুসের কৌশলী উত্তর―’আমরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করিনি।’
    JoyBangla Editor

    Related Posts

    গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার জাহাজগুলো আটক শুরু করেছে ইসরায়েল

    October 2, 2025

    গাজা অভিমুখে ৪৪ দেশের ১০০ জাহাজ, কী ঘটতে যাচ্ছে

    October 2, 2025

    মরক্কো জেনজি বিক্ষোভে উত্তাল: পুলিশ স্টেশনে আগুন, নিহত ২

    October 2, 2025

    জেনেভায় জাতিসংঘের বাইরে একটি প্রদর্শনী: বাংলাদেশের মানবাধিকার রেকর্ডের উপর আলোকপাত

    October 2, 2025
    Leave A Reply Cancel Reply

    সম্পাদকের পছন্দ

    গাজা অভিমুখে ৪৪ দেশের ১০০ জাহাজ, কী ঘটতে যাচ্ছে

    October 2, 2025

    তোফায়েল আহমেদের দাফন ভোলায়, নাকি বনানীতে? সরকারি চাপে সিদ্ধান্তহীনতায় পরিবার

    October 2, 2025

    আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ  ইন্তেকাল

    October 2, 2025

    ইউনূসের সমর্থনে জামাতের মদদে চলছে মন্দির-প্রতিমা ভাঙচুর

    October 2, 2025
    • Facebook
    • Twitter
    • Instagram
    • TikTok
    মিস করবেন না
    International

    গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার জাহাজগুলো আটক শুরু করেছে ইসরায়েল

    By JoyBangla EditorOctober 2, 20250

    গাজা অভিমুখে ত্রাণ নিয়ে যাত্রা করা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা থামিয়ে দেওয়ার জন্য ভয় দেখানোর পর…

    গাজা অভিমুখে ৪৪ দেশের ১০০ জাহাজ, কী ঘটতে যাচ্ছে

    October 2, 2025

    মরক্কো জেনজি বিক্ষোভে উত্তাল: পুলিশ স্টেশনে আগুন, নিহত ২

    October 2, 2025

    তোফায়েল আহমেদের দাফন ভোলায়, নাকি বনানীতে? সরকারি চাপে সিদ্ধান্তহীনতায় পরিবার

    October 2, 2025

    সাবস্ক্রাইব

    সর্বশেষ খবরের সাথে আপডেট থাকুন।

    About Us
    About Us

    মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও লালন করে দেশ ও বিদেশের খবর পাঠকের কাছে দুত পৌছে দিতে জয় বাংলা অঙ্গিকার বদ্ধ। তাৎক্ষণিক সংবাদ শিরোনাম ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পেতে জয় বাংলা অনলাইন এর সঙ্গে থাকুন পতিদিন।

    Email Us: info@joybangla.co.uk

    Our Picks

    গাজা অভিমুখে ৪৪ দেশের ১০০ জাহাজ, কী ঘটতে যাচ্ছে

    October 2, 2025

    তোফায়েল আহমেদের দাফন ভোলায়, নাকি বনানীতে? সরকারি চাপে সিদ্ধান্তহীনতায় পরিবার

    October 2, 2025

    আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ  ইন্তেকাল

    October 2, 2025

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.