বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের নিথর দেহ রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্র তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করলেও পরিবারের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে লাইফ সাপোর্ট সরানো সম্ভব হচ্ছে না। অভিযোগ উঠেছে, সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর জানাজা ও দাফন নিজ জেলা ভোলায় করার বিষয়ে প্রবল চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে, যা নিয়ে পরিবার এবং তাঁর দেখভালের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা চরম বিপাকে পড়েছেন।
পরিবারের একটি সূত্র জানিয়েছে, তোফায়েল আহমেদ মৃত্যুর আগে তাঁর ওসিয়ত হিসেবে ভোলার পারিবারিক কবরস্থানে মায়ের পাশে দাফনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু সরকার চাইছে, ঢাকায় বনানী কবরস্থানে সীমিত পরিসরে (প্রায় ১০০ লোকের উপস্থিতিতে) তাঁর জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হোক। ভোলায় জানাজা হলে বিপুল জনসমাগমের আশঙ্কা থেকেই সরকার এমন নির্দেশনা দিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই চাপের মুখে তাঁর পরিবার কোথায় তাঁকে দাফন করা হবে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারছে না। পরিবারের পক্ষ থেকে শুধু বলা হয়েছে, সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে।
এই পরিস্থিতিকে নরসিংদীর প্রয়াত সংসদ সদস্য নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের ঘটনার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি শিল্পমন্ত্রী হুমায়ূনের মৃত্যুর পর তাঁর জানাজাও সীমিত পরিসরে করার জন্য সরকার চাপ সৃষ্টি করেছিল। মরহুমের ছেলে মন্জুরুল মজিদ সাদী সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, “ইউনুস সরকারের প্রশাসন” মৃত্যুর সংবাদ মাইকিং করতে দেয়নি এবং জানাজার মাঠে তাঁকে বক্তব্য রাখতেও বাধা দেওয়া হয়। নানা প্রশাসনিক বাধার পরও সেদিন লাখো জনতা তাঁর জানাজায় অংশ নিয়েছিল। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নরসিংদীর অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকার তোফায়েল আহমেদের ক্ষেত্রে আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
এদিকে, স্কয়ার হাসপাতালে তোফায়েল আহমেদের লাইফ সাপোর্ট কখন খোলা হবে, তা নিয়েও সিদ্ধান্তহীনতা চলছে। গত ২৯ আগস্ট রাতে পরিবারের সদস্যরা লাইফ সাপোর্ট সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও কিছু সময় পর আবার সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। এর কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা তাঁরা দেননি। তবে পরিবারের সদস্যরা বলছেন, নানা ধরনের জটিলতার কারণে তাঁরা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।
এই কিংবদন্তি রাজনীতিবিদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে গত রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, যা ভোলাজুড়ে তাঁর সমর্থকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। তাঁর মৃত্যু সংবাদে ভোলার সাধারণ মানুষ ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এলেও সরকারি চাপের ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন না।
পারিবারিক সূত্র আরও জানায়, সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আত্মগোপনে থাকায় এবং তাঁর ভাগ্নে সাবেক এমপি আলী আজম মুকুল কারাগারে থাকায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হচ্ছে। এমনকি পরিবারের অনেক সদস্যকে হাসপাতালে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সব মিলিয়ে, বর্ষীয়ান এই নেতার শেষকৃত্য কোথায় এবং কীভাবে সম্পন্ন হবে, তা নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা ও চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভোলার মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তাদের প্রিয় নেতার দাফন যেন তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী নিজ মাটিতেই হয়।