দুর্গাপূজার প্রাক্কালে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয় ও উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। সেপ্টেম্বর মাসে ১৩টি জেলায় কমপক্ষে ১৫টিরও বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিশ্লেষকরা এগুলোকে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর পরিকল্পিত চক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত করছেন, যা মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও জাতীয় ঐক্যকে হুমকির মুখে ফেলছে। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অভিযোগ, মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নীরবতা এই হামলাগুলোকে উৎসাহিত করছে।
সাম্প্রতিক হামলার বিবরণ
২ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও স্থানীয় মিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ১৩টি জেলায় ৫০টিরও বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রতিমা দহন, ভাঙচুর, এবং মন্দিরে পাথর নিক্ষেপ। পটুয়াখালী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, নড়াইলসহ বিভিন্ন এলাকায় গত দুই দিনে আরও ১০টি ঘটনা যুক্ত হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল ছবি ও ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, জঙ্গিরা এই হামলাগুলোর সঙ্গে জড়িত।
২ সেপ্টেম্বর গাইবান্ধার হামিদপুর ও সাদুল্লাপুর উপজেলায় রাতের আঁধারে জঙ্গিরা দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশের প্রতিমা দহন করে। স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় প্রতিবাদ জানালে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। ১০ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড় ও সাতক্ষীরায় একই দিনে কালী মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় অভিযোগকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়, যা স্থানীয় অস্থিরতার জন্ম দেয়। ১৪ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ার শ্বরূপদহ পালপাড়ায় কার্তিক ও সরস্বতীর প্রতিমার মাথা ও হাত ভাঙচুর করা হয় এবং সিসিটিভি চুরি হয়।
১৬ সেপ্টেম্বর নেত্রকোণার কান্দুলিয়া কালীবাড়িতে দুটি প্রতিমা ধ্বংস করা হয়, এবং পূজা কমিটি নিরাপত্তা বৃদ্ধির দাবি করে। ১৭ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের কাশিমপুর শ্মশান মন্দিরে ৫-৬টি প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় দুই কিশোর গ্রেপ্তার হয় এবং তারা স্বীকারোক্তি দেয়। ২১ সেপ্টেম্বর জামালপুরের তারিয়াপাড়ায় ৭টি প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়, এবং সিসিটিভি ফুটেজের সহায়তায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই দিনে মুন্সীগঞ্জের মধুপুর রক্ষাকালী মন্দিরে হামলা হয়, যেখানে পুলিশ মধ্যস্থতা করে।
২৩ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রামের দুর্গাপুরে প্রতিমা পরিবহনের সময় টোল বিরোধে সহিংসতা হয়। হিন্দু সম্প্রদায় রাস্তা অবরোধ করলে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে। ২৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের রাউজান ও নোয়াপাড়ায় প্রতিমা মণ্ডপে পাথর নিক্ষেপ এবং পরিবহনকালে হামলার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়, যা ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। এছাড়া ২৫-২৬ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহ, পটুয়াখালী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ ও নড়াইলে প্রতিমা ভাঙচুর ও মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। ২৭ সেপ্টেম্বর নাটোর, মানিকগঞ্জ ও চট্টগ্রামে নতুন করে মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা সংঘটিত হয়। পুলিশ জানিয়েছে, তারা তদন্ত অব্যাহত রেখেছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তবে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে নিরাপত্তার অভাবে উদ্বেগ বিরাজ করছে।
এই ঘটনাগুলো বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার উপর গুরুতর আঘাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সরকার ও সমাজের সকল স্তরের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই জঙ্গিবাদী কার্যকলাপ রোধ করা না হলে দেশের সামাজিক শান্তি বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।২ সেপ্টেম্বর গাইবান্ধার হামিদপুর ও সাদুল্লাপুর উপজেলায় রাতের আঁধারে জঙ্গিরা দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশের প্রতিমা দহন করে। স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় প্রতিবাদ জানালে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। ১০ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড় ও সাতক্ষীরায় একই দিনে কালী মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় অভিযোগকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়, যা স্থানীয় অস্থিরতার জন্ম দেয়। ১৪ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ার শ্বরূপদহ পালপাড়ায় কার্তিক ও সরস্বতীর প্রতিমার মাথা ও হাত ভাঙচুর করা হয় এবং সিসিটিভি চুরি হয়।
১৬ সেপ্টেম্বর নেত্রকোণার কান্দুলিয়া কালীবাড়িতে দুটি প্রতিমা ধ্বংস করা হয়, এবং পূজা কমিটি নিরাপত্তা বৃদ্ধির দাবি করে। ১৭ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের কাশিমপুর শ্মশান মন্দিরে ৫-৬টি প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় দুই কিশোর গ্রেপ্তার হয় এবং তারা স্বীকারোক্তি দেয়। ২১ সেপ্টেম্বর জামালপুরের তারিয়াপাড়ায় ৭টি প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়, এবং সিসিটিভি ফুটেজের সহায়তায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই দিনে মুন্সীগঞ্জের মধুপুর রক্ষাকালী মন্দিরে হামলা হয়, যেখানে পুলিশ মধ্যস্থতা করে।
২৩ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রামের দুর্গাপুরে প্রতিমা পরিবহনের সময় টোল বিরোধে সহিংসতা হয়। হিন্দু সম্প্রদায় রাস্তা অবরোধ করলে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে। ২৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের রাউজান ও নোয়াপাড়ায় প্রতিমা মণ্ডপে পাথর নিক্ষেপ এবং পরিবহনকালে হামলার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়, যা ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। এছাড়া ২৫-২৬ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহ, পটুয়াখালী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ ও নড়াইলে প্রতিমা ভাঙচুর ও মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। ২৭ সেপ্টেম্বর নাটোর, মানিকগঞ্জ ও চট্টগ্রামে নতুন করে মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা সংঘটিত হয়। পুলিশ জানিয়েছে, তারা তদন্ত অব্যাহত রেখেছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তবে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে নিরাপত্তার অভাবে উদ্বেগ বিরাজ করছে।
এই ঘটনাগুলো বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার উপর গুরুতর আঘাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সরকার ও সমাজের সকল স্তরের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই জঙ্গিবাদী কার্যকলাপ রোধ করা না হলে দেশের সামাজিক শান্তি বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর এই হামলাগুলো কেবল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত নয়, বরং জাতীয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর গভীর ক্ষত সৃষ্টি করছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পাবলিক পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, “এই হামলাগুলো জঙ্গিদের শক্তি প্রদর্শন, যা ইউনুস সরকারের নীরবতায় উৎসাহিত হচ্ছে। গত এক বছরে জঙ্গি আতঙ্ক, গুজব, এবং হামলার কারণে হিন্দু সম্প্রদায় ভয়ে আচ্ছন্ন।”
ঐক্য পরিষদের সেক্রেটারি মনীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, “এই হামলাগুলো পরিকল্পিত। সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে।” এ বছর ৩৩ হাজার ৩৫৫টি পূজা মণ্ডপ স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ২ হাজারের বেশি। তবে ভয়ের ছায়ায় উৎসব পালনের আশঙ্কা রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘এশিয়া নিউজ’-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই ঘটনাগুলো জঙ্গিবাদীদের সুসংগঠিত কার্যকলাপ, যা সংখ্যালঘুদের উৎসবে ভয়ের ছায়া ফেলছে।
পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা সুব্রত চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশে ক্যালেন্ডার দেখতে হয় না জানতে জন্মাষ্টমী, দুর্গা পূজা বা সরস্বতী পূজা কখন—প্রতিমা ভাঙচুর শুরু হলেই বোঝা যায় উৎসব এসেছে।” এই চক্রান্তের লক্ষ্য সংখ্যালঘুদের প্রতিবাদের সাহস কেড়ে নেওয়া এবং সামাজিক বিভাজন তৈরি করা।
যেভাবে সমর্থন দিচ্ছে ইউনূস
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্যে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে ২০৯ জন বন্দির পালিয়ে যাওয়া এবং নরসিংদীতে সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বড় ধরনের ব্যর্থতা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের ধরতে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। একই সময়ে ইউনূসের আমলেই নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীর ঢাকায় প্রকাশ্যে ‘খেলাফত মার্চ’ আয়োজন করে, যা থামাতে ব্যর্থ হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সূত্র বলছে, এসব ঘটনায় ইউনূসের সংশ্লিষ্টরা রয়েছে। তিনি জামায়াত আমিরের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে বলেছেন যে, জামায়াত তার পছন্দের দল। মূলত এ বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট ইউনূসই জামায়াতের এই জঙ্গি কার্যক্রমকে মদত দিচ্ছেন।
সরকারি ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস, সেনাপ্রধান এবং গৃহকার্য উপদেষ্টা শান্তিপূর্ণ পূজার আশ্বাস দিয়েছেন। ৪৩০টি বিজিবি দল ২ হাজার ৮৫৭টি পূজা মণ্ডপে নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে। তবে ঐক্য পরিষদ ও পূজা কমিটির নেতারা বলছেন, “পাঁচ দিনের নিরাপত্তা নয়, সারা বছরের সুরক্ষা প্রয়োজন।” পূজা কাউন্সিলের সভাপতি বাশুদেব ধর বলেন, “হামলাকারীদের দ্রুত শনাক্ত করে শাস্তি, মন্দিরের নিরাপত্তা জোরদার, এবং গুজব রোধে পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।”
আওয়ামী লীগ হামলার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের শাস্তির দাবি করেছে এবং ইউনুস সরকারকে ‘অবৈধ দখলদার’ বলে অভিহিত করেছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ধর্মীয় নেতা, শিক্ষাবিদ, মিডিয়া, এবং নাগরিক সমাজের যৌথ প্রচেষ্টা ছাড়া অসাম্প্রদায়িক চেতনা টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে সংখ্যালঘু অধিকার রক্ষায় হস্তক্ষেপের আহ্বান জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ধর্মান্ধতা কখনো স্থায়ী হয় না। এই হামলাগুলো সমগ্র জাতির জন্য হুমকি। ঐক্য পরিষদ ও স্থানীয় নেতারা সরকারের কাছে কঠোর পদক্ষেপ, দোষীদের শাস্তি এবং সারা বছরের নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন। এখনই সময় একত্রিত হয়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার, যাতে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও সামাজিক সম্প্রীতি অক্ষুণ্ন থাকে।