স্বাধীনতার ৫৪ বছরে আমরা কখনও এমন গণতান্ত্রিক ও সামাজিক সঙ্কটের মুখে দাঁড়াইনি। মাত্র এক বছরের মধ্যে মৌলবাদী ও স্বাধীনতা-বিরোধীরা যৌথভাবে ক্ষমতার সুযোগ পেয়ে দেশকে পঞ্চাশ বছরের পেছনের অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। এই এক বছরের ফল ভয়াবহ রাষ্ট্রশক্তি দুর্বল, আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে, আর সাধারণ মানুষের জীবন নিরাপত্তাহীনতার চাকায় পড়েছে।
আজকের বাস্তবতা করুণ রাস্তায়, গ্রামে, শহরে অপশাসন, দুর্নীতি, জঙ্গি কার্যক্রম, মাদক, চুরি-ছিনতাই প্রকাশ্যে খুন, ধর্ষণের ঘটনা এই সব অপরাধের পরিসংখ্যান আকাশছোঁয়া। ন্যায়বিচার হারিয়েছে বিশ্বাসযোগ্যতা আদালতের কাঁধে ভরসা না পেয়ে মানুষ নির্যাতিত, নিরাশ। রাষ্ট্র যেন অপরাধীদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে এমন অবস্থায় উন্নয়ন প্রজেক্ট, সেতু বা মেগা প্রকল্পের কোনো দরকার নেই যদি নাগরিকেরা নিরাপদ না থাকে।
সবচেয়ে বিষাক্ত দিকটি হলো, এই অরাজকতা চিহ্নিতভাবে একটি রাজনৈতিক এজেন্ডার অংশ। যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী, যারা জাতির ইতিহাস মুছে ফেলতে চায় তারা কেবল ঐতিহাসিক মানচিত্র বদলাতে চায় না, তারা দেশের মরণফাঁদ তৈরিও করছে। ইতিহাসকে মুছে ফেলার চেষ্টা মানে জাতির সংগ্রামকে বন্ধ করে দেওয়া এটি আমরা কখনো মানতে পারি না। স্বপ্নতোষেক্ষরা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখে দিলে দেশের ধারাবাহিকতা, চেতনা ও মর্যাদা হুমকির মুখে পড়ে।
মানুষ এখন বুঝতে শুরু করেছে কে উন্নয়ন আনে আর কে ধ্বংস ডেকে আনে। যে শক্তি দেশ পরিচালনা করে শুধু নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করে, জনগণের কষ্ট তাদের কিছু যায় আসে না। দরিদ্র, কর্মহীন ও সংখ্যালঘুদের দুর্দশা তাদের অনুধাবন বাইরে ফলে সমাজের সবচেয়ে নাজুক শ্রেণিরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটাই অস্থিরতার মূল রাজনৈতিক স্বার্থ যখন মানবিকতা ও ন্যায়বিচারের ওপরে বসে।
তবে ইতিহাস ও বাস্তবতা প্রমাণ করে দেশকে নিরাপদ ও সম্মানিত পথে ফিরিয়ে আনা সম্ভব প্রমাণিত নেতৃত্বের মাধ্যমে। চার দশকেরও বেশি সময়ে শেখ হাসিনা দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করছেন সরকারের দায়িত্ব নিয়ে জনগনের কাজ করেছেন তার সময়েই এসেছে অবকাঠামো বিপ্লব, নারীর ক্ষমতায়ন, তথ্যপ্রযুক্তির বিস্তার ও দারিদ্র্য হ্রাসের দৃশ্যমান ফল। এসব অর্জন রক্ষা করা ও বিস্তৃত করা জাতির মৌলিক চাহিদা।
এখন সময় নীরবভাবে ক্ষোভ পোষণের নয় এখন সময় একসাথে দাঁড়ানো, মুখোশ উন্মোচন করা এবং অপশাসনের বিরুদ্ধে সক্রিয় হওয়ার। রাজনৈতিক বৈচিত্র্য ও মতবিরোধ থাকলেই ভুল নেই, কিন্তু country’s স্বাধীনতা, ইতিহাস ও মানুষের নিরাপত্তা কবরস্থ করা চলবে না। নাগরিক সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সুশীল দল, ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সবার মিলিত বিজ্ঞ প্রয়াস দরকার।
যারা দেশের শত্রু তাদের হাতে দেশ সত্যিই নিরাপদ নয়। যদি আমরা আজ অন্যমুখী নই, যদি আমরা চুপচাপ থাকি, আগামী প্রজন্মকে ইতিহাস বিনষ্ট ও অধিকারবঞ্চিত বাংলাদেশই পাবে। তাই আলোর পথে ফেরাতে হবে দেশ—মুখোশ উন্মোচন করে, ঐক্য করে, সক্রিয় নাগরিকতার মাধ্যমে; নইলে এই অন্ধকার আমাদের সবার আত্মাহুতি বয়ে আনবে।
আমাদের করণীয় স্পষ্ট প্রতিটি ভোটকে রক্ষা করতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাঁচাতে হবে, অপরাধ ও অনৈতিক শাসকদের প্রতিহত করতে হবে। স্বচ্ছ, দায়িত্বশীল ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা না করলে দাবি অগণিত হবে। আজই উঠে দাঁড়ান ইতিহাস রক্ষায়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে, আলোর পথে দেশ ফিরিয়ে আনুন। এটাই আমাদের অসীম দায়িত্ব। নিশ্চিতভাবে।