আজিজুল পারভেজ
[ফিলিস্তিনের গাজায় যখন মানবতা বিপন্ন, গুলি-বোমা আর দুর্ভিক্ষে প্রাণ হারাচ্ছেন হাজার-হাজার মানুষ। বিষয়টি যেনো গা-সওয়া হয়ে গেছে বিশ্ববাসীর। এর মধ্যে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা সাড়া জাগিয়েছে। বিশ্ব-বিবেকের নজর কাড়ছে। বিষয়টি বোঝার জন্য Raju Norul এর ফেসবুক পোস্টটি এখানে তুলে ধরা হলো।]
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা ফিলিস্তিনের গাজায় পৌঁছাতে পারেনি। সিএনএন জানিয়েছে, বহরে থাকা প্রায় সবক”টা জাহাজকেই ইসরায়েলের নৌবাহিনী আটক করেছে। একেবারে পেছনে থাকা দুয়েকটা জাহাজকে হয়তো এখনো ধরতে পারেনি। বেশ কয়েক ঘণ্টা আগে প্রথমে ১০টা জাহাজকে তারা ধরে ফেলে; যেখানে গ্রেটা থুনবার্গসহ শ”দুয়েক মানবাধিকার কর্মী ছিলেন। এরপর বাকি জাহাজগুলো (৪০টি) যেকোনো প্রক্রিয়ায় গাজা উপকূলে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।
২০০৭ সালে গাজার শাসনভার হামাসের কাছে যাওয়ার পর, ইসরায়েল গাজা উপকূল বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে সেই উপকূলে জাহাজ ভেড়া বন্ধ। ২০০৮ সালে ”ফ্রি গাজা মুভমেন্ট” নামে একটা দল গাজায় পৌঁছাতে পেরেছিল। তারপর ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৩১ বার চেষ্টা করা হলেও মাত্র ৫টা নৌকা সেখানে ভিড়তে পেরেছে। এর মধ্যে ২০১০ সালে ঘটে এক ভয়ংকর ঘটনা। ছয়টা জাহাজ গাজা উপকূলে ভিড়ার চেষ্টা করলে ইসরায়েলী বাহিনীর গুলিতে অন্তত ১০ জন প্রাণ হারায়, জখম হয় অনেক।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া এবারের যুদ্ধে এখন পর্যন্ত অন্তত ১ লাখ ফিলিস্তিনি মারা গেছে। তীব্র খাবার ও পানি সংকটে গাজায় এখন চলছে দূর্ভিক্ষ! বাইরে থেকে খাবার পাঠানো বন্ধ। কেউ খাবার পাঠাতে চাইলে ইসরায়েল সেসব জাহাজে হামলা চালাচ্ছে। উদ্দেশ্য হলো যেকোনোভাবে গাজাকে খালি করা, তার একটা উপায় হলো সব মানুষকে যেকেনো উপায়ে মেরে ফেলা।
ফলে দূর্ভিক্ষে প্রাণ হারাতে বসা মানুষের পক্ষে বিশ্ববিবেককে জাগানোর জন্যই এবারের উদ্যোগ; যেখানে ৪৪টি দেশের অন্তত ৫০০র বেশি মানবাধিকার কর্মী যোগ দিয়েছিল। জুলাইয়ে শুরু হওয়া এই প্রতীকি যাত্রায় কমপক্ষে ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ যোগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেও, সেখান থেকে ৫০০জনকে নির্বাচিত করা হয়, যেখানে একেবারে শেষ মুহুর্তে বাংলাদেশের ফটো সাংবাদিক শহীদুল আলম যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। নি:সন্দেহে এটা এক বিশাল প্রাপ্তি এবং এর মধ্য দিয়ে তিনি বাংলাদেশকে এই মহান যাত্রায় যুক্ত করেছেন।
যাত্রীদের পাশাপাশি মালেয়শিয়া ও ইতালির পাঠানো দুটো কার্গো ছিল সুমুদে। ইতালির কার্গোতে ৪৫ টন খাবার ছিল। উদ্দেশ্য ছিল, প্রতীকি এই খাবারটুকু গাজায় পৌঁছাতে পারলে মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর দুয়ার খুলে যাবে। বিশ্বকে এই বার্তা দেয়া যাবে যে, ”দেখো, চাইলেই গাজায় পৌঁছানো যায়। খাবারও পৌঁছে দেয়া যায়!”
আরবি সুমুদ শব্দের অর্থ অটল, অবিচল থাকা। মূলত ইসরায়েলের নৃশংতার বিরুদ্ধে যুগের পর যুগ ধরে ফিলিস্তিনবাসীর অবিচল লড়াইয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই নামকরণ করা হয়। সুুমুদ ফ্লোটিলা গাজায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হলেও ইতিহাসে লেখা থাকবে যে, এই পৃথিবীর কিছু নিরস্ত্র মানুষ একটা যুদ্ধবাজ দেশের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে এতটুকু ভয় পায়নি। সম্ভাব্য হামলা, মুত্যৃুকে উপেক্ষা করে তারা গাজায় পৌঁছানোর সব চেষ্টা করেছে।
ইতিহাসের কাছে মানুষের দায় এইটুকুই।
নোট: যারা ফিলিস্তিন বুঝেন কিন্তু খাগড়াছড়ি বুঝেন না, যারা ঈদ বুঝেন কিন্তু পূজা বুঝেন না, রাম মন্দির বুঝেন অথচ বাবরি মসজিদ বুঝেন না, যারা ধর্মনিরপেক্ষতা কি ওটা বুঝেন না, বুঝেন না যে নাস্তিকতাও একটা বিশ্বাস, বিশ্বাস করেন ভাই, আপনাদের জন্য এই সুমুদ ফ্লোটিলা না। মনে রাইখেন, দুনিয়া কাঁপানো এই বিশাল উদ্যোগের অন্যতম উদ্যোক্তা ২২ বছর বয়সী হাফপ্যান্ট আর টিশার্ট পরা গ্রেটা থুনবার্গ কিন্তু ধর্ম নিরপেক্ষ-”বিধর্মীই”!