রোবোটিক হাতটি বড় উদ্যোগের অংশ হিসেবে তৈরি হয়েছে, যা ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সমুদ্রদূষণ ঠেকাতে ‘অটোনমাস রোবট’ ব্যবহারের মাধ্যমে কাজ করছে।
পানির নিচে কাজ করা ‘অসাধারণ’ সক্ষমতাওয়ালা রোবোটিক বাহু বা হাত তৈরির দাবি করেছেন প্রকৌশলীরা, যা সমুদ্রের গভীর থেকে আবর্জনা শনাক্ত ও তা তুলে আনতে পারবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, “এটি এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন,” কারণ সামুদ্রিক পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এই রোবোটিক বাহু।
এ রোবোটিক হাত তৈরি করেছেন ‘টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অফ মিউনিখ’ বা টিইউএম’র গবেষক ও প্রকৌশলীরা। তাদের দাবি, সমুদ্রের গভীর থেকে আবর্জনা শনাক্ত করার পাশাপাশি তা তুলে আনতেও পারে।
রোবোটিক হাতটি তৈরি হয়েছে ‘সিক্লিয়ার’ নামের এক বড় উদ্যোগের অংশ হিসেবে, যা ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সমুদ্রদূষণ ঠেকাতে ‘অটোনমাস রোবট’ ব্যবহারের মাধ্যমে কাজ করছে।
‘টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অফ মিউনিখ’-এর এই ডাইভিং রোবটটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করে পানির নিচে থাকা আবর্জনা শনাক্ত করে এবং নিজের চারটি যান্ত্রিক আঙুলের সাহায্যে সেগুলো ধরে তুলে আনতে পারে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট ‘ইন্টারেস্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুরো প্রক্রিয়াটিতে একাধিক উপাদান একসঙ্গে কাজ করে, যার মধ্যে রয়েছে কেবলচালিত বিদ্যুৎ ও ডেটানির্ভর মানববিহীন পরিষেবা নৌকা, একটি ডিঙি বা ছোট নৌকা, একটি ড্রোন, পানির নিচের অঞ্চল স্ক্যানের জন্য ছোট এক অনুসন্ধানী রোবট এবং সবশেষে টিইউএম’র রোবোটিক হাত।
প্রথমে মানববিহীন পরিষেবা নৌকা আলট্রাসনিক তরঙ্গের মাধ্যমে সমুদ্রের তলদেশের আকৃতি প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করে। এরপর অনুসন্ধান সাবমেরিন সেই মানচিত্র আরও নিখুঁত করে তোলে ও খুঁজে পাওয়া বিভিন্ন আবর্জনাকে বিশ্লেষণ ও উদ্ধারের জন্য প্রস্তুত করে রোবটটির বাহুকে।
এ ডাইভিং রোবটটি নিউরাল নেটওয়ার্ক মডেল ব্যবহার করে সমুদ্রের তলদেশের ছবি স্ক্যান করে। তারপর এআইয়ের সাহায্যে সেই তথ্য থেকে থ্রিডি মডেল তৈরি করে, যা রোবটের চারটি আঙুল কতটা সঠিকভাবে ধরে ও কতটা চাপ প্রয়োগ করবে তা নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
টিইউএম-এর অধ্যাপক স্টেফান সোসনোভস্কি বলেছেন, “এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি, কারণ এর মাধ্যমে নির্ধারণ করা যায় কোথায় বস্তুটিকে ঠিকঠাক ধরা যাবে।”
দূষণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে তা সবসময়ই চিন্তার বিষয়; বিশেষ করে আমাদের গভীর সমুদ্রের ক্ষেত্রে তা আরও বড় সমস্যা। কারণ সেখানে পৌঁছানো ও পরিষ্কারের বিষয়টি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খুবই কঠিন। সাধারণ ক্লিনআপ যন্ত্রপাতি দিয়ে নয়, বরং ব্যয়বহুল ও জটিল বৈজ্ঞানিক সরঞ্জামের মাধ্যমেই তা সম্ভব।
সমুদ্রের গভীরে অর্থাৎ আমাদের নাগালের বাইরে আবর্জনা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে পড়ে থাকতে পারে, যা পানির গুণমান খারাপ করে ও সামুদ্রিক জীবের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। কারণ সেখানকার প্রাণীরা সেইসব আবর্জনার ছোট ছোট টুকরা খেয়ে ফেলে।
বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, ক্রমাগত এআইচালিত ডেটা সেন্টার ও তাদের চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহের কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার পেছনে দায়ী কার্বন নির্গমনের পরিমাণ বেড়েছে। এ কার্বন দূষণ তাপ ধরে রাখার ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রাও বাড়ছে।
গবেষকরা বলছেন, পরিবেশ সচেতন উন্নয়নের সবসময়ই সুযোগ থাকলেও, আমাদের সামুদ্রিক আবর্জনা পরিষ্কারের কাজে এআইকে সাবধানে ও সীমিত মাত্রায় ব্যবহার করায় ফলপ্রসূ। বিষয়টি যে কোনোভাবে হলেও আবর্জনা পরিষ্কারের কাজকে আরও কার্যকর ও উন্নত করতে সাহায্য করবে।