বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫২টি। এর মধ্যে তথাকথিত জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছে মাত্র ১৭টি দল। বাকি ৩৫টি দল এতে সই করেনি। সংবিধানকে অগ্রাহ্য করে জুলাই সনদ বিতর্কিত হওয়ায় বামপন্থী চার দল ও গণফোরাম স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ যৌথভাবে জানিয়েছে, সংশোধিত খসড়া না দেওয়া এবং তাদের নোট অব ডিসেন্ট অন্তর্ভুক্ত না করার কারণে তারা সনদে সই করেনি।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, “জুলাই সনদের খসড়ায় মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। সংবিধানের ১৫০(২) অনুচ্ছেদ সংশোধন ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাদ দেওয়ার প্রস্তাব আমাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য।”
বাম দলগুলো অভিযোগ করেছে, সনদে সংবিধানের চারটি মূলনীতি—গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ—ঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়নি।
অন্যদিকে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, “সনদের চূড়ান্ত কপি আমরা পাইনি, কেবল স্বাক্ষরের পাতাই দেওয়া হয়েছিল। এর মাধ্যমে সংবিধানের কিছু মৌলিক অনুচ্ছেদ বিলোপের ইঙ্গিত ছিল, তাই আমরা সই করিনি।”
গণফোরামের নেতা সুব্রত চৌধুরীও জানিয়েছেন, “আমরা সনদের পূর্ণাঙ্গ কপি দেখিনি। বিষয়বস্তু অস্পষ্ট থাকায় সই থেকে বিরত থেকেছি।”
স্বাক্ষরকারী ও স্বাক্ষরবর্জনকারী দলসমূহ
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাব্বির খান জানান, সনদে স্বাক্ষর করা দলের মধ্যে রয়েছে—বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি-রব), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, এবি পার্টি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), গণফোরাম (একাংশ), নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাকের পার্টি ও গণফ্রন্ট।
অন্যদিকে, জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেনি ৩৫টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল।
এর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (ইনু), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বি.জে.পি.), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (মঞ্জু)।
স্বাক্ষর না করা ইসলামী দলগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশ মুসলিম ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন একাংশ।
মধ্য ও মধ্য-বামপন্থী দলগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) , বাংলাদেশ মাইনরিটি পার্টি, বাংলাদেশ পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ প্রগ্রেসিভ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), জাতীয় গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সিনিয়র সাংবাদিক সাব্বির খান বলেন, সনদে স্বাক্ষর করা ২৫টি দলের মধ্যে ৯টি অনিবন্ধিত। নিবন্ধিত দলের হিসেবে এটি দেশের রাজনৈতিক শক্তির প্রায় ৩২ শতাংশ। অর্থাৎ ৬৮ শতাংশ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল তথাকথিত জুলাই সনদের বাইরে রয়েছে।
জুলাই সনদ স্বাক্ষরকারী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের যৌথ ছবি ফেসবুকে দিয়ে লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাসান মোরশেদ বলেন, ‘এই ছবিটি ঐতিহাসিকভাবে এক দারুন মেটাফোর। সামনের সারির প্রায় সকলে জামায়াতে ইসলামীর গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দ। একই সারিতে পাঞ্জাবী পরিহিত শ্মশ্রুহীন ব্যক্তিটি হলেন কমরেড সাইফুল হক- বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক। তার পাশে শাড়ি পরিহিত বহ্নিশিখা জামালী, একই বিপ্লবী পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য।’
‘আর এই দুজনের ফাঁক দিয়ে হাতে লাঠি যে অশীতিপর বৃদ্ধকে দেখা যাচ্ছে, যদি আমার ভুল না হয়, তিনি কমরেড টিপু বিশ্বাস, সত্তুরের দশকে শ্রেণিশত্রু নিধন[আকা গলাকাটা]-এর অন্যতম সেনাপতি’, লিখেছেন এ রাজনৈতিক বিশ্লেষক।