রাজনৈতিক দায়হীনতা, প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও নৈতিক শূন্যতা দেশকে ঠেলে দিচ্ছে গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে
বাংলাদেশ আজ এক গভীর বিশৃঙ্খলার অন্ধকারে নিমজ্জিত। গ্রাম থেকে শহর—সবখানেই অশান্তি, হানাহানি, দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও মামলাবাজির উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়েছে। রাজনীতি যেন আজ জনগণের সেবার পরিবর্তে লোভ, প্রতিহিংসা আর স্বার্থের ব্যবসা হয়ে উঠেছে। সমাজের তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে ভয় ও অস্থিরতার ছায়া। এক সময় যেখানে রাজনীতি ছিল জনগণের মুক্তির হাতিয়ার, সেখানে এখন তা পরিণত হয়েছে ভয়ঙ্কর বিভেদের অস্ত্রে।
সরকারি দপ্তর থেকে শুরু করে মাঠ প্রশাসন পর্যন্ত যেন আজ ব্যস্ত শুধুই ক্ষমতা ও সম্পদ লোপাটে। রাষ্ট্রযন্ত্রের লক্ষ্য জনগণের নিরাপত্তা নয়, বরং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমন। সেনাবাহিনী, যে প্রতিষ্ঠানটি একসময় জাতির গর্ব ছিল, আজ তাদের একটি অংশ ব্যস্ত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে কোণঠাসা করতে। পুলিশ প্রশাসন জনগণের সেবক না হয়ে অনেক সময় হয়ে উঠছে নিরপরাধ মানুষের আতঙ্ক। অন্যদিকে দেশের প্রধান বিরোধী শক্তি বিএনপি-জামায়াত নিজেদের রাজনৈতিক পুনর্বাসন ও সম্পদ বৃদ্ধির সুযোগ খুঁজছে—জনগণের দুঃখ-দুর্দশার প্রতি তাদের কোনো দায়বোধ নেই।
এই পরিস্থিতি ভয়াবহ। যখন রাষ্ট্রের তিনটি মূল স্তম্ভ—রাজনীতি, প্রশাসন ও বিচার—জনগণের আস্থা হারায়, তখন অরাজকতা গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়। আজ বাংলাদেশের সেই বাস্তবতা দেখা যাচ্ছে স্পষ্টভাবে। মাদককারবারী, দখলবাজ, সুবিধাভোগী ও ছদ্মবেশী রাজনৈতিক লেবাসধারীরা এখন গ্রামেগঞ্জে ‘রাজনীতি’র নামে নিজেদের সাম্রাজ্য বিস্তারে মেতে উঠেছে। প্রশাসন নীরব, নেতৃত্ব অচল, জনগণ হতাশ।
দেশের মানুষ আজ দিকহারা। কেউ ভাবছে না কীভাবে এই অশান্তি থামানো যায়, কীভাবে রাষ্ট্রকে আবার জনগণের কাছে ফিরিয়ে আনা যায়। অথচ ইতিহাস সাক্ষী—যখন রাষ্ট্র জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়, তখন বিপ্লব বা গৃহযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়া এই দেশ যদি আবারও অন্যায়ের দখলে চলে যায়, তবে সেই আত্মাহুতি বৃথা যাবে।
এখনই সময় জনগণের, প্রশাসনের এবং সত্যিকার দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। অশান্তি, দমননীতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে না পারলে, এই দেশ এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হবে। ক্ষমতার মোহে অন্ধ রাজনীতিবিদদের বোঝা উচিত দেশের চেয়ে বড় কিছু নেই, ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়, ইতিহাসের বিচার অমোঘ।
বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে রাজনীতিতে সততা, প্রশাসনে জবাবদিহি ও সমাজে ন্যায়বোধ ফিরিয়ে আনতে হবে। জনগণের কণ্ঠরোধ নয়, জনগণের পাশে দাঁড়ানোই প্রকৃত দেশপ্রেম। আজ জাতির সামনে একটাই প্রশ্ন আমরা কি আবার ইতিহাসের ভুল পথে হাঁটতে চাই, নাকি দেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে চাই!
