ড. ইউনূসের অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডাদেশ হওয়ার পর নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৭ই নভেম্বর, সোমবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এই আদালত কারসাজিপূর্ণ, পক্ষপাতদুষ্ট এবং রাজনৈতিকভাবে পরিচালিত।
ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “অভিযোগ সত্য হলে এগুলো হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) উপস্থাপন করা হোক, কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের তো সে সাহস নেই।”
জুলাই দাঙ্গা চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের তথাকথিত অভিযোগে শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে মৃত্যুদণ্ডের রায় শুনিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আর ‘রাজসাক্ষী’ হওয়া অপর আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দেওয়া হয়েছে ৫ বছরের সাজা।
বিবৃতিতে শেখ হাসিনা জানান, একটি অনির্বাচিত ও অসাংবিধানিক সরকার তাঁর বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে যাদের কোন গণতান্ত্রিক বৈধতা নেই। ইউনূস সরকারের ভেতরে থাকা প্রভাবশালী উগ্রপন্থী শক্তি বাংলাদেশের সর্বশেষ নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই রায় ব্যবহার করছে।
মৌলবাদী শক্তির মূল উদ্দেশ্য আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখা হাসিনা বলেন, সাধারণ মানুষ এই ধরনের রাজনৈতিকভাবে সাজানো রায় কখনই মেনে নেবে না। এটি গণতান্ত্রিক অধিকারকে ক্ষুণ্ন করার প্রচেষ্টা।
শেখ হাসিনা তাঁর বিবৃতিতে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের সরকারবিরোধী দাঙ্গায় সহিংসতা সম্পর্কিত সকল অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে উপস্থাপিত অডিও–ট্রান্সক্রিপ্টসহ যেসব প্রমারণের কথা বলা হচ্ছে তা খণ্ডিত, অপ্রাসঙ্গিক এবং বিশ্বাসযোগ্যতার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। সহিংসতার সময় মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছিল, রাজনৈতিক নেতৃত্ব নয়।
জুলাইয়ের দাঙ্গা দমনে ‘১৪০০ জনকে হত্যায়’ উস্কানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ দেওয়ার, সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবলিটি এবং জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয় শেখ হাসিনা ও বাকি দুই আসামিদের বিরুদ্ধে। তার মধ্যে চার অভিযোগে শেখ হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করে ট্রাইব্যুনাল।
আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল বিবৃতিতে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। তিনি নিজের পছন্দের আইনজীবীও নিয়োগ করতে পারেননি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আইসিটি কোনোভাবেই আন্তর্জাতিক বা নিরপেক্ষ নয় এবং রায় আগে থেকেই নির্ধারণ করে রাখা হয়েছিল।”
২০২৪ সালের সহিংসতাকে জাতীয় ট্র্যাজেডি উল্লেখপূর্বক শেখ হাসিনা বলেন, শুরুতে ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে দেওয়া হয়েছিল এবং তাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়। তবে পরবর্তী সময়ে সরকারি স্থাপনা, থানা, মানুষের বাড়িঘর, অস্ত্রাগার ও যোগাযোগ অবকাঠামোতে হামলার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পুলিশ সদস্যদের মেরে পুড়িয়ে লাশ ঝুলিয়ে রাখার অসংখ্য ঘটনা ঘটানো হয়। পরে পুলিশ সদস্যরা বাহিনীর জন্য প্রযোজ্য প্রবিধান অনুসারে আত্মরক্ষার্থে যথযথ ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হন।
আওয়ামী লীগকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করতেই আইসিটি ওই রায় দিয়েছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়।
দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের সমর্থকদের ওপর হামলার কোন বিচার হয়নি, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী ও নারীর অধিকার গুরুতর হুমকির মুখে, মৌলবাদী শক্তি প্রশাসনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করছে।
একই সঙ্গে সাংবাদিকদের ভয় দেখানো, আটক ও নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে, অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে, নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং আওয়ামী লীগকে নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ রয়েছে ওই বিবৃতিতে।
