নির্বাচন ঘনিয়ে আসতেই অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তোলপাড় চলছে।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম–এর সাবেক তিন ব্যক্তিগত সহকারী
মোয়াজ্জেম হোসেন, তুহিন ফারাবী ও মাহমুদুল হাসান—এর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ ও অস্বাভাবিক ব্যাংক লেনদেনের অভিযোগে গত ৪ মে দুদক অনুসন্ধান শুরু করে।
কিন্তু ছয় মাস পার হলেও তদন্তের দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।
দুদক সূত্র জানায়— প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহে বাধা , অভিযুক্তদের অসংগতি ও দ্বিমুখী তথ্য, এবং অদৃশ্য রাজনৈতিক চাপ তদন্তকে ধীর করে দিয়েছে। এ সময়ের মধ্যে তিনবার তদন্ত কর্মকর্তা বদল করতে হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদেও সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ প্রকাশ্যে এলে মোয়াজ্জেম হোসেন ও তুহিন ফারাবীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে দুদক কার্যালয়ে রাজনৈতিক নেতাদের ঘনঘন উপস্থিতি তদন্তকে আরও জটিল করে তুলেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। কবে তদন্ত শেষ হবে—দুদক এখনও নির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি। বিশ্লেষকদের মতে, উপদেষ্টাদের এপিএসরা মূলত বলির পাঠা। উপদেষ্টারা মূলত তাদের দুর্নীতির কাজগুলো এই এপিএসদের দিয়েই করান।
এদিকে এনসিপির সাবেক কেন্দ্রীয় সংগঠক মুনতাসির মাহমুদ ফেসবুক লাইভে এসে দলটির মহাসচিব আখতার হোসেন, অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, এবং তার বড় ভাই মাহবুব আলমের বিরুদ্ধে গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন।
মুনতাসিরের দাবি অনুযায়ী— দেশজুড়ে পিপি নিয়োগে কোটি কোটি টাকা ঘুষ লেনদেন হয়েছে,
নরসিংদীর এক আইনজীবীকে পিপি করার বিনিময়ে ৫০ লাখ টাকা দাবির অভিযোগও তিনি উত্থাপন করেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ছাত্র উপদেষ্টাদের একটি অংশ “জুলাইকে বিক্রি করেছে”—
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ: ডিসি–ওসি বদলিতে প্রভাব খাটানো, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের নিয়োগে তদবির, এবং শত শত কোটি টাকার লেনদেন।
লাইভে মুনতাসির তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার ভাই মাহবুব আলমের বিরুদ্ধেও অভিযোগ তোলেন। তার দাবি—রেড ক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রভাব খাটানো এবং অর্থপাচারের মতো অভিযোগ রয়েছে। তিনি একটি কথোপকথনের অডিও প্রকাশ করেন, যদিও সেটির সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
নিজের জীবনের ঝুঁকির কথা জানালেন মুনতাসির
মুনতাসির বক্তব্যে জানান, এসব তথ্য প্রকাশ করায় তিনি জীবনের ঝুঁকিতে রয়েছেন। তিনি বলেন, তাকে ফলো করা হচ্ছে, বাড়িতে খোঁজ নেওয়া হয়েছে, এবং “একটি শক্তিশালী গোষ্ঠী” তাকে চুপ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “অভিযোগের সত্যতা যাই হোক, তদন্ত স্থবির হওয়ার ঘটনাই সবচেয়ে উদ্বেগজনক। অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর জনগণের যে আস্থা তৈরি হয়েছিল, এ ধরনের বিতর্ক সেটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তদন্ত সংস্থাগুলো যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারে, তবে যে পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা প্রশ্নের মুখে পড়বে।”
