গত ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আইসিটি আদালতে দেয়া রায়কে বিতর্কিত অসাংবিধানিক দাবী করে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের অর্ধশতাধিক সাংবাদিক একটি যৌথ বিবৃতি প্রদান করেছেন।
সেখানে উল্লেখ করেন- আমরা যুক্তরাজ্যে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশী সাংবাদিকবৃন্দ, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ICT) কর্তৃক গত ১৭ নভেম্বরের দেওয়া রায় সম্পর্কে আমাদের গভীর উদ্বেগ ও চরম উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছি।
এই রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাঁর অনুপস্থিতিতে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে যে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, তা বাংলাদেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশি প্রবাসীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ, হতাশা ও তীব্র শঙ্কা সৃষ্টি করেছে।
বৈধ ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে এই রায় আইনি আনুষ্ঠানিকতার আবরণে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার এক বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ নজীর স্থাপন করেছে। বিচারকার্য সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক দ্রুততা, স্বচ্ছতার মৌলিক অভাব এবং অভিযুক্তের মৌলিক আইনি অধিকার সম্পূর্ণ অস্বীকার করার কারণে এই রায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির কাছেও গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা লাভে ব্যর্থ হয়ে তীব্র সমালোচিত হয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছে: “এই বিচার এবং শাস্তি ন্যায্য বা ন্যায়সঙ্গত নয়। ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা প্রয়োজন, তবে মৃত্যুদণ্ড কেবল মানবাধিকার লঙ্ঘনকেই বাড়িয়ে তোলে। এটি চূড়ান্ত নিষ্ঠুর, অবমাননাকর এবং অমানবিক শাস্তি এবং কোনো বিচার প্রক্রিয়ায় এর স্থান নেই।” মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড সুনির্দিষ্টভাবে জোর দিয়েছিলেন যে আইসিটি-রস্বাধীনতার অভাব রয়েছে এবং এর রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত বিচার প্রক্রিয়ার ইতিহাস রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (HRW) এই উদ্বেগগুলিকে সমর্থন করে বলেছে: “সকল ফৌজদারি কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক ন্যায্য বিচারের মানদণ্ড পূরণ করতে হবে। এর অনুপস্থিতি এবং অনুপস্থিতিতে বিচার (Trial in absentia) ন্যায্য বিচারের অধিকারকে মৌলিকভাবে ক্ষুণ্ণ করে।”
এইচআরডব্লিউ আরও উল্লেখ করেছে যে শেখ হাসিনাকে নিজের পছন্দের আইনজীবী নিয়োগের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য নিযুক্ত আইনজীবীরা কার্যকরভাবে সাক্ষীদের জেরা করতে বা পাল্টা প্রমাণ উপস্থাপন করতে সক্ষম হননি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (OHCHR) মৃত্যুদণ্ড আরোপের বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছে: “আমরা সব পরিস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করি। এই রায় ভুক্তভোগীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত চিহ্নিত করে, কিন্তুন্যায়বিচার অবশ্যই ন্যায্য এবং নিরপেক্ষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।”
বৈশ্বিক মানবাধিকার সংস্থাগুলির এই ঐকমত্যপূর্ণ বিবৃতি ন্যায়বিচারের চরম রাজনৈতিকীকরণ এবং বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রীতিনীতির গভীর ক্ষয়ের বিষয়ে আমাদের উদ্বেগকেই শক্তিশালীভাবে সমর্থন করে।
আমাদের অবস্থান
আমরা এই প্রত্যয়ে ঐক্যবদ্ধ যে আইনের শাসন অবশ্যই কোনোপক্ষপাত ছাড়াই বজায় রাখতে হবে।
আমরা বিশ্বাস করি:
• ন্যায়বিচার অবশ্যই নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ এবং রাজনৈতিক বা সরকারি হস্তক্ষেপ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হতে হবে।
• প্রতিটি নাগরিক—রাজনৈতিক অবস্থান নির্বিশেষে—আন্তর্জাতিক আইনি মানদণ্ড অনুসারে একটি ন্যায্য, দৃঢ় এবং স্বচ্ছ বিচারেরঅধিকারী।
• এই মামলায় আইসিটি-র আচরণ মৌলিক আন্তর্জাতিক আইনি মানদণ্ড লঙ্ঘন করে এবং বাংলাদেশী বিচার বিভাগের স্বাধীনতার উপর জনগণের বিশ্বাসকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ করে।
আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন:
• শেখ হাসিনাকে আইনি প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত করা এবং তাঁর সম্মতি ছাড়াই সরকার-ঘনিষ্ঠ একজন আইনজীবীকে বাধ্যতামূলকভাবে নিয়োগ দেওয়া।
• আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য নিযুক্ত আইনজীবীদেরকে প্রতিনিধিত্ব করার চেষ্টা করার সময় ‘মব’ (জনতার) দ্বারা ভয় দেখানোরবিশ্বাসযোগ্য রিপোর্ট।
• আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের অনুপস্থিতি এবং ট্রাইব্যুনালেরপ্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতার দীর্ঘদিনের অভাব।
ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার জন্য আমাদের দাবি
এই বিচার ব্যবস্থার সংকটের মুখে আমরা বাংলাদেশ সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নিম্নলিখিত জরুরি দাবিগুলো জানাচ্ছি:
• স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত: আমরা জুলাই–আগস্ট ২০২৪-এর হত্যাকাণ্ড এবং সংশ্লিষ্ট সকল মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ, স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানাই।
• রায় বাতিল এবং পুনঃবিচার: বর্তমান রায়ের অবিলম্বে বাতিল এবং একটি সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ প্রক্রিয়ার অধীনে পুনঃবিচার শুরু করা, যা প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ন্যায্য বিচারের মানদণ্ড কঠোরভাবে মেনে চলে।
• বিচার বিভাগীয় সুরক্ষা: সকল প্রকার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ থেকে বিচার বিভাগকে অবিলম্বে ও সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষা দেওয়া।
• সমান আইনি অধিকার: সকলের জন্য সমান আইনি অধিকার নিশ্চিত করা, যার মধ্যে পছন্দের আইনজীবী নিয়োগ এবং বাধা ছাড়াই প্রমাণ উপস্থাপনের অবাধ স্বাধীনতা অন্তর্ভুক্ত।
• আইনের ভিত্তিতে রায়: সকল ভবিষ্যৎ রায় যেন শুধুমাত্রআইন, সত্য এবং যাচাইকৃত প্রমাণের ভিত্তিতে হয়—কোনো রাজনৈতিক চাপ, কুসংস্কার বা পক্ষপাতের ভিত্তিতে নয়।
আমরা গণতন্ত্র, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং আইনের শাসনের প্রতি অবিচলভাবে সমর্থন জানাই। ন্যায়বিচার যেকোনো জাতির প্রাণশক্তি; একটি রাষ্ট্র যখন তা পরিত্যাগ করে, তখন তা গভীর সংকটকেই টেনে আনে। বাংলাদেশ ও এর জনগণ এমন একটি সরকার এবং বিচার বিভাগ পাওয়ার যোগ্য যা এই পবিত্র নীতিগুলিকেসমুন্নত রাখে।
স্বাক্ষরিত:
১/ আবু মুসা হাসান – সাংবাদিক, যুক্তরাজ্য।
২/ শামীম চৌধুরী – সিনিয়র সাংবাদিক ,(সাবেক বিবিসি বাংলা )
৩/ সৈয়দ বদরুল আহসান , সাংবাদিক ,রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক
৪/ আশেকুন নবী চৌধুরী – সম্পাদক প্রটেক্ট বাংলাদেশ ও সাবেক প্রেস মিনিস্টার ,যুক্তরাজ্য
৫/ঊর্মি মাজহার – সিনিয়র সাংবাদিক ,লন্ডন,
৬/মাসুদা ভাট্টি – সিনিয়র সাংবাদিক, লন্ডন
৭/ সৈয়দ আনাস পাশা – সিনিয়র সাংবাদিক সম্পাদক সত্যবাণী।
৮/হামিদ মোহাম্মদ – সিনিয়র সাংবাদিক ,কবি ,লন্ডন
৯/ সুজাত মনসুর – সাংবাদিক কলামিস্ট গবেষক
১০/ দিলু নাসের – সাংবাদিক,কবি , ছড়াকার ,লন্ডন
১১/সামির মাহামুদ – সিনিয়র সাংবাদিক ,লন্ডন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিলেট জেলা প্রেসক্লাব
১২/ সাঈম চৌধুরী – সম্পাদক ,বিলেত
১৩/ আহাদ চৌধুরী বাবু- সিনিয়র সাংবাদিক,লন্ডন
১৪/ সুবাস দাশ – সিনিয়র সাংবাদিক ,লন্ডন
১৫/ সুশান্ত দাশ গুপ্ত- সম্পাদক ,প্রকাশক দৈনিক আমার হবিগঞ্জ
১৬/ মিল্টন রহমান – সিনিয়র সাংবাদিক , কবি
১৭/ তানভীর আহমেদ – প্রধান সম্পাদক, পলিটিকা নিউজ ,লন্ডন
১৮/ জুয়েল রাজ, সম্পাদক ও প্রকাশক “ব্রিকলেন”
১৯/মকিস মনসুর চেয়ারম্যান ইউকে বিডি টিভি ,ওয়েলস
২০/ কামরুল আই রাসেল -রিপোর্টার ,চ্যানেল এস লন্ডন
১৯/ আফজাল হোসেন – সম্পাদক আই নিউজ ,
২১/ ঈশা খান রাশেদ হেড অব মাল্টিমিডিয়া আই নিউজ ,
২২/আমিনুল হক ওয়েস – সিইও ফোকাস টিভি ,ম্যানচেস্টার
২৩/ আজিজুল আম্বিয়া – সভাপতি যুক্তরাজ্য অনলাইন প্রেসক্লাব,
২৪/ অপু রায় – গ্রাফিক্স ও ওয়েব পরিচালক, ব্রিকলেন নিউজ
২৫/ শাহ মোস্তাফিজুর রহমান বেলাল – সম্পাদক ব্রিজবাংলা নিউজ
২৬/ সুয়েজ মিয়া – সম্পাদক ভয়েজ অব টাওয়ার হ্যামলেটস
২৭/ অর্জুন মান্না, সম্পাদক NENEWS.NEWS
২৮/ সুমন দেবনাথ – সাংবাদিক কলামিস্ট হল হাম্বার
২৯/ প্রশান্ত দাশ সুশান্ত – সাংবাদিক , কলামিস্ট লন্ডন
৩০/ মোহাম্মদ কলন্দর তালুকদার – সাংবাদিক ব্রেডফোর্ড
৩১/ ড: আনিসুর রহমান আনিস – সাংবাদিক ,কলামিস্ট
৩২/ আব্দুল কাদের চৌধুরী মুরাদ- সিনিয়র সাংবাদিক লন্ডন
৩৩/ শিব্বির আহমদ শুভ – সাংবাদিক ,বার্ণলী , ম্যানচেস্টার ,
৩৪/ আশরাফুল ওয়াহিদ দুলাল – সাংবাদিক, বার্মিংহাম
৩৫/ নাহিদ আহমেদ জায়গীদার – ফটো জার্নালিস্ট,লন্ডন
৩৬/ শাহ শামীম আহমদ – সিনিয়র সাংবাদিক ,কবি
৩৭/ আবুল আজাদ – সাংবাদিক ,লিভারপুল
৩৮/ শেখ আছাবুর রহমান ছুরত – সিনিয়র সাংবাদিক ,লিভারপুল
৩৯/ জিয়া উদ্দিন তালুকদার – সাংবাদিক , বার্মিংহাম
৪০/ সৈয়দ সাদেক আহমেদ – সম্পাদক ৭১ নিউজ ,ওল্ডহ্যাম
৪১/ মিজানুর রহমাম মিরু- টিভি প্রেজন্টার
৪২/ মুকিত চৌধুরী সেতু – চেয়ারম্যান টিভি ২১
৪৩/ নুরুন্নবী আলী- সম্পাদিক এন এল ২৪
৪৪/ সৈয়দ হিলাল সাঈফ – সাংবাদিক ও ছড়াকার
৪৫/ আলী বেবুল – বিশেষ প্রতিনিধি, ম্যাপ টিভি
৪৬/ অভিষেক জিকু- সাংবাদিক ,লন্ডন
৪৭/ রুমি হক – সাংবাদিক ,স্বদেশ বিদেশ লন্ডন।
৪৮/ পলিন রহমান – সাংবাদিক কলামিস্ট
৪৯/ ড: জয়নুল আবেদিন রোজ – দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার
৫০/ সোহেল সরকার – দৈনিক সোনালী সময়
৫১/ সারোয়ার কবির – সাংবাদিক ,লন্ডন
৫২/ আবু সুফিয়ান – সাংবাদিক ,লন্ডন
৫৩/ জুবায়ের আহমেদ – সাবেক ডিবিসি প্রতিনিধি ,লন্ডন
৫৪/ আবু সাঈদ চৌধুরী সাদী – সাংবাদিক , লিভারপুল
যৌথ বিবৃতির পক্ষে বার্তা প্রেরক
জুয়েল রাজ
সম্পাদক ,প্রকাশক
“ব্রিকলেন”
