ব্রাজিলের বেলেমে চলমান COP30 জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ে বড় ধরনের বিরোধ দেখা দিয়েছে, এমন সময় যখন দুই সপ্তাহের এই বৈঠকটি শেষ হওয়ার কথা। বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কীভাবে দ্রুত কমানো হবে—এ প্রশ্নে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ব্যাপক মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে এবং আলোচনায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
সম্মেলনের ভেতরে কঠোর নিরাপত্তায় থাকা আলোচনাকক্ষে উপস্থিত প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, আলোচনা “খুব কঠিন” হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এক আলোচক বিবিসিকে বলেন, “অনেক লড়াই চলছে।” ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভাসহ যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ চায় সম্মেলনটি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারে আরও দ্রুত, আরও শক্তিশালী কাটছাঁটের প্রতিশ্রুতি দিক। এটি দুবাইয়ে COP28–এ গৃহীত জীবাশ্ম জ্বালানি “পর্যায়ক্রমে পরিত্যাগের” চুক্তিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেত।
তবে ব্রাজিলে প্রকাশিত প্রথম খসড়ায় তিনটি প্রস্তাব ছিল, যার মধ্যে সময়সূচির উল্লেখও ছিল। কিন্তু সর্বশেষ খসড়ায় জীবাশ্ম জ্বালানির কোনো উল্লেখই নেই।
ফ্রান্সের পরিবেশমন্ত্রী মনিক বারবুত অভিযোগ করেছেন, “রাশিয়া, ভারত, সৌদি আরবসহ তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো আলোচনার পথ আটকে দিচ্ছে। এখন আমাদের হাতে কিছুই নেই।”
সৌদি আরবকে এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য বিবিসি যোগাযোগ করলেও তারা সাড়া দেয়নি।
যুক্তরাজ্যের এনার্জি সিকিউরিটি ও নেট জিরো বিষয়ক সচিব এড মিলিব্যান্ড সাংবাদিকদের বলেন, লড়াই কঠিন ও হতাশাজনক হলেও যুক্তরাজ্য ৮০টির বেশি দেশের সমর্থিত জীবাশ্ম জ্বালানি পরিত্যাগের রোডম্যাপটি “বাঁচিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর”।
তিনি বলেন, “১০–২০ বছর পর মানুষ আমাদের এই প্রশ্ন করবে—আপনারা কি জলবায়ু সংকট দেখে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন? ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের কাছে দায় চাইবে।”
এদিকে অনেক উন্নয়নশীল দেশ বলছে, তারা জীবাশ্ম জ্বালানি বিষয়ক কঠোর সিদ্ধান্তে রাজি হওয়ার আগে ধনী দেশগুলোকে জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে।
পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলের প্রধান আইশা মরিয়ানা বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে নির্গমন কমাতে কাজ করছি—কিন্তু অভিযোজনের অর্থায়ন কোথায়? কে দেবে এই চেক?”
তিনি আরও বলেন, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অর্থায়ন চুক্তি সম্ভব নয় এবং এটি “বৃহৎ অংকের অর্থের” বিষয়।
সম্মেলন ভেন্যুর বাইরে জলবায়ু অধিকারকর্মীরা “ফসিল ফুয়েল আউট”, “স্টপ অ্যামাজন অয়েল”, এবং “১.৫ ডিগ্রি সংকটে: এখনই ব্যবস্থা নাও”—এই স্লোগান দিচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক যুব জলবায়ু আন্দোলনের মেক্সিকোর কর্মী শুরাবে মার্কাদো বলেন, “একটি ভালো ফলাফল মানে হবে বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য টিকে থাকার সুযোগ। আমাদের প্রজন্ম সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে।”
জলবায়ু অর্থায়নের ঘাটতি, বন রক্ষা, বিশেষত অ্যামাজন জঙ্গলে বনভূমি নিধন নিয়েও আলোচনায় বড় ধরনের মতবিরোধ আছে। নতুন খসড়ায় বন নিধন রোধে আগের ভাষা শিথিল করা হয়েছে।
“বন্যপ্রাণী ও আদিবাসীদের জন্য এটি হতাশাজনক,” বলেছেন ওয়ার্ল্ড অ্যানিম্যাল প্রোটেকশনের কর্মকর্তা কেলি ডেন্ট।
দুই সপ্তাহের সম্মেলনটি ইতোমধ্যে দুইবার স্থগিত হয়েছে। গত সপ্তাহে কয়েকজন বিক্ষোভকারী ভেন্যুতে ঢুকে “আমাদের বন বিক্রির জন্য নয়” লেখা ব্যানার তুলে ধরে। বৃহস্পতিবার আগুন লেগে ভেন্যুর ছাদে ছিদ্র হয়ে যায়, ১৩ জন ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হন এবং অন্তত ছয় ঘণ্টা সম্মেলন বন্ধ থাকে।
এবারের COP সম্মেলনে আদিবাসী প্রতিনিধিদের উপস্থিতি এবারই সর্বোচ্চ—যা প্রশংসিত হয়েছে। তবে জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ে অচলাবস্থা কাটাতে না পারলে সম্মেলনের ভবিষ্যৎ সাফল্য নিয়ে বড় প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
