দেশজুড়ে গত ১৫ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। এ সময় মোট ১৮২ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বিএনপির ১১৭ জন, আওয়ামী লীগের ৪৬ জনসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীও রয়েছেন।
গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত এক হাজার একশোর বেশি সহিংস ঘটনায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। যা গড়ে প্রতি মাসে ১১ জনের বেশি রাজনৈতিক কর্মীর মৃত্যু নির্দেশ করে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদর মব করে নির্যাতন ও খুন করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতায়। যা আন্তর্জাতিক মানবাধিককার সংগঠনগুলো নিন্দাও জানিয়েছে।
গত বছরের ৫ই আগস্টের পর সারাদেশে ৪৬০টির বেশি থানা ও ফাঁড়ি থেকে লুটের অস্ত্র দিয়ে এই সহিংসতা চলছে বলে অভিমত বিশ্লেষকদের।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আরও ৮০০–র বেশি সহিংস ঘটনায় ১১৯ জন নিহত এবং ৭ হাজার ৪২ জন আহত হয়েছেন। রাজনৈতিক সহিংসতার পাশাপাশি সামাজিক অপরাধও বেড়েছে, যা জনমনে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে।
পুলিশ, হাসপাতাল, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) এবং মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)-এর মাসিক অপরাধ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, থানা থেকে লুট হওয়া অনেক অস্ত্র এখনও উদ্ধার না হওয়ায় সেগুলোর অবৈধ ব্যবহার বাড়ছে। গত ১৫ মাসে ২৪৫টি গুলির ঘটনায় ৭৫ জনের বেশি মানুষ নিহত হন। আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক বিরোধ, সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, কমিটি গঠন নিয়ে ঝামেলা, চাঁদাবাজি ও স্থাপনা দখল—এসব কারণেই বেশির ভাগ হত্যাকাণ্ড ঘটছে।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশজুড়ে হত্যা, চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণসহ নানা অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকর পদক্ষেপের অভাবও এ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
রাজধানীর জুরাইনে সিএনজি অটোরিকশাচালক পাপ্পু শেখকে গুলি করে হত্যা করা হয়। যাত্রাবাড়ীতে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত হন জাকির হোসেন। কামরাঙ্গীরচরে মুদি দোকানি রকিকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
খুলনায় আদালত চত্বরে হাসিব হাওলাদার ও ফজলে রাব্বিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। মিরপুরে যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়াকে এবং চট্টগ্রামের লালদিঘিতে ইসমাইল হোসেনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এইচআরএসএস-এর নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম জানান, রাজনৈতিক সহিংসতার পাশাপাশি প্রকাশ্যে হত্যাকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের আগস্ট থেকে এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন অপরাধে ৩৯ হাজার ৯৩৬টি মামলা হয়েছে—গড়ে প্রতি মাসে প্রায় ৩ হাজার ৭২টি।
ডিএমপির উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, বেশির ভাগ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে এবং বাকি মামলাগুলোর তদন্ত চলছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা, অসহিষ্ণুতা এবং নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে।
এমএসএফ জানায়, নভেম্বর মাসেও অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বেড়েছে—মোট ৫৮টি লাশ উদ্ধার করা হয়, যেগুলোর অনেকগুলোই নদী-খাল, সড়কপথ বা পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া গেছে।
পুলিশের আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সর্বোচ্চ তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।
