পুলিশ সিলেটে ভারত থেকে চোরাই করা প্রায় ২,৪০০ বস্তা চিনি সহ সাতটি ট্রাক আটক করেছে এবং সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (দক্ষিণ) উপ-কমিশনার মোঃ সোহেল রেজা বলেন, গোয়েন্দা পুলিশ বৃহস্পতিবার সকাল ৫টার দিকে শাহ পরাণ থানাধীন পীরের বাজার এলাকায় একটি অভিযান চালিয়ে ছয়টি চিনি বোঝাই ট্রাক আটক করেছে এবং এ ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
তিনি বলেন, একই থানার বাইপাস রোড এলাকায় আরও একটি অভিযান চালিয়ে ভারত থেকে চোরাই করা চিনি বোঝাই আরেকটি ট্রাক আটক করেছে এবং একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
উপ-কমিশনার জানান, উদ্ধারকৃত চিনির ওজন ১,২০,০০০ কেজি এবং বাজার মূল্য প্রায় ১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে পুলিশ কর্মকর্তা জানান।
মানুষ কেন চিনি চোরাচালান করে?
লোকেরা কেন বাংলাদেশে চিনি চোরাচালান করে তার কয়েকটি কারণ আছে:
১. মূল্য পার্থক্য: প্রতিবেশী দেশগুলিতে, যেমন ভারত, চিনির দাম প্রায়ই কম থাকে কারণ সেখানে ভর্তুকি, কম উৎপাদন খরচ বা বিভিন্ন বাজার গতিশীলতা থাকে। চোরাকারবারিরা এই মূল্য পার্থক্যের সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যে চিনি বিক্রি করে লাভ করে।
২. উচ্চ চাহিদা: বাংলাদেশের জনসংখ্যা বড় এবং গৃহস্থালি ও শিল্পে ব্যাপকভাবে চিনি ব্যবহৃত হয়, যার ফলে চিনির উচ্চ চাহিদা থাকে। এই চাহিদা কখনও কখনও দেশীয় উৎপাদনের চেয়ে বেশি হয়, যা চোরাচালানের সুযোগ সৃষ্টি করে।
৩. অপর্যাপ্ত দেশীয় উৎপাদন: বাংলাদেশের দেশীয় চিনি উৎপাদন সবসময় তার প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারে না। এই ঘাটতি উচ্চ মূল্য এবং আমদানি করা চিনির চাহিদা বাড়িয়ে দেয়, যা চোরাকারবারিদের জন্য লাভজনক বাজার তৈরি করে।
৪. কর ফাঁকি: চোরাচালানের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা আইনি চিনি আমদানির উপর আরোপিত কর এবং শুল্ক এড়িয়ে যেতে পারে, যা চোরাই চিনি সস্তা এবং ক্রেতাদের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলে। এর ফলে চোরাকারবারিদের জন্য উল্লেখযোগ্য লাভের সুযোগ তৈরি হয়।
৫. দুর্বল সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ: বাংলাদেশ ও তার প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে ফাঁকাযুক্ত সীমান্তগুলি চোরাকারবারিদের অবৈধভাবে পণ্য পরিবহন করা সহজ করে তোলে। অপর্যাপ্ত সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি দুর্নীতিও চোরাচালানের কর্মকাণ্ডে অবদান রাখতে পারে।
৬. বাজার কৌশল: ব্যবসায়ীরা কখনও কখনও বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য চোরাচালানে জড়িত হয়। চিনি সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে তারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে পারে এবং দাম বাড়াতে পারে, যার ফলে তারা মূল্যবৃদ্ধি থেকে লাভবান হয়।
৭. বিধানগত পার্থক্য: দেশগুলির মধ্যে নিয়ম, মান এবং গুণগত নিয়ন্ত্রণের পার্থক্য চোরাই চিনিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি রপ্তানিকারক দেশে চিনির মান কম থাকে তবে এটি উৎপাদন করতে সস্তা এবং চোরাচালানের মাধ্যমে আরও লাভজনক হতে পারে।
চিনি চোরাচালান রোধ করতে বহুমুখী দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন, যার মধ্যে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করা, বাণিজ্য নীতি সমন্বয় করা, দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া অন্তর্ভুক্ত।