Close Menu

    সাবস্ক্রাইব

    সর্বশেষ খবরের সাথে আপডেট থাকুন।

    জনপ্রিয় সংবাদ

    বাঙালির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বাণী

    June 7, 2025

    শ্রমিকের ঈদ নেই, বোনাস নেই, ঈদের আগে শ্রমিকের কান্না, চলছে সরকারী বাহিনীর লাঠিপেটা

    June 7, 2025

    অবৈধ দখলদার ফ্যাসিস্ট ইউনূসের জাতির উদ্দেশে প্রদানকৃত নির্জলা মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিবৃতি

    June 7, 2025
    Facebook Instagram WhatsApp TikTok
    Facebook Instagram YouTube TikTok
    JoyBangla – Your Gateway to Bangladesh
    Subscribe
    • হোম পেইজ
    • বিষয়
      • দেশ (Bangladesh)
      • আন্তজাতিক (International)
      • জাতীয় (National)
      • রাজনীতি (Politics)
      • অথনীতি (Economy)
      • খেলা (Sports)
      • বিনোদন (Entertainment)
      • লাইফ স্টাইল (Lifestyle)
      • শিক্ষাঙ্গন (Education)
      • টেক (Technology)
      • ধম (Religion)
      • পরবাস (Diaspora)
      • সাক্ষাৎকার (Interview)
      • শিল্প- সাহিত্য (Art & Culture)
      • সম্পাদকীয় (Editorial)
    • আমাদের সম্পর্কে
    • যোগাযোগ করুন
    JoyBangla – Your Gateway to Bangladesh
    Home » অধ্যাপক আনিসুর রহমানের চিন্তা-চেতনা
    Education [ শিক্ষা ]

    অধ্যাপক আনিসুর রহমানের চিন্তা-চেতনা

    JoyBangla EditorBy JoyBangla EditorJanuary 10, 2025No Comments8 Mins Read
    Facebook WhatsApp Copy Link
    Share
    Facebook WhatsApp Copy Link

     সেলিম জাহান

    সদ্য প্রয়াত কিংবদন্তি শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ ও সমাজচিন্তক অধ্যাপক আনিসুর রহমানের সঙ্গে আমার পরিচয় তিনভাবে : এক. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি আমার প্রত্যক্ষ শিক্ষক ছিলেন, দুই. একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগে আমি তার সহকর্মী ছিলাম, ও তিন. অর্থনীতিবিদ হিসাবে তার চিন্তা-চেতনার সঙ্গে আমি পরিচিত ছিলাম। এ তিন পরিচয়ে তার সঙ্গে আমার জানাশোনা অর্ধশতাব্দীর-ঢাকায় এবং নিউইয়র্কে। সুতরাং শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ ও সমাজচিন্তক হিসাবে তার মেধা, মনন এবং চিন্তা-চেতনার সঙ্গে আমার নিবিড় উপলব্ধি ছিল, যে উপলব্ধি শুধু তার লেখা বা বলা থেকেই গড়ে ওঠেনি, বরং সেই উপলব্ধির একটি বিরাট অংশই বিভিন্ন সময়ে নিউইয়র্কে তার সঙ্গে আলাপচারিতা থেকে উৎসারিত।

    কেমন ছিলেন অধ্যাপক আনিসুর রহমান শিক্ষক হিসাবে? এক কথায়, অসাধারণ ও অতুলনীয়-শুধু জ্ঞানের গভীরতাতেই নয়, উপস্থাপনায়, বলনে, শব্দ-চয়নে। দেশে-বিদেশে নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির বহু শিক্ষক আমি দেখেছি, কিন্তু তার মধ্যে মাত্র অঙ্গুলিমেয় ক’জনকেই অধ্যাপক আনিসুর রহমানের সমপর্যায়ের বলে আমার মনে হয়েছে। অধ্যাপক আনিসুর রহমান ছিলেন একজন ব্যতিক্রমী শিক্ষক। একটা ঘটনার কথা বলি। আমরা যখন এমএ ক্লাসের ছাত্র, তখন তিনি আমাদের পড়াতে এলেন Capital Theory’র মতো প্রচণ্ড বিতর্কিত এক বিষয়। সে সময় Capital Theory বিষয়টিতে Cambridge-Cambridge controversy তুঙ্গে। Cambridge, এর সঙ্গে তুমুল বিতর্ক চলছে Cambridge, Massachusetts-এর।

    সেই সময়ে অধ্যাপক আনিসুর রহমান ‘পেঙ্গুইন’ প্রকাশনার ‘Capital Theory’ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত গ্রিক অর্থনীতিবিদ পিয়ার অ্যাঞ্জোলো গ্যারেগনেনির একটি প্রবন্ধের ওপর ভিত্তি করে আমাদেরকে পুরো Capital Theory পড়িয়ে দিয়েছিলেন। ৫০ বছর পরও আমার বিস্ময়ের ঘোর কাটেনি-আমার অর্থনীতির সতীর্থদের ক্ষেত্রেও সেটা সত্য হবে। কিন্তু তার চেয়েও বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, বহু বছর পর আজ থেকে বছর পনেরো আগে নিউইয়র্কে একবার আমি যখন এ কথা মনে করিয়ে দিলাম, তিনি এর কিছুই মনে করতে পারলেন না-না প্রবন্ধটির কথা, না এর ওপর ভিত্তি করে তার পড়ানোর ব্যাপারটি।

    তিনি পড়াতেন কিছুটা থেমে থেমে, বোঝা যেত যে, তার প্রতিটি শব্দ সযত্ন-চয়িত, তার গভীর চিন্তা-চেতনার ফসল। তার বাচনভঙ্গি ছিল চমৎকার এবং তিনি যে মৃদুভাষী, তা বোঝা যেত। শ্রেণির দুর্বলতম শিক্ষার্থীটিকে মনে রেখে তিনি পড়াতেন, তার সযত্ন প্রয়াস ছিল ওই ছেলেটি বা মেয়েটির কাছে পৌঁছে যেতে। তাই অত্যন্ত জটিল কোনো বিষয়কেও খুব সহজ করে বলার ও বোঝানোর এক অনন্যসাধারণ নৈপুণ্য ছিল তার। অত্যন্ত নমিত হয়ে বলি, আমার শিক্ষকতা জীবনে অধ্যাপক আনিসুর রহমানের এই অতুলনীয় পথই আমি অনুসরণ করার চেষ্টা করছি-কতটা সফল হয়েছি, সেটা আমার শিক্ষার্থীরা বলতে পারবে।

    পাঠ্যক্রমে নতুন নতুন সৃজনশীল বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার জন্য অধ্যাপক আনিসুর রহমান নিত্য প্রয়াসী ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ ক্লাসের পাঠ্যক্রমে তিনি সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি বলে একটি পত্রের সূচনা করেছিলেন। সে পত্র আমার যেসব সতীর্থ নিয়েছিলেন, যার মধ্যে আমার বন্ধু সতীর্থ লেখক-গবেষক মহিউদ্দীন আহমেদও আছেন, তারা বলতে পারবেন কত যত্নের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের নিয়ে তিনি সে পত্রের পাঠ্যসূচি তৈরি করেছিলেন। তার দপ্তরে তাদের অবারিত আসা-যাওয়া ছিল, তার ব্যক্তিগত টাইপরাইটার তিনি উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন তার শিক্ষার্থীদের জন্য। অর্থনীতির প্রায়োগিক ব্যাপারে তার উৎসাহ ছিল প্রচুর; কিন্তু তিনি বিশ্বাস করতেন, যে কোনো বিষয়ের তাত্ত্বিক দিগন্তের প্রসার না ঘটলে সে বিষয়টি স্থবির হয়ে পড়ে। অন্যান্য বিবেচনার সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়টিও অধ্যাপক আনিসুর রহমানকে উদ্বুদ্ধ করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাত্ত্বিক অর্থনীতি বিভাগটির সূচনা করতে। অনেকের হয়তো মনে নেই যে, পাকিস্তানের ইসলামাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়েরও তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা বিভাগীয় প্রধান। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সে বিভাগেরই প্রথম স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী।

    শিক্ষক এবং বিভাগীয় প্রধান হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনিসুর রহমান কিছু যুগান্তকারী কাজ করেছিলেন। যেমন, তিনি বুঝেছিলেন, ছাত্রদের জ্ঞানস্পৃহা জাগাতে হলে তাকে কাজ শুরু করতে হবে প্রথম বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে। এ বোধ থেকেই তিনি ব্যাষ্টিক অর্থনীতি পড়াতে শুরু করলেন প্রথম বর্ষেই। অধ্যাপক এম এম আকাশ সম্ভবত সেই শ্রেণিতে ছিলেন। প্রথম দিনেই অধ্যাপক আনিসুর রহমান সেই ব্যতিক্রমী কথাটি বললেন, তার পত্রে কোনো পাঠ্যবই নেই।

    সে সময়ে অর্থনীতির ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে এক ধরনের অস্বাস্থ্যকর সমীহের সম্পর্ক ছিল। সেটা ভাঙার জন্য অধ্যাপক আনিসুর রহমান প্রায়ই তার শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে খেতে যেতেন। মনে আছে, ১৯৭২ সালে তার সঙ্গে আমার প্রথম যখন দেখা হয়, তিনি তখন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য। শোনা গেল, পরিকল্পনা কমিশনের দু’জন সদস্য বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’একজন ছাত্রের সঙ্গে কথা বলতে চান। সেই সূত্রেই ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে মধ্যাহ্নভোজের সময়ে আমি তাকে এবং অধ্যাপক মুশাররফ হোসেনকে প্রথম দেখি। যতদূর মনে পড়ে, আমার সঙ্গে ছিল আমার সতীর্থ বন্ধু আবদুল্লাহ শিবলী।

    সমীহের পরিপ্রেক্ষিতে ‘শিক্ষক কোনো ভুল করতে পারে না’-এ আপ্তবাক্যটিও তিনি ভেঙে দিলেন। একবার শ্রেণিকক্ষে অর্থনীতি তত্ত্বের কোনো একটি ছবি আঁকার ব্যাপারে তিনি একটি ভুল করেছিলেন। পরে শিক্ষার্থীরা কার্জন হলে একটি নাটকের পর তার আঁকা ছবির ভুল ধরিয়ে দিলে তিনি তা সঙ্গে সঙ্গেই মেনে নিয়েছিলেন।

    বিভাগীয় প্রধান হিসাবে অধ্যাপক আনিসুর রহমান অর্থনীতি পাঠ্যসূচি এবং পাঠ-প্রণালির খোলনলচে বদলে দিতে চাইলেন। আমি তখন বিভাগের তরুণ এক প্রভাষক। ‘কার্যকর পাঠ্যসূচি এবং শিক্ষণপ্রণালি’ বলে অর্থনীতির পাঠ্যসূচির সংস্কারের জন্য তিনি একটি পর্ষদ গঠন করে দিয়েছিলেন। আমাকে তিনি করে দিলেন তার সভাপতি। বহু খেটেখুটে আমরা একটি সংস্কার প্রস্তাবমালা তৈরি করে দিয়েছিলাম। কিছু কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আনলেও প্রয়োজনীয় সংস্কার সেখানে করা হয়নি। বহু পরে আমাদের গল্পকালে তিনি সে ব্যাপারে তার মনোভঙের কথা বলেছিলেন। তবে তিনি এটাও আমাকে বলেছিলেন যে, পরবর্তী সময়ে শিক্ষা বিষয়ে তার চিন্তা-চেতনার বড় ভিত্তি ছিল তার শিক্ষকতা সময়ের উপলব্ধি ও অভিজ্ঞতা।

    ষাটের দশকে অধ্যাপক আনিসুর রহমান ছিলেন তৎকালীন পাকিস্তানি অর্থনীতির এক প্রতিবাদী কণ্ঠ। ষাটের দশকের শেষের দিকে পাকিস্তানের চতুর্থ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছিল। তখন প্রথা ছিল, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরির সময়ে তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের একটি দল একটি স্বতন্ত্র নিরপেক্ষ প্রতিবেদন তৈরি করবে পাকিস্তান অর্থনীতির ওপর। সেবারে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতিবিদরা সিদ্ধান্ত নিলেন, তারা একটি পৃথক প্রতিবেদন তৈরি করবেন। যে দলটি এ কাজটি করেছিল, তার অন্যতম সদস্য ছিলেন অধ্যাপক আনিসুর রহমান।

    তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য এবং ‘দ্বি-অর্থনীতির’ অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন অধ্যাপক আনিসুর রহমান। ‘ছয়-দফা’ প্রণয়নে এদেশের অন্যান্য অর্থনীতিবিদের মতো অধ্যাপক আনিসুর রহমানেরও বিশিষ্ট ভূমিকা ছিল। তৎকালীন পাকিস্তানের দু’অংশের মধ্যে বৈষম্য এবং ‘দ্বি-অর্থনীতি’ তত্ত্বের ওপর তখন তিনি লিখেছেন সে সময়ে অধ্যাপক রেহমান সোবহান এবং হামিদা হোসেন সম্পাদিত জনপ্রিয় সাপ্তাহিকী ‘ফোরামে’। ষাটের দশকে আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল উজ্জ্বল।

    ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিনি গুরুত্বপূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। অধ্যাপক রেহমান সোবহান এবং তিনি একত্রে সীমান্ত অতিক্রম করেছিলেন, যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশ অস্থায়ী সরকারে। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তার বহুমুখী অবদান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সাহায্য করেছে। আমাদের স্বাধীনতার পর অধ্যাপক আনিসুর রহমান প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হয়েছিলেন। সে পদে যোগদানে তার বেশ কিছুটা অনীহা ছিল-আসলে তিনি শিক্ষকতাতেই থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরিকল্পনার মতো বিষয়ে তার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা অপরিহার্য, এমন যুক্তিতে তাকে প্রায় ধরে-বেঁধেই পরিকল্পনা কমিশনে নিয়ে আসা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তিনি পরিকল্পনা কমিশনে যোগ দিয়েছিলেন সম্ভবত এই ভেবে যে, এখানে বসে বাংলাদেশের জন্য একটি সমাজতান্ত্রিক পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরি করার তিনি সুযোগ পাবেন।

    কিন্তু পরিকল্পনা কমিশনে কাজ করতে গিয়ে অধ্যাপক আনিসুর রহমান তিনটি দ্বন্দ্বের মুখোমুখি হন। প্রথমত, যদিও সমাজতন্ত্র বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির একটি অন্যতম নীতি হিসাবে গৃহীত হয়েছিল, কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, রাষ্ট্রযন্ত্রে সমাজতন্ত্র বিষয়ে একটি ধোঁয়াটে ধারণার সৃষ্টি করা হয়েছে। অধ্যাপক আনিসুর রহমান অত্যন্ত বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলেন নানাভাবে ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র’, ‘মুজিববাদ’ ইত্যাদি ধারণা উত্থাপন করে সমাজতান্ত্রিক পরিকল্পনাকে দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এটা তাকে ব্যথিত করেছিল।

    দ্বিতীয়ত, সমাজতান্ত্রিক কাঠামো অর্জনের লক্ষ্যে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য অধ্যাপক আনিসুর রহমান ‘কৃচ্ছ্রসাধন’, ‘গ্রাম কর্মী বাহিনী’, ‘ভূমি সংস্কার’, ‘বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভরতা হ্রাস’ ইত্যাদি বিষয়ে একাধিক প্রস্তাব করেছিলেন। তার কিছু নাকচ হয়ে যায়, কিছু সম্পর্কে এক ধরনের নীরবতা অবলম্বন করা হয়। এর ফলে একদিকে তিনি যেমন হতাশ হন, তেমনি সমাজতন্ত্র বিষয়ে সরকারের উচ্চতম নেতৃত্বের অঙ্গীকার ও সদিচ্ছা সম্পর্কেও তিনি সন্দিহান হয়ে পড়েন।

    তৃতীয়ত, ক্রমান্বয়ে তিনি বুঝতে পারেন, সংসদীয় গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে সমাজতন্ত্রের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। এবং সরকারে নেতৃত্বে এবং প্রশাসনিক কাঠামোয় সমাজতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাস, উপলব্ধি ও অঙ্গীকারের ঘাটতি আছে। এমন একটি ব্যবস্থায় সমাজতান্ত্রিক পরিকল্পনা সম্ভব নয়। ১৯৭৩ সালের প্রথমদিকে ঢাকায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সম্মেলনে অধ্যাপক আনিসুর রহমান ‘Priorities and methods of socialist development in Bangladesh’ নামে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ প্রবন্ধে তিনি অত্যন্ত খোলাখুলিভাবেই বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক উন্নয়নের সমস্যাগুলো আলোচনা করেন এবং এ থেকে উত্তরণের কিছু দিকনির্দেশনা দেন।

    অধ্যাপক আনিসুর রহমান মনেপ্রাণে চাইতেন, মুক্তিযুদ্ধে জাতির যে শক্তি মুক্ত হয়েছে, তা দেশ গড়ার কাজে ব্যবহৃত হোক। সে জন্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে নানা ব্রিগেড তৈরি করে তাদের গ্রামে নিয়ে গিয়ে গ্রামোন্নয়নের কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করেন তিনি। এ কর্মসূচির মধ্যে ছিল এসব ব্রিগেডকে শিক্ষা ও কৃষি উন্নয়নের কাজে লাগানো। এ লক্ষ্যে সাভারের কাছে জিরাব ও এনায়েতপুর গ্রামে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা যুক্ত হয়েছিল। অধ্যাপক আনিসুর রহমানের এ উদ্যোগ একদিকে নন্দিত এবং অন্যদিকে নিন্দিতও হয়েছিল। এবং সেই সঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনে এক ধরনের অস্বস্তিও তৈরি করেছিল। শেষ পর্যন্ত অধ্যাপক আনিসুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় ফিরে এলেন।

    ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে অধ্যাপক আনিসুর রহমান দেশ ছাড়েন এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হন। সেখানে জনগণের অংশগ্রহণমূলক উদ্যোগের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে তার সৃজনশীল গবেষণা ও কাজ বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সেই ব্যতিক্রমধর্মী কাজের প্রয়োগ আমি পরবর্তী সময়ে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে দেখেছি। প্রথাগত দারিদ্র্য পরিমাপ পদ্ধতি ও দারিদ্র্য নিরসনের প্রথাগত নীতিমালার তিনি বিরোধী ছিলেন। তীব্র সমালোচনা করতেন ‘দারিদ্র্য রেখা’ ধারণার। আমাকে একবার বলেছিলেন, ‘এ হচ্ছে পশুর খোঁয়াড়ে পশু বিভাজনের পদ্ধতির মতো, একটি দড়ির এ পাশে থাকলে তুমি দরিদ্র, ওপাশে থাকলে তুমি দরিদ্র নও।’ একইভাবে মানব উন্নয়ন সূচকেরও তীব্র সমালোচক ছিলেন অধ্যাপক আনিসুর রহমান। সে নিয়ে আমাদের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা ও বিতর্ক হয়েছে। বহু বিষয়ে আমরা একমত হতে পারিনি। কিন্তু তার মেধা, মনন ও জ্ঞানের কাছে আমি প্রতিনিয়ত নমিত হই।

    রবীন্দ্রসংগীতের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা শুধু সংগীতের প্রতি তার ভালোবাসার প্রতিফলন নয়; সে সম্পৃক্ততা তার সত্য, সুন্দর ও জীবনের প্রতি ভালোবাসার বোধ থেকে উৎসারিত। সেটা তার গান নির্বাচন এবং গায়কীর মধ্যেই পরিস্ফুট। আমরা যখন অধ্যাপক আনিসুর রহমানের গাওয়া ‘আমার যে দিন ভেসে গেছে চোখের জলে’, কিংবা ‘বাজাও আমারে বাজাও’, কিংবা ‘বাজাও আমারে বাজাও’ শুনি, তখনই আমরা এটা বুঝতে পারি। বিশুদ্ধতার প্রতি, উপলব্ধির গভীরতার প্রতি তার যে আকর্ষণ, সেটা তার গায়কী ঢঙে বড় পরিষ্কার। এসবই অধ্যাপক আনিসুর রহমানের চিন্তা-চেতনার অংশ।

    চিন্তা-চেতনার আঙ্গিকে অধ্যাপক আনিসুর রহমান ব্যক্তির চেয়ে মানুষের যূথবদ্ধতাকে, রাষ্ট্রের চেয়ে সমাজকে, মানুষের বঞ্চনার চেয়ে তার ক্ষমতায়নকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রথাগত চিন্তার বদলে ব্যতিক্রমী ভাবনা, মানুষের প্রতি মমতা, বোধ উৎসারিত মনন সবসময়েই তার চিন্তা ও কাজকে চালিত করেছে। আমার বড় মনে হয়-‘এ পৃথিবী একবার পায় তারে, পায় নাকো আর’।

    সেলিম জাহান : ভূতপূর্ব পরিচালক, মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগ, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।

    Share. Facebook WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপোশাকশিল্পের সংকট নিরসন জরুরি
    Next Article কবে শিক্ষার্থীরা সব বই পাবে, শিক্ষা উপদেষ্টা তা জানেন না
    JoyBangla Editor

    Related Posts

    পাঠ্যপুস্তক কেলেঙ্কারি: ৩৫৫ কোটি টাকা লুটে নিল ১৭টি ছাপাখানা!

    May 24, 2025

    স্লোগানে, গানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমাবেশ শুরু

    May 16, 2025

    দেশের একমাত্র নারী ভিসি অপসারিত: মৌলবাদী শিক্ষাব্যবস্থায় ইনক্লুসিভিটির নতুন সংজ্ঞা

    May 15, 2025

    বিনামূল্যে পাঠ্যবই ছাপানো ২০২৫: দেড় হাজার কোটি টাকা সিন্ডিকেটের পকেটে

    May 5, 2025
    Leave A Reply Cancel Reply

    সম্পাদকের পছন্দ

    সংসদ নির্বাচন আগামী এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো দিন: প্রধান উপদেষ্টা

    June 6, 2025

    একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার!

    June 6, 2025

    ঈদ উল আজহা উৎসবের সামাজিক বৈষম্য

    June 6, 2025

    ৭১-এর বুকে আঘাত করে বসেছে যে বাংলাদেশ বিরোধীরা

    June 5, 2025
    • Facebook
    • Twitter
    • Instagram
    • TikTok
    মিস করবেন না
    Politics

    বাঙালির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বাণী

    By JoyBangla EditorJune 7, 20250

    আজ ঐতিহাসিক ৭ জুন, ছয় দফা দিবস। ছয়দফা বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণের তথা স্বাধিকার আন্দোলনের সনদ যা…

    শ্রমিকের ঈদ নেই, বোনাস নেই, ঈদের আগে শ্রমিকের কান্না, চলছে সরকারী বাহিনীর লাঠিপেটা

    June 7, 2025

    অবৈধ দখলদার ফ্যাসিস্ট ইউনূসের জাতির উদ্দেশে প্রদানকৃত নির্জলা মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিবৃতি

    June 7, 2025

    প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে বিএনপিতে ‘তীব্র ক্ষোভ’, নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক সংকটের আশঙ্কা

    June 7, 2025

    সাবস্ক্রাইব

    সর্বশেষ খবরের সাথে আপডেট থাকুন।

    About Us
    About Us

    মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও লালন করে দেশ ও বিদেশের খবর পাঠকের কাছে দুত পৌছে দিতে জয় বাংলা অঙ্গিকার বদ্ধ। তাৎক্ষণিক সংবাদ শিরোনাম ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পেতে জয় বাংলা অনলাইন এর সঙ্গে থাকুন পতিদিন।

    Email Us: info@joybangla.co.uk

    Our Picks

    সংসদ নির্বাচন আগামী এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো দিন: প্রধান উপদেষ্টা

    June 6, 2025

    একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার!

    June 6, 2025

    ঈদ উল আজহা উৎসবের সামাজিক বৈষম্য

    June 6, 2025

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.