মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে বিনিয়োগ ও অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বৃহস্পতিবার ২৩ জানুয়ারি ডিএমপির যাত্রাবাড়ী থানার মাতুয়াইলের মোঘলনগর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি)।
গ্রেপ্তাররা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানার মেরকুটা এলাকার গোপাল চন্দ্র সেনের ছেলে পাপ্পু কুমার সেন (২৮) এবং ভোলার চর ফ্যাশন থানার আমিনাবাদ এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে মো. কাওসার (২৭)। অভিযানে তাদের কাছ থেকে অপরাধমূলক কাজে ব্যবহৃত ১ হাজার ১৫০টি সিম কার্ড ছাড়াও একটি হার্ডডিস্ক ও মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য আলামত জব্দ করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তাররা পরস্পর যোগসাজশে বেশি টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে কোনোরকম ছবি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও এনআইডি কার্ড ছাড়াই অবৈধভাবে মোবাইল সিমকার্ড সংগ্রহ করে। পরে সেই নম্বরের সিমগুলো তারা বিভিন্ন টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপসহ অন্যান্য মাধ্যমে দেশি-বিদেশি ক্লায়েন্টদের কাছে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করত।
পরবর্তীতে দেশি-বিদেশি আসামিরা ওই অবৈধ মুঠোফোন নম্বর দিয়ে টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ খুলে সেখানে বিভিন্ন ব্যক্তিদের যুক্ত করে তাদের অধিক মুনাফা দেয়ার লোভ দেখিয়ে বিনিয়োগের নানা অফার দিতো। যেই ফাঁদে পা দিয়ে অধিক মুনাফার আশায় অনেকেই আসামিদের তৈরি অ্যাপে নিজেদের নাম, মোবাইল নম্বর ও এনআইডি কার্ডের তথ্য দিয়ে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতো।
সম্প্রতি এমন প্রতারণার শিকার হয়ে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা খুইয়ে মামলা করেন এক ভুক্তভোগী। মামলার এজাহারে বাদী জানান, নিজের ফেসবুক আইডি ব্যবহারের সময় তিনি আন্তর্জাতিক স্টক মার্কেটের একটি বিজ্ঞাপন দেখতে পেয়ে সেখানে থাকা লিংকে প্রবেশ করেন। এর পরপর অজ্ঞাত একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে তার ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে কিছু মেসেজ পাঠানোর পাশাপাশি কয়েকটি টাস্ক দেয়া হয়। সেই সঙ্গে বাদীর হোয়াটসঅ্যাপে একটি অ্যাকাউন্ট খোলার নির্দেশনা আসে।
পরে ভুক্তভোগী নির্দেশমতো প্রতারক চক্রের অ্যাপসের লিংকে প্রবেশ করে তার নাম, এনআইডি ও মোবাইল নম্বর দিয়ে অ্যাকাউন্ট তৈরি করলে সেখানে একটি ডিজিটাল ওয়ালেট তৈরি হয়। এরপর আসামিরা বাদীকে তাদের দুটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত করে নেয়, যেখানে বাদীর পরিচিত অনেকেই যুক্ত ছিল এবং ওই গ্রুপটিতে ট্রেডিং বিষয়ে নানা কথাবার্তা হতো। পরবর্তীতে আসামিদের কথায় বিশ্বাস করে বিভিন্ন সময়ে বাদী একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সর্বমোট ১৩ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৬ টাকা বিনিয়োগ করেন।
তবে নির্দিষ্ট সময় পর ডিজিটাল ওয়ালেটে প্রদর্শিত লভ্যাংশ ও বিনিয়োগ করা অর্থ ফেরত চাইলে আসামিরা বাদীকে আরও বিনিয়োগ করতে বলেন। একপর্যায়ে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে বুধবার ২২ জানুয়ারি ধানমন্ডি থানায় মামলা মামলা করেন ভুক্তভোগী।
পুলিশ জানায়, আসামিরা ভুক্তভোগীদের কোনো মুনাফা না দিয়ে কৌশলে কোটি কোটি টাকা প্রতারণা করে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে হাতিয়ে অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে। ওই অ্যাপসটি চীন থেকে পরিচালিত হয় বলেও প্রাথমিকভাবে জানা যায়। এ ক্ষেত্রে দেশে অবস্থানরত আসামিরা অবৈধ মোবাইল নম্বর অধিক লাভে বিদেশে অবস্থানরত আসামিদের কাছে বিক্রি করে পুরো অপরাধ কার্যক্রম সংঘটনে সহায়তা করে থাকে।