উদ্ধারকর্মীরা নদী থেকে ১৯টি ‘দেহ’ উদ্ধার করেছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম খবর দিলেও কর্তৃপক্ষ হতাহতের কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি।
মাঝ আকাশে মার্কিন সেনা হেলিকপ্টারের সঙ্গে সংঘর্ষের পর ওয়াশিংটন ডিসির পটোম্যাক নদীতে আছড়ে পড়া আমেরিকান এয়ারলাইন্সের যাত্রীবাহী বিমানটি যাত্রী ও ক্রু মিলিয়ে ৬৪ জনকে বহন করছিল। উদ্ধারকর্মীরা নদী থেকে ১৯টি ‘দেহ’ উদ্ধার করেছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম খবর দিলেও কর্তৃপক্ষ হতাহতের কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি।
জমাট ঠাণ্ডা পানিতে আরোহীদের খোঁজে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উদ্ধার ও অনুসন্ধানকারী দলগুলো।
দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। নিকটস্থ রোনাল্ড রিগান ওয়াশিংটন ন্যাশনাল এয়ারপোর্টে সব ফ্লাইটের উড্ডয়ন বন্ধ রাখা হয়েছে, জানিয়েছে বিবিসি।
কী ঘটেছিল?
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) বলছে, বুধবার স্থানীয় সময় রাত ৯টার দিকে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ৫৪৩২ ফ্লাইটটি রোনাল্ড রিগান ওয়াশিংটন ন্যাশনাল এয়ারপোর্টে নামার পথে মাঝ আকাশেই যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়।
নামে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের হলেও, ফ্লাইটটি পরিচালনা করছিল পিএসএ এয়ারলাইন্স।
আমেরিকান এয়ারলাইন্সের তথ্য অনুযায়ী, যাত্রীবাহী এ বোম্বার্ডিয়ার সিআরজে৭০০ বিমানটি ৬০ যাত্রী ও ৪ ক্রু নিয়ে কানসাসের উইচিটো থেকে রওনা হয়েছিল।
বিমানটি যে হেলিকপ্টারের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় সেটি ছিল সিকোর্স্কি এইচ-৬০, এটি উড়েছিল ভার্জিনিয়ার ফোর্ট বেলভয়ার থেকে। হেলিকপ্টারটিতে তিন মার্কিন সেনা ছিল বলে জানিয়েছে সিবিএস।
এফএএ বলেছে, তারা ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট সেইফটি বোর্ডকে (এনটিএসবি) সঙ্গে নিয়ে এ বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে নেমেছে।
হতাহতের কী খবর?
হতাহতের বিষয়ে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কিছু জানানো হয়নি। তবে সিবিএসের প্রতিবেদনে পটোম্যাক নদী থেকে এখন পর্যন্ত ১৮টি দেহ উদ্ধার করার কথা বলা হয়েছে।
মার্কিন গণমাধ্যমের শুরুর দিকের খবরে যাত্রীবাহী বিমানটিকে নদীতে দ্বিখণ্ডিত অবস্থায় এবং হেলিকপ্টারটি উল্টে পড়ে থাকতে দেখা যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
পুলিশের একাধিক নৌযানের সহায়তায় পুলিশ ও দমকল বাহিনী নদীর জমাট ঠাণ্ডা পানিতে জীবিতদের খোঁজে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে বলে সিবিএসের খবরে বলা হয়েছে।
এই উদ্ধার তৎপরতা নদীর কাছাকাছি রোনাল্ড রিগান এয়ারপোর্ট থেকেও দেখা যাচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা যা বলছেন
বিমানবন্দরের পাশ দিয়ে যাওয়া জর্জ ওয়াশিংটন পার্কওয়েতে গাড়ি চালানোর সময় যাত্রীবাহী বিমানটির দুর্ঘটনায় পড়া দেখেন আরি শুলমান।
এনবিসি ওয়াশিংটনকে তিনি বলেন, প্রথমদিকে বিমানটির গতিবিধি স্বাভাবিকই মনে হচ্ছিল, হঠাৎ বিমানটি ডানদিকে অনেকখানি কাত হয়ে যায়।
“বিমানটির নিচে আগুনের স্ফুলিংয়ের স্রোত দেখা যাচ্ছিল, এর পেটটা আলোকিত হয়ে উঠেছিল,” বলেন শুলমান।
এটা যে ‘খুবই খারাপ কিছু’ দেখেই বুঝে যান তিনি। অতীতে অনেকবারই বিমানের অবতরণ দেখেছেন তিনি।
“অন্ধকারে কখনোই বিমানের নিচের দিকটা দৃশ্যমান হওয়া ঠিক নয়। ওই স্ফূলিঙ্গ দেখে মনে হচ্ছিল বিশাল রোমান মোমবাতি, যা বিমানটির সামনে থেকে পেছনে ছড়িয়ে পড়ে।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জিমি মাজেও এয়ারপোর্টের কাছে একটি পার্কে বান্ধবীর সঙ্গে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন, তখনই মাঝ আকাশে বিমান ও হেলিকপ্টারের সংঘর্ষ দেখেন।
সেসময় আকাশে ‘সাদা আগুনের’ মতো কিছু দেখেছেন বলে মনে পড়ে তার। রোনাল্ড রিগান এয়ারপোর্টের আকাশে বিমানগুলো ‘অনিয়মিত প্যাটার্নে’ উড়ছিল বলেও মনে হয়েছে মাজেওর।
“জরুরি পরিষেবাগুলো ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত যা দেখেছিলাম তা নিয়ে খুব বেশি ভাবিনি,” বলেছেন তিনি।
‘নিবিড় পর্যবেক্ষণে’ মার্কিন কর্মকর্তারা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা সম্পর্কে তাকে অবহিত করা হয়েছে এবং তিনি পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে যাওয়া জরুরি পরিষেবা ও এর সদস্যদের ভূয়সী প্রশংসাও করেছেন।
ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স ঘটনা সংশ্লিষ্ট সবার জন্য প্রার্থনা করতে অনুরোধ করেছেন।
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ও পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফিও।
আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক ভিডিওতে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী রবার্ট ইসমকে ‘গভীর দুঃখ’ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।