রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় সম্মিলিত সনাতনি জাগরণ জোটের মুখপাত্র চন্দন কুমার ধর ওরফে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন প্রশ্নে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। তাকে কেন জামিন দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। সরকারকে দুই সপ্তাহের মধ্যে এই প্রশ্নের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি মো. আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এই রুল দেন।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য ও প্রবীর রঞ্জন হালদার। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনিক আর হক ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ।
আইনজীবী অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা জামিন চেয়েছিলাম। আদালত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন প্রশ্নে দুই সপ্তাহের রুল দিয়েছেন। সরকারের জবাব এলে রুল শুনানি হবে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশব্যাপী সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আট দফা দাবিতে সনাতনি সম্প্রদায়ের মুখপাত্র হিসেবে বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ। তার ডাকেই গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে জনসভা হয়। এর পাঁচ দিন পর ৩১ অক্টোবর চিন্ময় কৃষ্ণসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে কতোয়ালি থানায় জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেন চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান।
পরে ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ মামলায় গত ২৫ নভেম্বর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে চট্টগ্রামে নেওয়া হয়। ২৬ নভেম্বর চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলাম।
ওই আদেশের পর আদালত প্রাঙ্গণে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে বহনকারী প্রিজনভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করেন তার অনুসারী সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজন।
বেলা সোয়া ১২টা থেকে পৌনে ৩টা পর্যন্ত বিক্ষোভের পর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে চিন্ময় দাশকে কারাগারে নিয়ে যায়। এরপর আদালতের সাধারণ আইনজীবী ও কর্মচারীরা মিলে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করেন। ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মধ্যে রঙ্গম কনভেনশন হল সড়কে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষে ১০ পুলিশ সদস্যসহ আহত হন অন্তত ৩৭ জন।
ওই দিনই জামিন নামঞ্জুরের আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন চেয়ে আবার জামিন আবেদন করেন চিন্ময়। তবে সেদিন আর শুনানি হয়নি। গত ২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ সাইফুল ইসলাম এই আবেদনটি নামঞ্জুর করেন। এই আদেশের পর হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ।