।। জয় বাংলা প্রতিবেদন।।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত ভার্চুয়াল বক্তব্য প্রদান করেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। ৫ ফেব্রুয়ারি সময় রাত ৯টায় তিনি বক্তৃতা দেন। দেশবাসীর শুভকামনা করে তিনি বক্তব্য শুরু করেন।
জননেত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থী, জাতি ও দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, দেশ ও জাতির সেবার উদ্দেশেই দেশে গিয়েছিলাম। আমি আমার মা-বাবা ভাইবোন হারিয়ে দেশে যাওয়ার কোনো প্রয়োজনই ছিল না। শুধু জাতিরপিতার আদর্শ ও স্বপ্ন বুকে লালন করে, তা প্রতিষ্ঠা করা, দেশকে বিশ্ব দরবারে উন্নত দেশ হিসাবে গড়ে তোলার জন্য দেশে গিয়েছিলাম। আজকে দেশে যে ধ্বংশযজ্ঞ চলছে, সেটা মেনে নেওয়া যায় না।
শেখ হাসিনা বলেন, যে ছাত্রদের দ্বারা আমাকে স্বৈরাচার বলানো হচ্ছে, ফ্যাসীবাদী বলা হচ্ছে, এখন যারা ধ্বংশাত্মক কাজ করছে, মানুষ হত্যা করছে, মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই, সরকারের মদদেই এগুলো হচ্ছে। এই সরকার স্বৈরাচার কি নয়? ফ্যাসীবাদী নয়? আমি দেশের জন্য কল্যাণ করেছি, যে কল্যাণ করে সে কি ফ্যাসিবাদী?
তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, কৃষক সার পাচ্ছে না, বীজ পাচ্ছে না, শ্রমিক কাজ হারাচ্ছে, দ্রব্যমুল্যের উর্ধগতিতে সাধারণ অসহায়, এ সরকার কি দেশপ্রেমিক?যারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করলো, তা্রাই শিক্ষককে টেনে তার পদ থেকে নামাচ্ছে, সতীর্থের সাটফিকেট কেড়ে নিচ্ছে, চাকরি থেকে কে কাকে নামবে সে প্রতিযোগিতায় মেতেছে, এটা কি বৈষম্য নয়?
দেশবাসীর কাছে বিচার চেয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ভবন শুধু একটি বাড়ি নয়, এ বাড়ি থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, এ বাড়ি থেকে স্বাধীনতার আন্দোলন চালানো হয়েছিল, এটি জাতির একটি ইতিহাস। তাই এটিকে পৈতিৃক বাড়ি হিসাবে না-নিয়ে আমরা ট্রাস্ট করে জাতিকে দিয়ে দিয়েছি। ‘বঙ্গবন্ধু জাদুঘর’ বানিয়েছি। আগে অগাস্ট মাসে আগুন দেওয়া হলো, এখন এক্সেলেটর দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। জেনে রাখুন, ভবন ধ্বংস হতে পারে, কিন্তু ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। ইতিহাসই আবার এক সময় এটাকে গড়ে তুলবে।
ড. ইউনুস নিজে ট্যাক্স মেরে দেয়, আর সাধারণ মানুষের ওপর ট্যাক্স বসায়- সে কত বড় লোভী মানুষ, দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন রাখলাম, আপনারাই দেখেন। জুলাই হত্যার জন্য ইনিডিমিনিটি করা হয়েছে, অর্থ্যাত বিচার করা যাবে না, এতেই বুঝা যায় কারা হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। দেশবাসীকে শেখ হাসিনা তা স্মরণ করিয়ে দেন।
তিনি দীর্ঘ বক্তব্যে দেশে তার সময়ে যে উন্নয়ন করছেন তার বর্ণনা দিয়ে বলেন,১৮টি জেলাকে ভুমিহীনমুক্ত করেছি, আশ্যাযন প্রকল্প করে গৃহহীনকে পাকাগৃহ দিয়েছি। ঢাকায় যারা বস্তিতে থাকতো এই গরবীদের জন্য কয়েক হাজার ফ্লাট করে দিয়েছি।
চিকিতসা ব্যবস্থার উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে বলেন, দেশে চিকিতসার উন্নয়ন ঘটিয়েছি, হাসপাতালগুলোতে ৪৪ হাজার নার্স ও ২২ হাজার ডাক্তার নিয়োগ দিয়েছি। বেসরকারীখাতে চিকিতসা সুবিধার সুযোগ দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে আমাদেরও অবস্থান তৈরী করতে প্রনোদনা দিয়েছি। কমিউনিটি ক্লিনিকে বিনামূল্যে ওষুধ দেয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে গ্রামেগঞ্জে চিকিতসাকে সহজ করে দিয়েছি। মানুষ চিকিতসা পাচ্ছে, এতে মুত্যুহার কমে গেছে।
শিক্ষার উ্ন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে স্বাক্ষরতার হার এখন শতকরা ৭৭%। প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা পদ্ধতি চালু করেছি, এখন শিশু শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ে না। সরকারি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ কারিগরি শিক্ষার যে প্রসার ঘটিয়েছি, তা উন্নত দেশের সাথে মর্যাদা পাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা প্রতি বছর জানুয়ারি প্রথম তারিখ বই উতসব করে সকল শিক্ষার্থীকে বই দিতাম এখন ফেব্রুয়ারি মাস চলে যাচ্ছে, বই কেন দেওয়া সম্ভব হলো না? কে দেশের জন্য ভালে কাজ করছে, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে সে বিচার দিলাম।
তিনি শিল্প নিয়ে বলেন, দেশে শিল্পে উন্নয়ন ঘটিয়েছি, দেশ এখন রফতানিমুখী দেশে রূপান্তর ঘটেছে। পোশাকখাতে এখন বিশ্বে আমাদের স্থান শীর্ষে। ২০৪১ সালে দেশ উন্নত দেশে রূপান্তর ঘটবে। কিন্তু ইউনুস সরকারের ধ্বংস না থামলে দেশে আবার হাহাকার দেখা দেবে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত মা-বোনসহ সামরিক শাসনবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ছাত্ররা কোমলমতি, তাদের যেভাবে বুঝাবেন সেভাবে বুঝবে, আজকের ঘটনাবলি যা ঘটছে, তার জন্য তারা দায়ী নয়, একটা চক্রান্তকারি গোষ্ঠী তাদের নীল নকশা অনুযারি ছাত্রদের ধাবিত করছে। নীল নকশা বাস্তবায়ন করছে।
বক্তব্য প্রদানকালে তিনি ছাত্রদের কোনো দোষারূপ করেননি, কোটা বিরোধী আন্দোলন যখন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়, তখন ছাত্রদেরকে অন্য একটি গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করে লেলিয়ে দেয়, সেটা ছাত্ররা বুঝতে পারেনি, এখন অনেকই বূঝতে পারছে।
শিক্ষার্থীদের ভালো মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠার পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা। ভালো লেখাপড়া করে, দেশকে ভালোবেসে, দেশের কল্যাণ করার কথা বলেন। শেখ হাসিনার পুরো বক্তব্যই ছিল শান্ত-ধীর-স্থির স্বভাবের ও কণ্ঠ ছিল মাধুর্যে ভরা।
শেষে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, বার বার আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে, এবারেও তা করা হয়েছিল, বেঁচে গেছি, হয়তো দেশবাসীর ভালোর জন্যই বেঁচে আছি। তিনি, বলেন, দেশবাসীর কল্যাণ করার জন্য আবার ফিরে আসবো দেশে।
উল্লেখ্য, তাঁর বক্তৃতা চলাকালেই একটি মহল ‘বঙ্গবন্ধু জাদুঘর’ ‘সুধাসদন’ ও খুলনায় শেখ হেলালের বাড়ি বুল ডোজার ও এক্সেলেটর দিয়ে গুড়িয়ে দেয়ও আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে,দেশে বিদেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ উতসুক ভরে তাঁর সংবেদনশীল এই বক্তৃতাও শুনেছে।