“গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ বলছে, যেহেতু তারা (আন্দোলনকারীরা) মামলা করেছে, সেগুলোর সমাধান আদালতে হবে।” অবৈধভাবে চাকরিচ্যুত করার অভিযোগ এবং বকেয়া পরিশোধের দাবিতে দেশের শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের প্রধান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন কোম্পানির সাবেক একদল কর্মী।
মঙ্গলবার সকাল থেকে তাদের এই বিক্ষোভের কারণে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় গ্রামীণফোনের প্রধান কার্যালয় জিপি হাউজের ভেতরে একপ্রকার অবরুদ্ধ দশায় পড়েছেন দায়িত্বরত বর্তমান কর্মীরা।
ঘটনাস্থলে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলারক্ষাবাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন। রাত ১২টার সময়ও সেখানে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছিলেন আন্দোলনকারীরা। ‘জিপি ম্যানেজমেন্টের দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই’, ‘এক দফা এক দাবি, ৫ শতাংশ মুনাফা দিবি’, ‘গ্রামীণফোনের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘ম্যানেজমেন্টের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’– ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছিলেন তারা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার এইচ এম শফিকুর রহমান আছেন গ্রামীণফোনের কার্যালয়ের সামনেই। তিনি বলছেন, গ্রামীণফোনের সাবেক কর্মীরা চাইছেন, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসুক।
“কিন্তু গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ বলছে, যেহেতু তারা (আন্দোলনকারীরা) মামলা করেছে, সেগুলোর সমাধান আদালতে হবে। গ্রামীণফোনের প্রতিনিধিরা যে কারণে আর বসছেন না। এ নিয়েই ঝামেলাটা বেঁধেছে।”
সহকারী কমিশনার বলেন, “আন্দোলনকারীরা গ্রামীণফোনের কার্যালয়ে অবস্থান নেওয়ায় সকালে প্রতিষ্ঠানটির যে কর্মীরা অফিসে এসেছিলেন, তারা রাত ১২টা পর্যন্ত অফিস থেকে বের হতে পারেননি। আন্দোলনকারীরাও তাদের অবস্থানে অনড়।”
‘চাকুরিচ্যুত ও অধিকারবঞ্চিত গ্রামীণফোন শ্রমিক ঐক্য পরিষদে’র ব্যানারে গত কয়েকদিন ধরেই এই আন্দোলন চালিয়ে আসছেন সাবেক কিছু কর্মী। তাদের দাবি ‘কোম্পানির মুনাফায় শ্রমিকের ৫ শতাংশের বিলম্ব জরিমানা’ দিতে হবে।
মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১২ বছরে ৩ হাজার ৩৬০ জন কর্মীকে ‘অবৈধভাবে’ চাকরিচ্যুত করেছে গ্রামীণ ফোন। গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে আলোচনায় না বসলে তারা ‘বৃহত্তর কর্মসূচি’ নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে এক বার্তায় বলা হয়, “গ্রামীণফোনের কিছু সাবেক কর্মী চাকরি সংক্রান্ত কিছু দাবি-দাওয়া নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে জিপি হাউজের সামনে সমবেত হচ্ছেন। আমাদের জানা মতে, তাদের বেশিরভাগ বেশ কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যান এবং আইন অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য গ্রহণ করেন।
“এছাড়া তারা যে দাবিগুলো তুলেছেন, সেগুলো বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রতি গ্রামীণফোন শ্রদ্ধাশীল। তাই আদালতে এসব বিষয়ের নিষ্পত্তি হবে। দেশজুড়ে গ্রাহকদেরকে নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানে সংকল্পবদ্ধ গ্রামীণফোন। গ্রামীণফোন শান্তিপূর্ণভাবে সমবেত হওয়ার অধিকারের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু ওই ব্যক্তিরা জিপি প্রাঙ্গণে প্রবেশ ও বহির্গমনের পথ অবৈধভাবে অবরুদ্ধ করেছে। এর ফলে আমাদের কর্মী ও গ্রাহকদের অবাধ চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে।”
ওই বার্তায় বলা হয়, “গ্রামীণফোন দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং কর্মী ও গ্রাহকদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। ব্যক্তি ও সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জিপি হাউস সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।”