শাহেদ আলী ইরশাদ
ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো ডিসেম্বর মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধ করেনি দেশের শতাধিক পোশাক কারখানা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া শিল্প পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ছয়টি শিল্পাঞ্চলের শিল্প পুলিশ-১ এর আওতাধীন আশুলিয়ার ১৮টি, শিল্প পুলিশ-২ এর আওতাধীন গাজীপুরের ৫৫টি, শিল্প পুলিশ-৩ এর আওতাধীন চট্টগ্রামের ১২টি, শিল্প পুলিশ-৪ এর আওতাধীন নারায়ণগঞ্জের ১৪টি, শিল্প পুলিশ-৫ এর আওতাধীন ময়মনসিংহের চারটি এবং শিল্প পুলিশ-৭ এর আওতাধীন কুমিল্লার একটিসহ মোট ১০৪টি কারখানা বেতন-ভাতা পরিশোধ করেনি।
শিল্প পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থাপন করার সময় পর্যন্ত কারখানার সংখ্যা ছিল ১০৪টি। তবে কারখানাগুলোর বেতন-ভাতা দেওয়ায় এই পর্যন্ত সংখ্যা পরিবর্তন হতে পারে। এদিকে দেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারকরা শিল্প পুলিশের তালিকাটি অস্বীকার করে বলেছেন, এই তথ্য অনেক আগে সংগ্রহ করা হতে পারে। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কারখানা বেতন-ভাতা পরিশোধ করেছে। এখন প্রায় ২০-৩০টি তৈরি পোশাক কারখানা বা তার কম বেতন দেয়নি বলে দাবি করেছেন তারা। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, এত সংখ্যক কারখানা যদি এখনো তাদের মজুরি পরিশোধ না করত, তাহলে সেগুলো চালানো সম্ভব হতো না। আমাদের বন্ধ কারখানার তালিকা খুঁজলে দেখা যাবে খুব কম সংখ্যক কারখানা বন্ধ রয়েছে এবং মজুরি সমস্যার কারণে এগুলো বন্ধ হয়নি। শিল্প পুলিশের তথ্যানুযায়ী, বেশির ভাগ কারখানা আর্থিক সংকটের কারণে মজুরি পরিশোধে দেরি করছে এবং কিছু কারখানা মালিক আরও জানিয়েছে, আর্থিকসংকট এবং ক্রয়াদেশের অভাবের কারণে তারা বেতন-ভাতা দিতে পারছে না। তবে, তালিকায় থাকা বেশ কয়েকজন কারখানা মালিক তা অস্বীকার করে বলেছেন, তারা এরই মধ্যে তাদের শ্রমিকদের মজুরি ও ভাতা প্রদান করেছেন, যদিও তাদের কারখানায় এখনো তাদের কর্মীদের বেতন-ভাতা পাওনা ছিল। যোগাযোগ করা হলে বেশির ভাগ কারখানা মালিক কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। আলেমা টেক্সটাইল লিমিটেডের প্রশাসন প্রধান মোহাম্মদ সেলিম বলেন, জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে তারা তাদের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেছেন। শিল্প পুলিশের তালিকা তাদের কারখানার নাম সম্পর্কে তিনি বলেন, সম্ভবত আগেই তথ্য সংগ্রহ করেছে শিল্প পুলিশ। মাশিহাতা সোয়েটারস অ্যান্ড মেগা ইয়ার্ন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খালিদ হাসান বলেছেন, আমাদের অর্থ বিভাগ মজুরি পরিশোধের তথ্য সরবরাহ করতে পারে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন স্বপন বলেন, বেশ কয়েকটি তৈরি পোশাক কারখানা এখনো ডিসেম্বরের বেতন পরিশোধ করেনি। তবে সঠিক সংখ্যা তিনিও বলতে পারেননি। তালিকা সম্পর্কে আমরা সব সময় শিল্প পুলিশের ওপর নির্ভর করি। তবে, যেহেতু শিল্প পুলিশ প্রকৃত তথ্যের ওপর কাজ করে, তাই দুই বা তিন দিনের মধ্যে সংখ্যাটি পরিবর্তন হতে পারে বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে শিল্প পুলিশ-২ এর (গাজীপুর) পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, কারখানাগুলো তাদের কর্মীদের বেতন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংখ্যাটি প্রতিদিন পরিবর্তন হয়। তাই তালিকায় থাকা কারখানার সংখ্যা আগে থেকেই সংগ্রহ করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে, তবে একটি হালনাগাদ তালিকা তৈরি করা হলে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে বলে জানান তিনি। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিরতা, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং জ্বালানিসংকটের কারণে কয়েকটি পোশাক কারখানা দীর্ঘদিন ধরে পূর্ণ ক্ষমতায় চলতে সংগ্রাম করছে, যা তাদের আয়ের ওপর প্রভাব ফেলেছে।