বাংলাদেশে কারাবন্দি সাংবাদিকদের শিগগিরই মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোরালো দাবি জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, জাতিসংঘের মহাসচিব এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পার্লামেন্টের স্পিকারের উদ্দেশে লেখা এক পিটিশনে এ দাবি জানানো হয়।
এতে বাংলাদেশে মানবাধিকার সংরক্ষণ ও সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং চাপ দেয়ার আহ্বান করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কারারুদ্ধ সাংবাদিকদের মুক্তিতে হস্তক্ষেপ এবং সহায়তা করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
এ আবেদনে আগ্রহী সাংবাদিকদের সই চাওয়া হয়েছে। এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এখনই পদক্ষেপ নেয়ার সময়। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নেয়া মানে সত্য, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াই করা, যা বর্তমানে বাংলাদেশে হুমকির মুখে। ফলে পিটিশনে স্বাক্ষর করার মাধ্যমে একটি আন্দোলনে যোগ দেয়া হবে। কারণ, বাংলাদেশে কারাবন্দি সাংবাদিকদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি করা হচ্ছে। যাদের জামিনের শুনানি ছাড়াই অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে নিপীড়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া যাবে। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে একটি নিরাপদ এবং মুক্ত সাংবাদিকতার প্রেক্ষাপটের জন্য লড়াই করা হবে।
সাংবাদিকতার মৌলিক বিষয় হলো স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। তবে উদ্বেগজনকভাবে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে বাংলাদেশে অনেক সাংবাদিককে কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে। পরিবার, জীবিকা ও কর্তব্য থেকে তাদের দূরে রাখা হচ্ছে। মুক্ত সাংবাদিকতায় যা গুরুতর আঘাত।
যেকোনো কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য সংবাদপত্রের স্বাধীনতা চর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স রিপোর্ট অনুসারে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৫তম। এ পরিসংখ্যান দেশের সাংবাদিকতার কঠোর বাস্তবতাকেই প্রকাশ করে। ফলে অন্যায্য অনুশীলনের বিরোধিতা এবং বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারকে সমর্থনের বিকল্প নেই।
তাতে উল্লেখ করা হয়, ড. ইউনূসের শাসনামলে গণমাধ্যমের অবস্থা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। সাংবাদিকরা এখন প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। তারা মামলা, গ্রেপ্তার এমনকি হত্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। অন্যদিকে, অপরাধীরা মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
গত পাঁচ মাসে গণমাধ্যম দমন এক উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। মামলা, আক্রমণ, গ্রেপ্তার, চাকরিচ্যুতি এবং আর্থিক নিপীড়নের মাধ্যমে সাংবাদিকদের চুপ করিয়ে দেয়া হচ্ছে। সংবাদপত্র অফিসে আক্রমণ, প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে চূর্ণ করা হচ্ছে। গণমাধ্যমের মালিকানাও জোরপূর্বক দখল করা হচ্ছে। সাংবাদিকতা একটি অপরাধের সমতুল্য হয়ে উঠেছে!
গত পাঁচ মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য নৃশংস কৌশল অবলম্বন করেছে-# ৬০০+ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। # ৫০+ গণমাধ্যম ও প্রেস অফিসে হামলা হয়েছে। # ৬ সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে।# ১৮ জন সাংবাদিক গ্রেপ্তার হয়েছেন। # ১০০+ সাংবাদিক আহত হয়েছেন। # ১০০০+ সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে অথবা পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। # ৯৬ জন সাংবাদিককে আর্থিক রেকর্ড প্রকাশ করতে বলা হয়েছে।# ১৬৮ জন সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল করা হয়েছে। # ১৮ জন সাংবাদিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। # ৮৩ জন সাংবাদিকের প্রেস ক্লাবের সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। # বেশিরভাগ গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান জোরপূর্বক দখল করা হয়েছে।
এসব কি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা দেখায়? অন্তর্বর্তী সরকার সত্যের সব পথ বন্ধ করে দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে মনে হচ্ছে। সাংবাদিকরা অভূতপূর্ব ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। যদি এভাবে স্বাধীন সাংবাদিকতা নির্মূল করা হয়, তাহলে দেশ ও জনগণ উভয়ের জন্যই একটি অন্ধকার ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। দৈনিক ভোরের কাগজ-এর প্রতিবেদন