মাহবুবুর রহমান
রাজশাহীর পুটিয়া উপজেলা। মৌসুমী রহমান একজন আওয়ামী লীগ কর্মী। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি লিফলেট বিতরণ করছিলেন। পুলিশ এসেছে গ্রেফতার করতে। তাঁকে না পেয়ে স্বামী ওহিদুর রহমানকে ধরে নিয়ে যায়।
গাজীপুরের একটি বাড়ীতে ডাকাত হামলা করেছে। চালাচ্ছে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ। গ্রামবাসী এগিয়ে এলো ডাকাতদের প্রতিহত করতে। ধরাশায়ী হলো অনেক। পরে জানা গেলো, ডাকাতরা আর কেউ নয়, ইউনুসের সব সোনার ছেলে, যারা তাঁকে নিয়োগ দিয়েছে। কপাল পুড়লো প্রতিহতকারী গ্রামবাসীর। আরো পুড়লো নিরীহ আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকদের। সরকারের মানবতাবিরোধী অভিযান ‘ডেভিল হান্টের’ শিকার তারা। শুধু গাজীপুর নয়, এর আওতা সারা দেশ। প্রতিদিন গ্রেফতার হচ্ছেন শত শত। আপনি আওয়ামী লীগ করেন? ব্যাস, এই যথেষ্ট। এবার ঢুকুন গারদে।
টিভিতে দেখলাম, হাসনাত আব্দুল্লাহ গাজীপুরের সাবেক মেয়র, সাবেক মন্ত্রী ও ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যার আদেশ দিচ্ছেন। তিনি সচিবালয়কে হুশিয়ার করে বলছেন, ঠিক হয়ে যাও, অন্যথায় ৩২র দশা হবে। ৩২ পুড়ানোর আগাম ঘোষণা তিনিই দিয়েছিলেন। আগস্টে সুপ্রিম কোর্টের গেটের সমাবেশে তার হুমকির পর প্রধান বিচারপতি সহ পুরো আপিলেট ডিভিশন রিজাইন করেন। পরে পদত্যাগী প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, ধ্বংসের হাত থেকে কোর্টকে রক্ষার্থে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
এখন প্রশ্ন, হাসনাত আব্দুল্লাহ কি আইনের উর্ধে? তার ভয়ংকর মব জাস্টিস সারাদেশে আতংক ছড়িয়েছে। ইউনুস তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দূরে থাক, উল্টো তার সুরক্ষায় যাবতীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন।
প্রশ্ন আরো আছে। সম্পদ অর্জন ও রক্ষা করা মানুষের মৌলিক অধিকার। আমেরিকায় অস্ত্র রাখা নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। সেকেন্ড অ্যামেন্ডমেন্ট। স্কুল-কলেজ, চার্চ, শপিং মলে নির্বিচার গণহত্যার পর অস্ত্র নিষিদ্ধের দাবীতে মিছিল-মিটিং হলেও আজোবধি নিষিদ্ধ হয়নি। সংবিধান সংশোধনের সম্ভাবনাও ক্ষীণ। বাংলাদেশে ক্ষমতাবানরা অস্ত্র রাখতে পারেন, তবে এ জন্য লাইসেন্স নিতে হয়।
বাংলাদেশে আইন-শৃংখলার শোচনীয় অবনতি হয়েছে। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে মানুষ ঘরে ফেরে। ছিনতাই, রাহাজানি, ডাকাতি বেড়ে গেছে। পুলিশের উপর ভরসা নেই। তারাও দুর্বল। যমুনা টিভিতে এক আলোচনায় বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা বলছিলেন, এখন রাতে চলাচলে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। গত ১৫ বছরে এমনটি ছিল না। তিনি নিরাপদ ভাবতেন।
এদিকে গাজীপুরের ঘটনার পর ডাকাতদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা বা তাদের পক্ষে পুলিশ-মিলিটারী ব্যবহারের কথা শুনে হোচট খেলাম। এ কেমন ইনসাফ? যৌথ বাহিনীর অপারেশনের নাম দেয়া হয়েছে ‘ডেভিল হান্ট’ (শয়তানের খোঁজে)। নাম নিয়েও আছে প্রশ্ন। আদালতের বাইরে কে আপনি একজন নাগরিককে ‘শয়তান’ বলার? অবশ্য আদালতও তা বলবে না। এই ‘ভেভিল হান্ট’ অভিযানে আপনি যাকে গ্রেফতার করছেন তিনি কি ‘শয়তান’? এতো দেখছি হাজার হাজার ‘শয়তান’?
প্রকৃতপক্ষে আইন শৃংখলার উন্নয়ন নয়, মানুষের মনে শান্তি ও স্বস্তি ফিরিয়ে আনাও নয়, আপনাদের মূল টার্গেট আওয়ামী নিধন! এই দল যাতে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। কিন্তু তা কি সম্ভবপর? এক কথায় ‘না’।
বিএনপির নেতা জয়নাল আবেদিন ফারুক জানতে চেয়েছেন, আপনাদের মধ্যে যে ‘ডেভিল’ লুকিয়ে আছে তা ধরবে কে?
ছোট্ট একটা গল্প আছে। দুনিয়ার বড় বড় ‘ডেভিলে’র খোঁজ মিলছে না। গেল কোথায় সব? এক সঙ্গে লাপাত্তা। পরে তাদের পাওয়া গেল দক্ষিণ এশিয়ার এক দেশে। স্বাগতিক ‘ডেভিল’ সিংহাসনের মতো এক আসনে আসীন। সামনে নত মস্তকে করজোরে দন্ডায়মান আগত ‘ডেভিল’ সব। কি ঘটনা আজ? আজ স্বাগতিক :ডেভিল’কে ‘বর্ষ সেরা শয়তানের’ খেতাব দেয়া হচ্ছে। ‘গৃহস্থকে চোর আর চোরকে গৃহস্থ’ বানানোর অসাধারণ কৃতিত্বের স্বীকৃতি!
-লেখক নিউইয়র্ক প্রবাসী সাংবাদিক।