‘দায়মুক্তি’ শীর্ষক একটি ফেসবুক লাইভে বঙ্গবন্ধুকন্যা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা গত বছরের আগস্টে শিক্ষার্থী ও ধর্মান্ধ উগ্রবাদীদের হাতে নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সম্প্রতি কথা বলেছেন। লাইভ অনুষ্ঠানে তিনি তার চিন্তা-ভাবনা এবং চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় তাঁর ওপর আক্রমণকারী ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, “আমি ফিরে আসব, আর এ জন্য আল্লাহ আমাকে জীবিত রেখেছেন।”
তিনি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে আশ্বাস দিয়ে জানান, নিহতদের পরিবারকে তাঁর পক্ষ থেকে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে এবং হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি আরও বলেন, জুলাই-আগস্টে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নিহতরা পুলিশের গুলিতে নিহত হয়নি। “যদি এখন ময়নাতদন্ত করা হয়, তাহলে প্রমাণিত হবে যে, তারা পুলিশের গুলিতে নিহত হয়নি,” যোগ করেন তিনি।
পুলিশের দায়িত্ব-কর্তব্যের প্রতি আস্থা রেখে তিনি বলেন, “পুলিশ সর্বোচ্চ আত্মনিয়ন্ত্রণ দেখিয়েছে এবং কেবল তখনই পদক্ষেপ নিয়েছে যখন তারা আক্রমণের শিকার হয়েছে।”
শেখ হাসিনা আরও বলেন, “ইউনূস প্রশাসন হত্যাকারীদের সুরক্ষা দিয়েছে। ছাত্রদের সহিংসতা শুরু হওয়ার পর পুলিশ, আওয়ামী লীগ কর্মী, বুদ্ধিজীবী এবং শিল্পীরা নিহত হয়েছেন, কিন্তু হত্যাকারীরা আইনের আওতায় আসবে না। ইউনূসের শাসনে নিহতদের পরিবারও বিচার পাবে না।”
ইউনূসকে সরকার পরিচালনায় অক্ষম আখ্যা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “ইউনূস নিজেই স্বীকার করেছেন যে তিনি দেশের শাসন পরিচালনা করতে সক্ষম নন, তবুও তিনি এই পথে হাঁটছেন। সরকারের ওপর হামলা এবং পুলিশ হত্যার ঘটনা তার অযোগ্যতার প্রমাণ।”
তিনি ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, “তিনি আমার পুরনো বাড়িটি পুড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর বাড়িটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি ওই বাড়িটি জনগণের জন্য দিয়েছিলাম, কিন্তু সেটি ধ্বংস করা হয়েছে। এটি তার পরিকল্পনা ছিল।”
শেখ হাসিনা বর্তমান সরকারের অর্থনীতি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “ছয় মাসেরও বেশি সময় চলে গেছে, তবুও জনগণের নিরাপত্তা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অপ্রত্যাশিতভাবে খারাপ হচ্ছে। এখন শোনা যাচ্ছে, ইউনূস অপারেশন ‘ডেভিল হান্ট’ চালু করেছে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করতে। তিনি দেশের শাসন পরিচালনা করতে সক্ষম নন। অর্থনীতি সংকটে, আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে, এবং জনগণের নিরাপত্তা বিপন্ন।”
শেখ হাসিনা নিহত পুলিশ কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানান এবং বলেন, “এটি একটি বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ, যা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ভবনের ধ্বংসও একই পরিকল্পনার অংশ।”
তিনি পরিবারগুলোকে আশ্বাস দিয়ে জানান, ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর জন্য তিনি যতটা সম্ভব সাহায্য-সহযোগিতা করবেন। তিনি নিহত সকলের বাচ্চাদের দেখতে চান ভিডিও কলে, কে কোন ক্লাসে পড়ে সেই খোজ খবর নেন, কোন অবস্থাতেই যেন পড়াশোনা বন্ধ না হয় সেই নির্দেশ দেন। সহযোগীতার ব্যাপারে তিনি বলেন,
“এসব অসহায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সাহায্যের জন্য আমি ফাউন্ডেশন করে দিয়েছিলাম। এখন তো সেই ফাউন্ডেশনের টাকা আর ব্যাংক একাউন্ট ফ্রিজ করে রেখেছে ইউনুস সরকার”
নিহতদের পরিবার বলছিলো, আত্মিয় স্বজন সবাই তাদের বিপদের দিনে একা ফেলে চলে গেছে, বাচ্চাদের পড়াশোনা বা খানা খাদ্যের জন্য ঘরে একটা টাকাও নাই। শেখ হাসিনা সবাইকে “সবর” করতে বলেন আর আশ্বাস দেন যে তিনি দেখবেন কোনভাবে জরুরী কোন সাহায্য পাঠানো যায় কি না।
তিনি বলেন, তারা যেন আস্থা রাখে। শেখ হাসিনা দেশে ফিরে জনগণকে সাথে নিয়ে এই দুঃশাসন প্রতিহতে কাজ করবেন বলে জানান।