।। হামিদ মোহাম্মদ ।।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম নিলে রাষ্ট্রবিরোধী।শেখ মুজিবও রাষ্ট্র বিরোধী। জয় বাংলা শ্লোগানও রাষ্ট্র বিরোধী। দেশবাসী চেয়ে চেয়ে দেখছেন এসব কাদের কাজ। কেউ কথা বলতে পারছেন না, প্রতিবাদ তো দূরের কথা।
২১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে শহীদ মিনারের পাশে টিএণ্ডটি এলাকায় ছিল কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান। একটি কবিতা পাঠের এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করা হলে সেখনে হট্টোগোলের সূত্রপাত হয়।
পরে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) নেতা-কর্মীরা গিয়ে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেন। এ সময় এমন কবিতা পড়ার জন্য এক আবৃত্তিশিল্পীকে হেনস্তা করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। জাসাসের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘ওই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড চলছিল। তাই আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। প্রশাসন অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে।’
এসব ‘স্বর’ শুনে কেউ অভ্যস্ত নয় কখনো। সবাই হতবাক। দেশের মানুষ বুঝতে পারছে এ ‘স্বর’ স্বাধীনতা বিরোধীদের। পরাজিত শক্তির। পরাজিতরা এভাবে স্বাধীন দেশে কথা বলবে, কল্পনাতীত। একাত্তরে যে স্বাধীনতা এলো, এটা কারা মানেনি, কাদের রক্তের উত্তরাধিকার বাহিত এসব সন্তান।বুঝে না এমন কেউ নেই। যে জিয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা, তাঁর হাতে গড়া দল ও কর্মীদের এমন উচ্চারণ সন্দেহ সৃষ্টি করে। জামায়াত স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, এই মতাদর্শ তারা ঐকনো লালন করে।
কিন্তু বিএনপির ভেতর ঘাপটি মেরে বসা স্বাধীনতা বিরোধীরা যে পথ ধরেছে, সে পথে তো দেশ যাবে না। কুপুত্ররা জানে না, ইতিহাসের চাকা পেছন দিকে ঘোরে না। সামনেই ঘোরে। কিন্তু সামনে দুপা যাওয়ার জন্য এক পা পিছুতে হয়। সম্ভবত একালটি সে এক পা পিছনে যাওয়ার। এক পিছনে গিয়ে যখন সামনের দিকে এগুবে তখন ইতিহাসের চাকার গতি দ্বীগুণ হবে।
শেখ মুজিব রাষ্ট্র বিরোধী। তিনি পাকিস্তানের জন্য রাষ্ট্রবিরোধী হতে পারেন, তাদের ভাষায়। জয় বাংলা রাষ্ট্রবিরোধী পাকিস্তানের জন্য। কিন্তু যার ডাকে বাঙালি স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশ স্বাধীন করলো, যে শ্লোগান ছিল স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মন্ত্র, সেই স্বাধীনতার ডাক দেয়া মানুষ আর সেই অমোঘ শ্লোগান রাষ্ট্রবিরোধী।
যারা মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে যুদ্ধ করেছেন,বা যারা অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন, জানমাল বিপন্ন হয়েছে যে সব পরিবারের, এদের রক্তে নিশ্চয় এসব কথা শোনে আগুন লাগার কথা। এ আগুনের লেলিহান আপাতত দেখা না-গেলেও জ্বলছে দাউ দাউ করে।
এই আগুন যখন ঐ স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা অসুরদের গায়ে ধরবে, তখন বুঝবে, আগুনের কী শক্তি? কী মহা ভুল করেছে, তা আর থামনো যাবে না।তখন মূল উতপাটন করা হবে।
যে যা বলুন, শেখ হাসিনা কিন্তু এদের চিনতে পেরেছিলেন। বুঝতে পেরেছিলেন কে শত্রু আর কে মিত্র। তাই, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারিদের ফাঁসি দিয়েছিলেন, যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধীদের শাস্তি নিশ্চিত করেছিলেন ফাঁসিতে ঝুলিয়ে। বুঝিনি আমরা অনেকে। এই না-বোঝার খেসারত দিতে হচ্ছে, দেশবাসীকে, জাতিকে।
‘বাঙালি’ শব্দটিই এখন মুছে দিয়ে নতুন পরিচয়ে জাতিকে বাকী ইতিহাস লিখতে হবে-এমন আশকারা, নাটক মঞ্চায়ন করতে যারা নেমেছেন গাঁটছড়া বেঁধে তারা কোন বোকার স্বর্গে বাস করছেন, সেটা এখন না ভাবলেও, ভবিষ্যত যে কাঠগড়ায় শুধু তুলবে না, নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে।
সুতরাং ‘শেখ মুজিব’ এবং ‘নাম উচ্চারণ’ রাষ্ট্রবিরোধী, ‘জয় বাংলা’ রাষ্ট্রবিরোধী তকমা নিয়ে থাকতে চাই। বাংলাদেশের কপালে এই কলংক তিলক, আরেকটা একাত্তর ছাড়া মোছা যাবে না, এটা এই কুলাঙ্গাররা বোধয় বুঝতে পেরে এতো চিল্লাচিল্লি করছে। দেশবাসীর কাছে অনুরোধ- অপেক্ষা করুন, আরেকটা একাত্তরের!