২১ বছর ধরে আমরা কলা গাছ, বাঁশ দিয়েই শহীদ মিনার বানিয়ে শহীদদে শ্রদ্ধা জানাই। অনেকটা আক্ষেপের সুরে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন স্থানীয় একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. লুৎফুর রহমান।
ওই স্কুলের নাম বাগজান কুঠুরিকোনা মডেল হাই স্কুল। স্কুলটি নেত্রকোনার মদন উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নে অবস্থিত।
হাওরাঞ্চলে নির্মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই কোন শহীদ মিনার। তাই প্রতিষ্ঠার পরর থেকেই প্রতিবছর শহীদ মিনারে কলা গাছ ও বাঁশসহ বিভিন্ন উপকরণে অস্থায়ী শহীদ মিনার বানিয়ে শ্রদ্ধা জানান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। স্কুলে একটি পাকাপোক্ত শহীদ মিনার না থাকায় তাদের মধ্যে অনেক আক্ষেপ দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০৪ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সালে এমপিও ভুক্ত হয়। হাওরাঞ্চলের এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৩৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসে প্রতিবারের মতো এবারও সেখানে অস্থায়ী শহীদ মিনার বানিয়ে দিবসটি পালন করা হয়েছে।
বাগজান কুঠুরিকোনা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে শুক্রবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, ফুলের ঢালা সাজিয়ে নিয়ে এসেছন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশের পতাকার রঙে ছাটানো হয়েছে ছোট ছোট কাগজ। কলা গাছের সঙ্গে হলুদ-আকাশি রঙের কাগজজুড়ে বানানো হয়েছে অস্থায়ী শহীদ মিনার। সেখানেই একে একে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহানাজ, লামিয়া, রিয়া মনি বলেন, শহীদ মিনার নেই তাতে কী, তাই বলে কী ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবো না? আমরা প্রতি বছর এভাবে অস্থায়ী শহীদ মিনার বানিয়ে সেখানে ফুল দেই ।
বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, টাকার অভাবে প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারিনি। বিষয়টি নিয়ে কয়েক বার আবেদন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কোনো বরাদ্দ পাইনি। তাই একুশে ফেব্রুয়ারি এলে স্কুলের মাঠে অস্থায়ী শহীদ মিনার বানিয়ে আমরা শ্রদ্ধা নিবেদন করি।
বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক গোলাম রব্বানী বলেন, শহীদ মিনার নেই। তাই একুশে ফেব্রুয়ারি আগের দিন বিদ্যালয়ের মাঠে কলাগাছের শহীদ মিনার বানানো হয়, তাতে কাগজ মুড়িয়ে সুন্দর করা হয়, শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল বারী জানান, যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই সে সকল প্রধান শিক্ষককে বলেছি ইউএনও স্যারের বরাবর একটি আবেদন দেওয়ার জন্য।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার অহনা জিন্নাত বলেন, যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই তাদের তালিকা চেয়েছি। এ বছরই স্কুলগুলোতে শহীদ মিনার তৈরি করে দেওয়া হবে।