
। । ফারুক যোশী ।।
নতুন দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ আহবায়কের বক্তব্যটা দেখলাম। ভালই বলেছেন। রাজনীতি আছে। মনে হলো, ছয়-সাত মাস ধরে মানুষ যে সন্দেহের তীর মেরেছিলো তাদের প্রতি, অর্থাৎ জামাত সংশ্লিস্টতা, সেটা তিনি উড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। তাই এ দেশকে ভারতের পাশাপাশি , পাকিস্তানপন্থি হতে দেবেন না বলে তার লিখিত বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন। কিন্তু লেজ কি লুকনো যায় ? বিপ্লব শব্দটা না বলে ইনকিলাবই বলা হয়েছে সভায়।
বার বার একটি শব্দ উচ্চারণ করা হয়েছে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’? দ্বিতীয়বারের স্বাধীনতা কি ? প্রকারান্তরে ৭১ কে অবজ্ঞা করা ? তাই না?
একটা দেশের আর্থ-সামজিক কিংবা রাজনৈতিক অবস্থায় “দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র” (Second Republic) শব্দটি এমন একটি সময়কে বোঝায়, যখন কোনো দেশে আগের প্রজাতান্ত্রিক সরকার পতনের পর নতুন করে আবার একটি প্রজাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। একটা দেশের সেকেন্ড রিপাবলিক হল, সেই দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো প্রজাতন্ত্র গঠনের নির্দেশক।
দ্বিতীয় রিপাবলিকের উদাহরণ যে নেই, তা নয়, ফ্রান্সের দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র (১৮৪৮-১৮৫২), যা ১৮৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের পর প্রতিষ্ঠিত হয় এবং রাজা লুই-ফিলিপের জুলাই রাজতন্ত্রের পতন ঘটায়। তবে, এই প্রজাতন্ত্র খুব অল্প সময় স্থায়ী হয় এবং লুই-ন্যাপোলিয়ন বোনাপার্ট (নেপোলিয়ন বোনাপার্টের ভাইপো) ক্ষমতা দখল করে নিজেকে সম্রাট নেপোলিয়ন ঘোষণা করেন, যার মাধ্যমে দ্বিতীয় ফরাসি সাম্রাজ্যের সূচনা ঘটে।
ফ্রান্স ছাড়াও স্পেন, ইতালি, অস্ট্রিয়া, নাইজেরিয়া, ঘানা এবং দক্ষিণ কোরিয়া-সহ আরও বেশ কয়েকটি দেশের ইতিহাসে “দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র” পরিভাষাটি ব্যবহৃত হয়েছে, যা তাদের আগের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের পর নতুন প্রজাতান্ত্রিক শাসনের শাসনের ধারাবাহিকতার নির্দেশনা।
হয়ত তারাও ইতিহাসের সেই পথটা ধরতে চাচ্ছেন, সেজন্য তারা সংবিধানই বদলে দিতে চাইছেন, সংবিধানের সংযোজন-বিযোজন তারা চাইছেন না। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মধ্যি দিয়ে সংবিধানতো ‘নাই’ করে দেয়া যায় না। এ সংবিধানতো লাখ লাখ মানুষের আত্নহুতির বাংলাদেশের অস্থিত্বের স্মারক। নতুন দলের ঘোষণায় নতুন কিছু থাকতে পারেই, কিন্তু সরকার গঠন না করেই একধরনের হুংকার কিন্তু আস্ফালনের পর্যায়েই এসে গেছে।
আর সেজন্যই শুরুতেই ছাত্রদের মাঝে মারামারি, পদত্যাগ প্রভৃতির মধ্যি দিয়ে জনপ্রিয়তার জমিনে ইতিমধ্যে ফাটলটা নিজেরাই শুরু করে দিয়েছে।
পরিবারতন্ত্র থেকে বের করে নিয়ে আসার একটা ইচ্ছে আছে তাদের ঘোষনায়। এ ঘোষনাকে মানুষ স্বাগত জানাতে পারে। এটা হয়ত এ সময়ের দাবীও। কিন্তু রক্তেভেজা স্বাধীনতার বিপরীতে গিয়ে দ্বিতীয় রিপাবলিকের আহবান রাখলে জনমনে নতুন সন্দেহ দেখা দেবেই।
লেখক: সাংবাদিক, বিশ্লেষক, যুক্তরাজ্য প্রবাসী।