Close Menu

    সাবস্ক্রাইব

    সর্বশেষ খবরের সাথে আপডেট থাকুন।

    জনপ্রিয় সংবাদ

    ডিগ্রি নাই, সমস্যা নাই!

    July 30, 2025

    গঙ্গাচড়ায় হিন্দু বাড়িঘরে হামলা-লুটপাটের ঘটনায় আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নিন্দা

    July 30, 2025

    ইউনুসের দুঃশাসনের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নীলিমা আকতার চাকরিচ্যুত

    July 30, 2025
    Facebook Instagram WhatsApp TikTok
    Facebook Instagram YouTube TikTok
    JoyBangla – Your Gateway to Bangladesh
    Subscribe
    • হোম পেইজ
    • বিষয়
      • দেশ (Bangladesh)
      • আন্তজাতিক (International)
      • জাতীয় (National)
      • রাজনীতি (Politics)
      • অথনীতি (Economy)
      • খেলা (Sports)
      • বিনোদন (Entertainment)
      • লাইফ স্টাইল (Lifestyle)
      • শিক্ষাঙ্গন (Education)
      • টেক (Technology)
      • ধম (Religion)
      • পরবাস (Diaspora)
      • সাক্ষাৎকার (Interview)
      • শিল্প- সাহিত্য (Art & Culture)
      • সম্পাদকীয় (Editorial)
    • আমাদের সম্পর্কে
    • যোগাযোগ করুন
    JoyBangla – Your Gateway to Bangladesh
    Home » একাত্তরে মার্চের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার জন্য রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ও জাতিকে প্রস্তুত করেন
    National

    একাত্তরে মার্চের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার জন্য রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ও জাতিকে প্রস্তুত করেন

    JoyBangla EditorBy JoyBangla EditorMarch 2, 2025No Comments9 Mins Read
    Facebook WhatsApp Copy Link
    Share
    Facebook WhatsApp Copy Link

    স্বায়ত্তশাসনসহ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির ছয়টি দাবি নিয়ে, ১৯৬৬ সালে, ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা করেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। এর অল্প সময়ের মধ্যেই দলের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। চষে বেড়াতে শুরু করেন বাংলার মাঠ-প্রান্তর। এসময় ‘ছয় দফা: আমাদের বাঁচার দাবি’ শিরোনামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে দেশজুড়ে বিলি করা হয়। তুমুল গণজোয়ার শুরু হয় ছয় দফার পক্ষে। তা দেখে ভয় সৃষ্টি হয় পাকিস্তানি জান্তাদের মনে। ছয় দফা ঘোষণার পরের তিন মাসে দেশজুড়ে ৩২টি জনসভা করেন বঙ্গবন্ধু এবং প্রায় প্রতিবারই তাকে আটক করা হয়। অবশেষে বাঙালির জাগরণ দমানোর জন্য দীর্ঘ মেয়াদের জন্য জেলে ঢোকানো হয় জাতির স্বপ্নপুরুষ শেখ মুজিবকে। কিন্তু লাভ হয়নি। ছয় দফা ঘোষণা করে জাতীয় মুক্তির যে বীজমন্ত্র তিনি রোপণ করেছিলেন, তা ততদিনে শাখা-প্রশাখায় ছড়িয়ে গেছে প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে।
    এই ছয় দফাকে কেন্দ্র করেই স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর হয়ে ওঠে পুরো জাতি। যার প্রভাব পড়ে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের মোট ৩১৩ আসনের মধ্যে ১৬৭ আসনে জিতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে আওয়ামী লীগ। নৌকা প্রতীকের কাণ্ডারি হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে হয়ে ওঠেন অখণ্ড পাকিস্তানের সর্বোচ্চ নেতা। কিন্তু পাকিস্তানি জান্তা ও নির্বাচনের পরাজিত পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিকরা ষড়যন্ত্র করতে থাকে। অনেক টালবাহার পর, ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও, স্বৈরাচার জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১ মার্চ দুপুরে, সেই অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। এরপরই ফুঁসে ওঠে আপামর বাঙালি। চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু করার নির্দেশ দেন বঙ্গবন্ধু।
    মূলত, মার্চের প্রথম দুপুর থেকেই এই আন্দোলনের সূচনা। প্রথমে শান্তিপূর্ণভাবে পাকিস্তানি হানাদারদের অসহেযোগিতা করার নির্দেশ দেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু জান্তারা সেই আন্দোলনে গুলি চালিয়ে শতাধিক মানুষের রক্তে রাজপথ রক্তাক্ত করে তোলে। ক্রমেই কঠোর থেকে কঠোর অবস্থানের নির্দেশনা দেন বাঙালির সর্বোচ্চ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান।
    প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই এই ভূখণ্ডের সরকারি-বেসরকারি প্রশাসনের একক নেতৃত্ব চলে আসে বঙ্গবন্ধুর হাতে। দ্বিতীয় সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগেই পুরো দেশ চলতে শুরু করে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মেনে। বাস্তব অর্থে, শুধু সামরিক ছাউনিগুলো ছাড়া আর কোথাও পাকিস্তানিদের নিয়ন্ত্রণ ছিল না। ভেঙে পড়ে পাকিস্তানের সরকার ব্যবস্থা। বঙ্গবন্ধুই তখন বাংলাদেশের অঘোষিত রাষ্ট্রপ্রধান এবং ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি পরিণত হয় ‘বিকল্প রাষ্ট্রপ্রধান’-এর সদর দফতরে। অবস্থা বেগতিক দেখে, পাকিস্তানি জান্তা ও রাজনীতিকরা ঢাকায় এসে বঙ্গবন্ধুকে আলোচনার আহ্বান জানান। রাজনৈতিক কারণে বঙ্গবন্ধু তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন, কিন্তু দেশজুড়ে অসহযোগ আন্দোলনের কার্যক্রমও গতিশীল রাখেন। পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্রে পা না দিয়ে, সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ধাপে ধাপে নির্দেশনা দিতে থাকেন বঙ্গবন্ধু। সেসসব নির্দেশ মেনে স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে মুক্তির স্বপ্নে মগ্ন সাত কোটি জনতা। অবশেষে ২৫ মার্চ কালরাতে হানাদার বাহিনী ঘুমন্ত বাঙালির ওপর আক্রমণ চালালে, বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এরপর তাকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে বন্দি করে রাখা হয়। কিন্তু তার নামেই পরিচালিত হতে থাকে মুক্তিযুদ্ধ।
    বাঙালির ইতিহাসে ব্যতিক্রম বসন্ত
    মার্চ মাস মানেই বসন্তকাল, ফাল্গুন ও চৈত্রের সমাহার। উড়ু উড়ু বাতাস, কোকিলের ডাকে আনমনা হয়ে থাকে মন। কিন্তু ১৯৭১ সালের মার্চ ছিল ব্যতিক্রম। সেবারের বাতাস ছিল ভারী, কৃষ্ণচূড়ায় ছিল না কোকিলের কুহু তান। প্রতিটি রাজপথে বাঙালির তাজা রক্তে ফুটেছে শিমুল-পলাশ। মেঘে মেঘে বজ্র এঁকে দেশজুড়ে ছুটেছে উদ্ধত তর্জনীর ডাক। স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর একটি জাতির চূড়ান্ত সময় ছিল এটি। ওই মার্চ মাস ছিল একইসঙ্গে সর্বোচ্চ ধৈর্য্য ধরে চূড়ান্ত পদক্ষেপের মহেন্দ্রকাল। দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ পাড়ি দেওয়া বঙ্গবন্ধুর প্রজ্ঞার কাছে সেই বসন্তেই হার মেনেছে পাকিস্তানিদের কূটচাল। ফলাফল, ৯ মাস যুদ্ধের পর পৃথিবীর বুকে ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ। বিগত দুই হাজার বছরে অনেকবার নিজস্ব রাষ্ট্র গড়তে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছে যে জাতি, বঙ্গবন্ধুর বিচক্ষণ ও পরাক্রমশালী নেতৃত্বে সফলকাম হলো সেই বাঙালি। আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসে এই মার্চের প্রতিটি দিন ছিল গুরুত্বপূর্ণ। একটু ভুল-ভাল হলেই হাজার বছরের স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল।
    ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয় এবং সরকার গঠনের পরও, পাকিস্তানি জান্তা কর্তৃক তা বাতিল করার ইতিহাস ভুলে যাননি বঙ্গবন্ধু। তাই ১৯৭০-এর জাতীয় নির্বাচনের একচেটিয়া বিজয়ের পরও ,পুরোদস্তুর সতর্ক হয়ে প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে থাকেন তিনি। দেশজুড়ে তখন ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানের জয়ধ্বনি, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর,বাংলাদেশ স্বাধীন কর’ স্লোগানে স্লোগানে স্বাধীনতার উম্মাদনায় তখন মগ্ন জনতা। কিন্তু পাকিস্তানিদের পরিকল্পনা আঁচ করতে পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাই দেশবাসীকেও ধীরে ধীরে প্রস্তুত করছিলেন। স্বৈরাচার ইয়াইয়া যখন ১ মার্চ বেতারে ঘোষণা দিয়ে ৩ মার্চের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বাতিল ঘোষণা করে, তখন উত্তাল হয়ে ওঠে সারা দেশ। দেশব্যাপী ২ ও ৩ মার্চ হরতালের ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
    কিন্তু আন্দোলন নস্যাৎ করার জন্য রাতেই পাকিস্তানি জান্তারা কার্ফ্যু ঘোষণা করে। কিন্তু তাদের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে মিছিল বের করে শ্রমিক-ছাত্র-জনতা। একাধিক স্থানে মিছিলের ওপর গুলি চালায় হানাদাররা। কিন্তু গণমানুষের প্রতিরোধের মুখে ২ মার্চ অচল হয়ে পড়ে পুরো বাংলাদেশ। এদিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ওড়ানো হয় বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত পতাকা। পাকিস্তানিদের নৃশংসতার প্রতিবাদ জানিয়ে বঙ্গবন্ধু এদিন একটি বিবৃতি দেন। অবিলম্বে সামরিক আইন প্রত্যাহার ও জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আল্টিমেটাম দেন তিনি। একই সঙ্গে ৭ মার্চ পর্যন্ত আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ৩ মার্চ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন আধাবেলা হরতালের ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। সব রকমের সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যাংক, সচিবালয়, কোর্ট-কাচারি, যোগাযোগ ব্যবস্থা, কলকারখানা, শিল্প-বাণিজ্যিক সংস্থা, বন্ধ করার নির্দেশ দেন। ৩ মার্চকে ঘোষণা করেন জাতীয় শোক দিবস।
    ২ মার্চ দিন ও রাতে, ঢাকাসহ সারাদেশে হানাদার বাহিনীর গুলিতে শতাধিক ব্যক্তি নিহত ও কয়েকশ’ মানুষ আহত হয়। কিন্তু তাতে দমে না গিয়ে, উল্টো আন্দোলনের গতি বৃদ্ধি পায় ৩ মার্চ। বিকালে পল্টন ময়দানে ছাত্রলীগের জনসভায় বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে পাঠ করা হয় স্বাধীনতার ইশতেহার। জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত, বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমারেখা, রাষ্ট্রীয় মূলনীতি ও রাষ্ট্রের রূপরেখা ঘোষণা করা হয়।
    ৪ মার্চ আরো উত্তাল হয়ে ওঠে দেশ, দাবানলের মতো ছড়িয়ে যেতে থাকে আন্দোলন। চট্টগ্রামে নিহত হয় শতাধিক ব্যক্তি। ‘পিন্ডি না ঢাকা- ঢাকা, ঢাকা’ স্লোগানে প্রকম্পিক হয়ে ওঠে পুরো দেশ। অস্ত্র সংগ্রহ করতে শুরু করে ছাত্র ও যুব নেতারা। দেশব্যাপী সংগ্রাম কমিটি গঠনের কাজ শুরু হয়। বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হওয়া অসহযোগ আন্দোলন এগিয়ে যেতে থাকে স্বাধীনতার দিকে। মূলত এই ভূখণ্ডের ওপর থেকে কর্তৃত্ব হারিয়ে ফেলে পাকিস্তানি হানাদাররা।
    ১৯৭১ সালের মার্চের প্রথম সপ্তাহেই পুরোপুরিভাবে ভেঙে পড়ে পাকিস্তানিদের শাসন ব্যবস্থা। শহরের শান্তি রক্ষার্থে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীরা টহল দিতে শুরু করে। রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রে ‘ঢাকা বেতার কেন্দ্র’ এবং পাকিস্তান টেলিভিশন ‘ঢাকা টেলিভিশন’ নামে অনুষ্ঠান প্রচার শুরু করে। বেতার ও টেলিভিশনে বাজতে শুরু করে দেশাত্মবোধক গান। যেকোনো মূলে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য জনগণকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন বঙ্গবন্ধু। ৫ ও ৬ মার্চেও একই অবস্থা বিদ্যমান থাকে। অফিস-আদালত ও খাজনা বন্ধ রেখে অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলেন বঙ্গবন্ধু। এমনকি ৭ তারিখে সার্বিক নির্দেশনা দেবেন বলেও জানান।
    ৭ মার্চ: চূড়ান্ত রণ-কৌশলের নির্দেশনা দেন বঙ্গবন্ধু
    ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ স্বাধীনতা সংগ্রামের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ এসে সমবেত হয় ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। কয়েক বর্গ মাইল এলাকা লোকারণ্য হয়ে যায়। ‘তোমার দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ। উড়তে থাকে বাংলাদেশের পতাকা। পরিবেশিত হয় জাতীয় সংগীত। বেলা ৩টার পর মঞ্চে ওঠেন বাঙালির আশা-আকাঙক্ষার প্রতীক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার জন্য সার্বিক নির্দেশনা দেন তিনি। পাকিস্তানকে পুরোপুরিভাবে অচল করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ থেকে বাংলার সচিবালয়, কোর্ট-কাচারি, আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সবকিছু অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ থাকবে।… যে পর্যন্ত আমার এ দেশের মুক্তি না হবে, খাজনা, ট্যাক্স বন্ধ করে দেওয়া হলো।… দুই ঘণ্টা ব্যাংক খোলা থাকবে যাতে মানুষ তাদের মায়নাপত্র নেবার পারে। কিন্তু পূর্ব বাংলা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে এক পয়সাও চালান হতে পারবে না।’
    কিন্তু তীব্র অসহযোগ আন্দোলনের কারণে গরিব-দুঃখী মানুষের যেনো সমস্যা না হয়; সেজন্য রিকশা, ঘোড়ার গাড়ি, লঞ্চ, রেল চালু রাখতে বলেন বঙ্গবন্ধু। এছাড়াও চাকরিজীবীদের ২৮ তারিখে গিয়ে বেতন তোলার নির্দেশনাও দেন। যার যা আছে, তাই নিয়ে, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে চূড়ান্ত নির্দেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এরপর সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে অসহযোগ আন্দোলনের ঢেউ। জীবন বাজি রেখে আপামর জনতার যুদ্ধে নামার পেছনে এই ভাষণের প্রভাব অনবদ্য। এমনকি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এর প্রভাব ছিল ব্যাপক। পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী অনেক গবেষণা হয়েছে এই ভাষণ নিয়ে। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণকে একটি অনন্য রণকৌশলের দলিল বলে অভিহিত করেছেন কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো। দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছেন, ‘এটি আসলে স্বাধীনতার মূল দলিল।’
    ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর চূড়ান্ত নির্দেশনার পর দেশের সব সরকারি-আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও কর্মচারী সমিতির পক্ষ থেকে কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। ব্রিটেন প্রবাসী ১০ হাজার বাঙালি লন্ডনে স্বাধীন বাংলার দাবিতে বিক্ষোভ করে। একদিকে পাকিস্তান সরকার অকার্যকর হয়ে যাওয়া, অন্যদিকে আরো বড় ত্যাগের প্রস্তুতি চলছিল তখন দেশজুড়ে। ৯ মার্চ, পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ঢাকা আসার ঘোষণা দেন পাকিস্তানি স্বৈরাচার ইয়াহিয়া খান। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশি সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘সাত কোটি বাঙালি আজ তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি চায়। আমরা কোনো আপোস করতে রাজি নই।’
    আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা
    যতোই দিন গড়াতে থাকলো, আন্দোলনের তীব্র্রতাও বাড়তে থাকলো। ১১ মার্চ, সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তারা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানান। এমনকি সিনেমা শুরুর আগে, সিনেমা হলেও পাকিস্তানের জাতীয় সংগীতের পরিবর্তে ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গানটি বাজানো শুরু হয়। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা অনুসারে, ১৩ মার্চ দেশের প্রতিটি এলাকায় এলাকায় গঠিত হয় সংগ্রাম কমিটি। পাকিস্তানের পুরো শাসন ব্যবস্থা কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
    ১৪ মার্চ বঙ্গবন্ধু তার বিবৃতিতে বলেন, ‘… আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধররা যাতে স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসাবে এবং মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারে, সেজন্য আমরা মরতেও প্রস্তুত।… মুক্তির লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাব।… বাংলাদেশের মুক্তির উদ্দীপনা নিভিয়ে দেওয়া যাবে না।’
    পাকিস্তানি স্বৈরাচার জেনারেল ইয়াহিয়া ঢাকায় আসে ১৫ মার্চ। কালো পতাকা দেখানো হয় তাকে। কোথাও কোথাও স্বাধীন বাংলার পতাকাও ওড়ানো হয়। ১৬ মার্চ থেকে শুরু হয় আলোচনা। মূলত আলোচনার নামে পাকিস্তানিরা সময়ক্ষেপণ করছিল এবং তাদের সেনাবাহিনী ও অস্ত্র আনছিল। বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার পর, ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসকে ‘প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালনের নির্দেশ দেন বঙ্গবন্ধু। তিনি ধানমন্ডির নিজ বাড়িতেও স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন এদিন। দেশজুড়ে শুরু হয় পাকিস্তানি পণ্য বর্জন।
    ২৫ মার্চ ইয়াহিয়া খান সাদা পোশাকে গোপনে ঢাকা ছেড়ে চলে যান। এই খবর পাওয়া মাত্র দলীয় নেতাকর্মীদের মাধ্যমে দেশের সব প্রান্তে স্বাধীনতার চূড়ান্ত বার্তা পাঠাতে শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। রাতের অন্ধকারে ঘুমন্ত বাঙালির ওপর হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে সশস্ত্র পাকিস্তানি সেনারা। সঙ্গে সঙ্গে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার ঘোষণায় তিনি বলেন, ‘…এটাই সম্ভবত আমার শেষ বার্তা। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।… পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবেন….।’ (অনূদিত)। ২৫ মার্চ রাত ১২টার পর তথা ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর নিজের কণ্ঠের এই ঘোষণা বিশেষ ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সম্প্রচারিত করা হয়। চট্টগ্রামের নোঙর করা এক বিদেশি জাহাজও এই বার্তা গ্রহণ করে। রাতেই চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতারা এই বার্তা কপি করে বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দেন।
    ২৭ মার্চ আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান পত্রিকগুলোতে এই স্বাধীনতা ঘোষণার কথা ফলাও করে প্রচার করে। ব্রিটেনের ‘দ্য টাইমস’ পত্রিকার শিরোনামে বলা হয় ‘…শেখ মুজিব ডিক্লেয়ার্স ইস্ট-পাকিস্তান ইন্ডিপেন্ডেন্ট’। দ্য গার্ডিয়ানের সংভাদে বলা হয়, ‘একটি গোপন বেতার কেন্দ্র থেকে শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছে’। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস ও দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকাতেও শেখ মুজিব কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণার কথা বলা হয়েছে।
    বিশ্বজুড়ে ‘জয় বাংলা’
    ব্যাস, শুরু হয়ে যায় যায় মুক্তিযুদ্ধ। সর্বোচ্চ নেতার নির্দেশ পাওয়ার পর দলে দলে যুদ্ধে যোগ দেন কিশোর-তরুণ থেকে শুরু করে শ্রমিক-কৃষক, ছাত্র-জনতা সবাই। বঙ্গবন্ধুর নামে পরিচালিত হতে থাকে এই যুদ্ধ। অবশেষে ত্রিশ লাখ মানুষের আত্মদানের বিনিময়ে অর্জিত হয় মহান স্বাধীনতা।
    বঙ্গবন্ধুই বাঙালি জাতির সেই সৌভাগ্যবান পুরুষ, যাকে কেন্দ্র করে দুহাজার বছরের লালিত স্বপ্ন পূরণ করেছি আমরা। শোষিত মানুষের জন্য সংগ্রামী চেতনার কারণে স্বাধীনতার পর বিশ্বনেতৃবৃন্দের কাছে বিশেষ মর্যাদা পান তিনি। বাঙালির মুক্তিদাতা থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন সারা বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর, একজন গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বনেতা।

    Share. Facebook WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা
    Next Article অগ্নিঝরা মার্চ: ২ মার্চ ১৯৭১: পরিস্থিতি নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিবৃতি
    JoyBangla Editor

    Related Posts

    রক্ত দিতে বার্ন ইনস্টিটিউটে ছুটে এলেন তৃতীয় লিঙ্গের শতাধিক মানুষ

    July 22, 2025

    গোপালগঞ্জে বলপ্রয়োগ ও গুলি: রাষ্ট্র কি দায় এড়াতে পারে, প্রশ্ন মানবাধিকার সংগঠনসমূহের

    July 20, 2025

    রাজনীতিতে এনসিপিকে প্রতিষ্ঠা করতে সামরিক বাহিনী ও যুদ্ধযান ব্যবহার

    July 18, 2025

    এই নৃশংসতার কি কোনো শেষ নাই?

    July 13, 2025
    Leave A Reply Cancel Reply

    সম্পাদকের পছন্দ

    ডিগ্রি নাই, সমস্যা নাই!

    July 30, 2025

    গঙ্গাচড়ায় হিন্দু বাড়িঘরে হামলা-লুটপাটের ঘটনায় আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নিন্দা

    July 30, 2025

    ইউনুসের দুঃশাসনের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নীলিমা আকতার চাকরিচ্যুত

    July 30, 2025

    গঙ্গাচড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলায় নিন্দা বিভিন্ন রাজনৈতিক ও মানবাধিকার সংগঠনের

    July 30, 2025
    • Facebook
    • Twitter
    • Instagram
    • TikTok
    মিস করবেন না
    Education [ শিক্ষা ]

    ডিগ্রি নাই, সমস্যা নাই!

    By JoyBangla EditorJuly 30, 20250

    ।। মাহতাব  আহমেদ।। “আমার দাদা ছিলেন চৌধুরী, আমি আবার কাঠমিস্ত্রি হই?”, এটাই আমাদের সেই চিরাচরিত…

    গঙ্গাচড়ায় হিন্দু বাড়িঘরে হামলা-লুটপাটের ঘটনায় আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নিন্দা

    July 30, 2025

    ইউনুসের দুঃশাসনের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নীলিমা আকতার চাকরিচ্যুত

    July 30, 2025

    গঙ্গাচড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলায় নিন্দা বিভিন্ন রাজনৈতিক ও মানবাধিকার সংগঠনের

    July 30, 2025

    সাবস্ক্রাইব

    সর্বশেষ খবরের সাথে আপডেট থাকুন।

    About Us
    About Us

    মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও লালন করে দেশ ও বিদেশের খবর পাঠকের কাছে দুত পৌছে দিতে জয় বাংলা অঙ্গিকার বদ্ধ। তাৎক্ষণিক সংবাদ শিরোনাম ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পেতে জয় বাংলা অনলাইন এর সঙ্গে থাকুন পতিদিন।

    Email Us: info@joybangla.co.uk

    Our Picks

    ডিগ্রি নাই, সমস্যা নাই!

    July 30, 2025

    গঙ্গাচড়ায় হিন্দু বাড়িঘরে হামলা-লুটপাটের ঘটনায় আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নিন্দা

    July 30, 2025

    ইউনুসের দুঃশাসনের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নীলিমা আকতার চাকরিচ্যুত

    July 30, 2025

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.