
।। মাহবুবুর রহমান ।।
সে দৃশ্যটি ভুলতে পারি না। মনের আয়নায় বার বার ভেসে উঠে। এবার লিখে যদি মোছা যায়, রক্ষে। ইউনুস সাহেব নিউইয়র্ক এসেছেন। কয়েক মাস আগে। দেখি, একজন তাঁকে বগলদাবা করেছেন। চেনা চেনা মনে হলো। হ্যা, তিনি পিটার হাস, সাবেক রাষ্ট্রদূত। অভিভাবক বা গুরুজন কোন শিশুকে এক হাত পেচিয়ে জড়িয়ে ধরে ঝাকুনি দিতে দিতে আশীর্বাদ দিতে থাকেন, হ্যা বেশ করেছো, ভালো করেছো, ভালো থাকো।’ মিঃ হাস ঠিক সে রূপ বগলদাবা বা কনুইদাবা করে এমন চিপা মারলেন, জানি না ইউনুস সাহেবের হাড়গোর স্থানচ্যুত হলো কিনা, তবে দেখা গেলো তাঁর মুখে ম্লান হাসি। প্রশ্ন আমার, ইউনুস সাহেব কি পিটার হাসের কলিগ? আত্মীয়? অধঃস্থন কর্মচারী? কোন ক্ষমতাবলে তিনি একটা দেশের প্রধান মন্ত্রীকে(প্রধান উপদেষ্টা) বগলদাবা করলেন? বলেছেন কিনা জানি না, ওয়েলডান গুড বয়!
গল্পে আছে, সৈনিকের কাছে কমান্ডিং অফিসার জানতে চাচ্ছেন, কামানে গোলাবর্ষণ হলো না কেন? সৈনিকটি জবাব দিল, স্যার একুশটি কারণ।
বল, শুনি সব কারণ।
স্যার, প্রথম কারণ, বারুদ ছিল না। দ্বিতীয় কারণ- থাম থাম, অফিসার থামিয়ে দিয়ে বললেন, আর বিশটি শুনতে হবে না। বারুদই যেখানে নেই, গোলাবর্ষণ হবে কি করে?
নাহিদ ইসলামের অক্টোবরের মন্তব্য মনে রেখেছি। তাই তার দল নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই।
‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনক মনে করে না’ অক্টোবরের মধ্যভাগে এ কথাটি বলেছেন তৎকালীন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। সরকারের কোন উপদেষ্টা এ কথার প্রতিবাদ করেননি, এমনকি এ কথাও বলেন নি, এ মন্তব্য নাহিদ ইসলামের সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত, সরকারের নয়।
সেই নাহিদ ইসলাম তাদের গড়া নতুন দলের (জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি) প্রধান হয়েছেন। এ দল কেমন হবে, বুঝতে গবেষণার প্রয়োজন নেই। দলের ঘোষণা ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ নিয়ে যেমন ধুয়াশা সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ শ্লোগানও তাদের চরিত্র নির্ধারণে দিক নির্দেশনা দিচ্ছে। এটা পরিষ্কার, তাদের চাই একটা ‘পূর্ব পাকিস্তান’।
ইংলিশ ক্রিকেটার নাসির হোসেইন। তাঁর একটি মন্তব্য, যদিও ক্রিকেট বিষয়ক, তবুও ইঙ্গিতপূর্ণ, বর্তমান বাংলাদেশকে চেনার এক সহজ উপায়। উল্লেখ্য, চ্যাম্পিয়ন ট্রফি থেকে বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ। হেরেছে ভারত ও নিউজিল্যান্ডের কাছে। বৃষ্টির কারণে খেলা না হওয়ায় পাকিস্তানের সাথে ১-১ পয়েন্ট ভাগাভাগি হয়েছে। ওয়ান ডে ক্রিকেটে এক সময় শক্তিশালী ছিল যে দেশ সে দেশ এখন আফগানিস্তানের নীচে। নাসির হোসেইন বলেছেন, বাংলাদেশ ক্রিকেটে ১৫ বছর পিছিয়ে গেছে। অর্থাৎ ১৫ বছর আগে যেমনটি ছিল এখন ঠিক তাই। আর হবেই না কেন? অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানতো রিসেট বাটনে সব মুছে দিয়েছেন। ক্রিকেটের প্রধান স্টারের হাতে বেড়ী পরানোর জন্য তাদের চেষ্টার ত্রুটি নেই। আরেক স্টারের বাড়ী ঘরে হানা, আগুন। মব হামলা। ক্রিকেট নিয়ে ভাববে কেন? তাদের কাজ স্বৈরাচারের দোসর পাকড়ানো, পূর্ব পাকিস্তান কায়েম করা!
নবনীতা চৌধুরীর এক ভিডিও শোনার পর প্রশ্ন এলো মনে, প্রায়োরিটি কার? জাতিসংঘ না দেশের? আর্মির মালিক কে? এ জিজ্ঞাসা রাখবো কার কাছে? এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এক আলোচনায় শুনেছিলাম, ২০০৬-০৭ সালে মঈন ইউ আহমদরা বঙ্গভবনে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ডক্টর ইয়াজউদ্দিনের সাথে দেখা করে জাতিসংঘের এক ভুয়া চিঠি দেখিয়েছিলেন, যাতে হুমকী ছিল দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে শান্তি মিশন থেকে বাংলাদেশ বাদ পড়তে পারে।
আর এবার? শোনা যায়, সেনাপ্রধান আগের রাতেও প্রধান মন্ত্রীকে বলে এসেছেন, ৫ আগস্ট ঢাকার প্রবেশপথগুলো বন্ধ থাকবে। বাইরে থেকে কেউ ঢুকতে পারবে না। বাস্তবে হলো কি? সবগুলো পযেন্ট দিয়ে জনতার স্রোত নগরে প্রবেশ করলো। সে দিনের দৃশ্য দেখে দেখে এই নিউইয়র্কে এক গৃহবধু বলছিলেন, সৈনিক-জনতার হাসিখুশী মুখ ও হাত মিলানো বলে দেয়, শেখ হাসিনাকে ছাত্র-জনতা নয়, সেনাবাহিনী বিদায় করেছে। স্ট্যাচু ভাঙার কাজেও দেখা গেলো তাদের। আমারও বলতে দ্বিধা নেই, সেনাবাহিনী পিছটান দেয়ায় শেখ হাসিনার পতন হয়েছে।
সেনাবাহিনীর এ পিছটানের কারণ কি? অনেকে অনেক কথা বলছেন, নানা কারণ দেখাচ্ছেন। নবনীতা চৌধুরীর আলোচনায় যা জানা গেলো, জাতিসংঘ থেকে বলা হয়েছিল জনতার উপর মিলিটারী গুলী চালালে শান্তি মিশন থেকে বাংলাদেশকে বাদ দেয়া হবে! মোক্ষম কারণ। এ ঝুকি কে নিবে? জনতার উপর গুলী আমরাও সমর্থন করি না। তবে অরাজক মব নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আছে, বিশ্বমানের দক্ষতা ও স্বীকৃতি আছে। প্রয়োজনে দেশ কেন তাদের সেবা থেকে বঞ্চিত হলো? দেশের সৈন্যরা যদি সব সময় জাতিসংঘের সেবায়ই নিয়োজিত থাকে তবে দেশের সেবা করবে কখন, কি ভাবে? আজীবন কি বাংলাদেশের নাকের ডগায় মূলা ঝুলতে থাকবে? নাকি কোন বিকল্প আছে?
-লেখক নিউইয়র্ক প্রবাসী সাংবাদিক।