।। আরমান রশীদ ।।
দেখছি সারা দেশে ধর্ষনবিরোধী আন্দোলন মঞ্চস্থ হচ্ছে। এটারও নেতৃত্ব দিচ্ছে বৈষম্য বিরোধীদের নেতা নেত্রীরাই। দেখলাম নবগঠিত NCP ও শেষ পর্যন্ত যোগ দিয়েছে এতে। ইসলামী ছাত্র সমাজের নামেও দেখলাম এক দল এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে। তাদের দাবী? ২৪ ঘন্টার মধ্যে বিচার চাই। অর্থাৎ সেই মব সংস্কৃতিরই ধারাবাহিকতা চলমান‚ কেননা ২৪ ঘন্টার মধ্য কারোই সুষ্ঠ বিচার সম্ভব না। অন্যদিকে দেখলাম কোথায় যেন ধর্ষনের দায়ে অভিযুক্তকে আইনী সহায়তা দিতে আসা আইনজীবীকেও মব পেটাচ্ছে। এদের কাউকে দেখলাম না অর্নব নামে যে ছেলেটাকে তৌহিদী জনতা ছাড়িয়ে নিয়ে গেল তাকে পূণরায় গ্রেপ্তারের দাবী জানাতে। দেখলাম না অগাস্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ে ছাত্রলীগের মেয়েদেরকে তাদের যে সহপাঠিরা হাত পা বেধে ধর্ষকদের হাতে তুলে দিয়েছিল তাদের বিচারের দাবী করতে। দেখলাম না গাজিপুরে দুই নারীকে যৌনকর্মী আখ্যা দিয়ে যে পশুর দল তাদের চরম হেনস্থা করে চুল কেটে দিল তাদের বিরুদ্ধে সরব হতে। দেখলাম না পাচ বছর বয়সী ছোট্ট হিন্দু শিশুর যোনি কেটে ধর্ষণ করা সাইফুল ইসলাম নামের যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে মুক্ত করে দেয়ার প্রতিবাদ করতে। দেখলাম না এসব নরপিশাচদের যে বিচারকরা ছেড়ে দিয়ে সারা দেশে ধর্ষণের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি চালু করেছে তাদের বিরুদ্ধে একটা শব্দ উচ্চারণ করতে। দেখলাম না সারাদেশে মাদ্রাসাগুলিতে প্রতিদিন যে লক্ষ লক্ষ শিশু ধর্ষিত হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেও একটা শব্দ উচ্চারন করতে। এই সুযোগে আরেক দল জোর দাবি জানাচ্ছে ইসলামী শরিয়া দিয়ে ধর্ষনের বিচার হউক যা কিনা ধর্ষিতাদেরই নিপীড়নের অস্ত্র হয়ে উঠবে।
একটা আন্দোলনের উদ্দেশ্য আপাতদৃষ্টিতে যতই মহৎ মনে হোক না কেন সেটা যদি ইতরেরা নেত্রীত্ব দেয় এবং এক পাল হুজুগে গাড়লেরা সমর্থন দেয়‚ তাহলে সেটার পরিনতি কি হয় সেটা আমরা ২৪ এ দেখেছি। এই আন্দোলন সমর্থনকারীদের কেন গাড়ল বললাম? কেননা উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলি কেন তাদের দাবীনামায় ঠায় পাইনি সেটা তারা তাদের নেত্রীত্বের কাছে প্রশ্ন করতে ব্যার্থ হয়েছে। নেত্রীত্ব এদের এজেন্ডা সেট করে দিচ্ছে আর এরা ভেড়ার পালের মতো “আসিয়া আসিয়া” রবে আকাশ বাতাস কাপাচ্ছে‚ ঠিক যেমনটা তারা কদিন আগেই করেছিল “রাজাকার রাজাকার” ধ্বনি তুলে। মব সন্ত্রাস বন্ধ না করে ‚ বরং সেটাকে আরো উষ্কে দিয়ে ‚ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে না এনে দেশে এই খুন ডাকাতি লুন্ঠন ধর্ষন বন্ধ করা সম্ভব না। এদের এতোদিনে বুঝা উচিৎ এগুলি সবই এই সরকারের সাধ্যের বাইরে। শুধুমাত্র স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের মতো কোন টোটকা ঝাড়ফুঁক দিয়ে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তোরনের সম্ভাবনা নেই। জরুরি অবস্থা জারি করে সব সমন্বয়কদের গ্রেপ্তার ‚ মবের উষ্কানীদাতাদের আটক ‚ ১৩৮ কিশোর গ্যাং এর বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযান পরিচালনা‚ সর্বোপরি জুলাই থেকে শুরু হওয়া প্রতিটা সন্ত্রাসের সাথে যুক্তদের বিচারের আওতায় আনা‚ এসব ছাড়া এই পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব না।
দেশ ইতিমধ্যে একটা অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিনত হয়েছে। দ্রুত নির্বাচন দিয়ে দেশকে সাংবিধানিক ধারায় ফেরাতে না পারলে এই দেশের আর কোন আশা নেই। সময় খুবই দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে।