ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় তা নিয়ন্ত্রণে এনেছে ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা রাশেদ বিন খালিদ জানান, ১০ই মার্চ, সোমবার সকাল ৯টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ভবনের নিচতলায় জেনারেটর ভবনে বৈদ্যুতিক গোলোযোগ থেকে আগুন লেগে যায়।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায় এবং সকাল ৯টা ৪৬ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
তবে ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও দেখে নেটিজেনরা এ ঘটনাকে স্বাভাবিক দুর্ঘটনা বলে মেনে নেননি। তারা এর পেছনে কোনো দূরভিসন্ধি রয়েছে বলে মতামত দিয়েছেন।
সারা দেশে ১৫ হাজারের বেশি মুক্তিযুদ্ধ-বঙ্গবন্ধু-একাত্তরের স্মারক, ভাস্কর্য, ম্যুরাল, স্মৃতিস্তম্ভ এবং ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বাড়িসহ মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত বিভিন্ন স্থাপনায় ধ্বংসলীলা চালানো এবং গুঁড়িয়ে দেওয়ার ধারাবাহিকতার আলোকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সাধারণ মানুষ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অগ্নিকাণ্ডকে দুর্ঘটনা বলে মেনে নিতে পারছেন না।
ড. ইউনূসের রিসেট বাটনে চাপ দিয়ে ইতিহাস মুছে ফেলার পরিকল্পনারই আরেকটি বাস্তবায়ন মনে করছেন নেটিজেনরা। তাছাড়া, বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ পক্ষগুলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তি, যারা একাত্তরে পরাজিত হয়েছিল; গত বছরের ৫ই আগস্টের পর থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর আঘাত করেছিল তারাই, এখনও করে যাচ্ছে। সে কারণে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর তাদের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে, এমনটাই মনে করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ কাশেম।
সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেছেন, ‘ফায়ার সার্ভিস এসে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছে। তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। জাদুঘরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।’
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অফিস সেক্রেটারি কোহিনুর আক্তার বলেন, ‘জেনারেটর রুমে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। সেখানে জেনারেটরের কিছু ক্ষতি হয়েছে। অন্য কোথাও আগুন ছড়িয়ে পড়েনি বা বড়ো ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।’
প্রসঙ্গত, গত ২৭শে ফেব্রুয়ারি রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে বিসিএস প্রশাসন কল্যাণ সমিতির (বিয়াম ফাউন্ডেশন) ভবনের একটি কক্ষে বিস্ফোরণের পর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে একজন নিহত এবং একজন গুরুতর আহত হন। সেই ঘটনাটি চেপে যায় বেশিরভাগ গণমাধ্যমে। যে দুয়েকটিতে সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল, সেখানে একে এসি বিস্ফোরণকে আখ্যা দেওয়া হয়।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথমে নাশকতা বলে বিবৃতি দিলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেন ‘ভুল হয়েছে’ বলে। যদিও বিয়াম ফাউন্ডেশন সমিতি ২রা মার্চ বিবৃতিতে এ ঘটনাকে পরিকল্পিত নাশকতা বলে আখ্যা দিয়েছে। সেই সাথে তারা সিসিটিভি ফুটেজে বিস্ফোরণের জন্য দায়ী ব্যক্তির ছবিও প্রকাশ করে।
দেশে জঙ্গিবাদের বাম্পার ফলনের পাশাপাশি এভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নাশকতা ঘটানোর হার বাড়ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল।