ওয়াশিংটন ও লন্ডনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের দুই প্রেস মিনিস্টারের নিয়োগের তিন মাস পেরিয়ে গেলেও স্ব স্ব পদে যোগদান করতে পারেননি।
নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে ঢাকার ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের বাংলা বিভাগের সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা ওয়াশিংটন দূতাবাসে এবং বিবিসি বাংলার সদ্য সাবেক সাংবাদিক আকবর হোসেন মজুমদার লন্ডন দূতাবাসে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
দুজনই ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কট্টর সমর্থক হিসেবে পরিচিত।
অভিযোগ রয়েছে, বিদেশি অর্থায়নে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন ঘটানোর ক্ষেত্রে আরো বেশ কয়েকজন সমমনার সঙ্গে এই দুই সাংবাদিক পেশাদারিত্বের বাইরে গিয়ে নানা বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেন।
ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, বিদেশি মিশনে নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগকৃতদের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দেশের পূর্ব সম্মতির প্রয়োজন হয়। কূটনৈতিক রীতি অনুযায়ী এক্ষেত্রে আগেই নিয়োগপ্রাপ্তদের নাম-পদবী স্ব স্ব মিশন সংশ্লিষ্ট দেশে পাঠানো হয়। এরপর সেখান থেকে সম্মতি এলেই নিয়োগপ্রাপ্তরা কাজে যোগ দিতে পারেন।
তবে গোলাম মোর্তোজা ও আকবর হোসেনের ক্ষেত্রে সেই সম্মতি না আসায় তারা কাজে যোগ দিতে পারেননি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৩০শে অক্টোবর তৎকালীন তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ও বর্তমানে নবগঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সাংবাদিক গোলাম মোর্তোজাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রেস মিনিস্টার হিসেবে নিয়োগের জন্য লিখিত সুপারিশ করেন।
একইদিনে তিনি আরেকটি লিখিত সুপারিশ করেন। যেখানে তিনি আকবর হোসেন মজুমদারকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনস্থ বাংলাদেশি হাইকমিশনে প্রেস মিনিস্টার হিসেবে নিয়োগ দিতে বলেন। উপদেষ্টা নাহিদের সুপারিশেই মূলত এই দুই সাংবাদিকের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
গত বছরের ১৯শে নভেম্বর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ শাখার উপসচিব আবুল হায়াত মো. রফিকের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে ‘অন্য যে কোনো পেশা, ব্যবসা কিংবা সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান-সংগঠনের সঙ্গে কর্ম-সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে যোগদানের তারিখ থেকে দুই বছর মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস উইংয়ের মিনিস্টার (প্রেস) পদে সচিব পদমর্যাদায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ’ দেয়া হয়।
২৪শে নভেম্বর একই শর্তে অপর এক প্রজ্ঞাপনে, আকবর হোসেন মজুমদারকে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রেস উইংয়ের মিনিস্টার (প্রেস) হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়। দুই নিয়োগেই মেয়াদ বলা হয় যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী দুই বছর।
অবশ্য গোলাম মোর্তোজাকে সচিব পদমর্যাদায় নিয়োগ দেয়া হলেও আকবর হোসেন মজুমদারের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাবেক এক কূটনীতিক জানান, এ ধরনের নিয়োগের ক্ষেত্রে সচরাচর সংশ্লিষ্ট মিশনের দেশগুলো সহজেই সম্মতি দিয়ে দেয়। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানান, ১ থেকে ২ মাসের মধ্যেই এসব সম্মতি চলে আসে। ব্যতিক্রম কিছু ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ তিন মাস অবধি অপেক্ষা করার নজির আছে। তবে এই দুই নিয়োগের পর সাড়ে তিন মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। এখনও সম্মতি না আসাটা অস্বাভাবিক।
এক প্রশ্নের জবাবে ওই কূটনীতিক বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট দেশ সম্মতি দেবে না বলে না। তারা যা করে সেটা হলো, বিষয়টিকে বিলম্বিত করে। তবে সেটাও সব ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক বিলম্ব হয় না। যদি নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তির ব্যাপারে তাদের কোনো বিশেষ ‘অবজারভেশন’ থাকে তাহলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। আবার দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কও এখানে বিবেচিত হয়ে থাকে।
সাবেক ওই কূটনীতিক বলেন, ‘দুই কারণের মধ্যে যেটাই ঘটুক, তা দেশের জন্য খুব একটা ভালো বার্তা বহন করে না। প্রথমটি হলে আমরা কেন এমন ব্যক্তিদের নিয়োগ দিলাম সেই প্রশ্ন উঠতে পারে। আর দ্বিতীয়টি হলে তো বুঝতে হবে দুটি প্রভাবশালী দেশ আমেরিকা ও ব্রিটেনের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক সেই লেবেলে ওয়ার্ক করছে না।’ বৃত্ত রেজা, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বিডি ডাইজেস্ট।