বাংলাদেশে বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বেহাল দশা এবং মাত্রাছাড়া অপরাধের সমালোচনা করে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, আইনশৃঙ্খলার অবনতির জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস দায় এড়াতে পারেন না।
ফেসবুক পোস্টে এ বিষয়ে গভীর পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি লিখেছেন-
বাংলাদেশে সম্পূর্ণ আইনশৃঙ্খলার বিপর্যয় ইউনূস সরকারের বিচার ব্যবস্থাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার প্রত্যক্ষ ফল। প্রধান বিচারপতি থেকে শুরু করে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পর্যন্ত, পুরো ব্যবস্থাকে হুমকি ও সহিংসতার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়েছে, যার উদ্দেশ্য ছিল আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করা।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন নজির নেই যেখানে সহিংস জনতা প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের শীর্ষ বিচারকদের বাড়িতে হামলার হুমকি দিয়ে এবং পরিবারের সদস্যদের হত্যার ভয় দেখিয়ে তাদের পদত্যাগে বাধ্য করেছে। অপরদিকে, উচ্চ পর্যায়ের অপরাধী ও ইসলামী চরমপন্থীদের কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ধর্ষণ, হত্যা ও সশস্ত্র ডাকাতি প্রতিদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। মানুষ সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে।
জামায়াতে ইসলামি ও বিএনপি-সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের দুর্নীতি দমন কমিশন (ACC) এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (ICT-BD) মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলোর নেতৃত্বে বসানো হয়েছে। তাদের নীতি সহজ – ভুয়া মামলা দায়ের করা, বিচারকদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে সেগুলো গ্রহণ করানো, নিয়মিতভাবে জামিন বাতিল করা, এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে হাজার হাজার মানুষকে বেআইনিভাবে আটক করা।
ইউনূস আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সামনে কাঁদতে পারেন, নানা অজুহাত দিতে পারেন, কিন্তু বাস্তবতা হলো—বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলার এই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য সরাসরি তিনিই দায়ী। অবৈধ ও অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের পর থেকে তার সরকার—
পুলিশ হত্যা, শত শত থানায় হামলা, হাজার হাজার অস্ত্র ও গুলি লুটের ঘটনায় অভিযুক্তদের দায়মুক্তি দিয়েছে;
আওয়ামী লীগ-সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর ধারাবাহিক হামলার অনুমোদন দিয়েছে;
রাজনৈতিক দাঙ্গাকারীদের দ্বারা হাজার হাজার সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্থাপত্য, এমনকি বঙ্গবন্ধু জাদুঘর লুট ও আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া দেখেও নীরব থেকেছে;
সংগঠিত অপরাধ চক্রের শত শত দুর্ধর্ষ অপরাধী ও ইসলামি জঙ্গিদের কারাগার থেকে মুক্তি দিয়েছে;
যোগ্যতাকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে অবসরপ্রাপ্ত আমলা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা পদে বসিয়েছে;
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মূল্যবান সম্পদ অপব্যবহার করে আওয়ামী লীগ-সম্পৃক্তদের খুঁজে বের করে গ্রেপ্তার করছে, যার মধ্যে অপারেশন ডেভিল হান্ট-এ অন্তত ১৩,০০০ কর্মী ও সমর্থক গ্রেপ্তার হয়েছে;
ইসলামী মৌলবাদীদের অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছে, যাতে তারা নারীদের, সুফি মুসলিমদের, ধর্মনিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবীদের, শিল্প-সংস্কৃতি, বিনোদন, খেলাধুলা, বিচার বিভাগ এবং ব্যবসায় হস্তক্ষেপ করতে পারে, যা সরাসরি দেশের আইন লঙ্ঘন করে;
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে “স্টুডেন্টস অ্যাগেইনস্ট ডিসক্রিমিনেশন” (SAD) নামক সংগঠনকে সহায়তা করা এলাকাভিত্তিক কিশোর ও যুব অপরাধী গ্যাংদের মুক্তভাবে অপকর্ম চালানোর অনুমতি দিয়েছে।
ইউনূস সরকার শুরু থেকেই আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার কার্যক্রমকে ব্যঙ্গ করেছে। এখন, যখন জনগণ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছে, তখন ইউনূস নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে বাংলাদেশকে গাজার সঙ্গে তুলনা করার মতো সস্তা প্রচার চালাচ্ছেন।