শৈশবের চৌহদ্দি পেরিয়ে মানুষের সমাজ বোঝার আগে মর্মান্তিক মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আমাদের অপরাধী সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার দিকে আঙুল তুলে গেছে আছিয়া। জীবনের জৈবিক আহ্বান তো পরের বিষয়, পুতুল খেলার বয়স পেরোনোর আগেই তার জীবনের উপর হামলে পড়ল নখ-দন্ত সম্পন্ন পুরুষতন্ত্রে লালিত পশু। ঘৃণিত ধর্ষকেরা আছিয়ার মৃত্যুর জন্য সরাসরি দায়ী। আর ফ্যাসিস্ট ইউনূস সরকার পরোক্ষভাবে এই মৃত্যুর জন্য দায়ী।
বিগত বছরের ৫ আগস্টের পর দেশবিরোধী অপশক্তি একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ভাগ্যাকাশে যেন এক কালো অন্ধকার নেমে আসলো। মানুষের জানমালের ন্যূনতম নিরাপত্তার ব্যবস্থা কার্যকর থাকল না। যেন চোখের পলকে খোলনলচে বদলে গেল বাংলাদেশ। বাংলাদেশ অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হল এবং তাদের প্রতি সরকারের দুর্বলতা আজ জনগণের কাছে স্পষ্ট। শীর্ষ সন্ত্রাসী, চিহ্নিত জঙ্গি ও পিলখানার ঘটনায় সেনা অফিসারদের হত্যাকারীদের কারাগার থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি ধর্ষণের দায়ে সাজাপ্রাপ্তদেরও ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিরোধী মত দমনে ফ্যাসিস্ট ইউনূস সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে রাজনৈতিকভাবে ট্যাগ দিয়ে নির্বিচারে হয়রানিমূলক মামলা, হামলা ও হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। সুপরিকল্পিতভাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। একটা গোষ্ঠী যখন অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা দখল করে এবং অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে তখন তাদের পক্ষে দেশের জনগণকে সুশাসন ও ন্যায়বিচার দেয়া সম্ভব হয় না। আর যেখানে সুশাসন ও ন্যায়বিচার অনুপস্থিত সেখানে অন্যায় ও বেআইনি শক্তির প্রদর্শন চলে। তেমনিভাবে অবৈধ দখলদার ফ্যাসিস্ট ইউনূস সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে মবসন্ত্রাসের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। ধর্ষকেরা আছিয়াকে ধর্ষণের পর তাকে যেমন শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে তেমনই গণবিরোধী এই সরকার জনগণের পক্ষে উচ্চারিত শুভবোধ ও চিন্তার শক্তিকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার শাসনামলে সর্বোচ্চ নারী ও শিশুদের সুরক্ষার বিষয়টা অগ্রাধিকারমূলক। যে কোনো রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙে পড়লে এবং সামাজিক মূল্যবোধ ক্ষয়ে গেলে সবচেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয় নারী ও শিশু। কিন্তু আজকের বাংলাদেশে যেখানে কোনো মানুষই নিরাপদ নয় সেখানে দায়িত্বজ্ঞানহীন এই সরকার নারী ও শিশুর নিরাপত্তা জোরদার করবে কীভাবে?
আছিয়ার হৃদয় বিদারক মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমরা জানি, আছিয়ার পরিবারের সদস্যদের বুকে আছিয়াকে হারানোর শোকের চেয়ে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও বিচারের দাবির বারুদ জমাট বাঁধা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের এই স্পৃহাকে ধারণ করে। নারী ও শিশুসহ দেশের সকল মানুষের সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্যই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পথচলা। অথচ দেশের প্রতিটি মানুষ সর্বত্র নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলেও অবৈধ দখলদার ফ্যাসিস্ট ইউনূস সরকারের কর্তাব্যক্তিরা সেটার প্রতি ভাবলেশহীন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনে করে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে মানবিক সমাজ ও রাষ্ট্র পুনঃনির্মাণই এর একমাত্র সমাধান। আর এই লক্ষ্যে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই অবৈধ দখলদার ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটাতে হবে। জনগণের সম্মিলিত প্রয়াসের কাছে মানবিক বোধশূন্য এই অপশক্তি পরাজয় অবশ্যম্ভাবী।
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চিরজীবী হোক। তারিখ : ১৪ মার্চ ২০২৫