।। হামিদ মোহাম্মদ ।।
কেন নতুন সংবিধান, এই প্রশ্নের সহজ উত্তর, জামায়াতের নিবার্চনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামী দলটির নিবন্ধন নেই। জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রের মূল বিধান হলো সকল ক্ষমতার উতস আল্লাহ। কিন্তু বিদ্যমান সংবিধানে রয়েছে সকল ক্ষমতার উতস জনগণ। এই সাংঘর্ষিক বিধির দ্বন্ধের কারণে জামায়াতে ইসলামী গত নির্বাচনগুলোতে নিবন্ধন না-থাকায় অংশ নিতে পারেনি। এখন সংবিধান না-বদলালে জামায়াত থাকবে নির্বাচনের বাইরে। অতএব যে করেই হোক সংবিধান বদলানো বা নতুন সংবিধানের প্রশ্ন এসেছে।এই মাজেজা সাধারণ মানুষ না বুঝলেও যারা রাজনীতি করেন,বা রাজনীতি চর্চা করেন, তারা ভালো করেই বুঝেন, সংবিধান নতুন করে লেখার শোরগোল কারা তুলছে, কারা চায় নতুন সংবিধান।
অন্যদিকে, দাবার গুটির দ্বিতীয় যে চাল শুরু হয়েছে, তা নতুন দল সৃষ্টি।যাতে জামায়াতের বহমান ধারাটি বহাল থাকে। যদি বিদ্যমান সংবিধানে নিবার্চন করতে হয়, তবে জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে কিভাবে যাবে বা নির্বাচনে অংশ নেবে, সেই পথ তৈরী করার বিবেচনায় নতুন দল। আর নতুন দল এক বা একাধিক হবে সমন্বয়কদের দ্বারা। যে সমন্বয়করা শিবির, হিজবুত তাহরীর দ্বারা পরিচালিত রাজনৈতিক মোর্চা।এরা নিবন্ধন নেবে বিদ্যমান সংবিধানের বিধি মোতাবেক, যাতে সকল ক্ষমতার উতস জনগণ মেনেই, নিবন্ধন নেয়া হবে। এবং জামায়াতের লোকজন নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারে, সে পথ উন্মুক্ত রেখেই রাজনীতি মাঠ দখলে নেবে তারা, অর্থাত জামায়াতে ইসলামী। সমন্বয়কদের মধ্য থেকে রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ ঘোষিত হওয়ার পরও আরেকটি দল এপ্রিলে আসছে, প্রাক্তন ও নতুন শিবির কর্মীদের মধ্য থেকে, এমনই ঘোষণা এসেছে। এটা তাদের একের ভেতরে তিন-এই ফর্মূলা। তাই, দেখে শুনে মনে হচ্ছে-ইউনুসের দোয়ায় কথিত তিন দল ক্ষমতার অংশীদার হওয়া বা ভাগাভাগির স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করছে। কেননা, জামায়াতে ইসলামীর মর্মে রয়েছে তারা যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসাবে দেশের মানুষ মনে করে ও জানে। এই জন্য জামায়াতকে দেশের মানুষ তেমন ভোট দেয় না। তারা মনে করে,বিশ্বাস করে তাদের কর্মী বাড়লেও, ভোট বাড়েনি। তাই, ক্ষমতায় যেতে হলে বিকল্প পথ খোঁজাই তাদের দরকার।
দেশের মানুষ মনে করেছিল, আওয়ামীলীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর, নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ নিয়ে জুলাই আন্দোলনকারীরা যে তাদের ঠেকিয়ে দেয়া বা আওয়ামীলীগকে নির্বাচনে অংশ নিতে না-দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে, তার জবাবে নতুন কোনো সেক্যুলার রাজনৈতিক দল আসবে, ঘোষণা আসবে বিকল্প রাজনৈতিক দলের, উত্থান হবে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ দ্বারা র্নির্ণিত আরেকটি শক্তির। কিন্তু সেটা ঘটেনি। ঘটেনি কেন, সে প্রশ্ন ভিন্ন। হয়তো বর্তমান পরিস্থিতি অনুকুল নয়, বা সেই রকম কোনো প্রস্ততি নেয়ার মতো নেতৃত্ব অগ্রসর হচ্ছে না। যদিও, ছাত্রআন্দোলনের স্টেকহোল্ডারদের বক্তব্য অনুযায়ী আওয়ামীলীগকে কবর দেয়া হবে বা হয়েছে, সে দলের আদর্শকেও কবর দেয়া হবে।
আওয়ামীলীগ ধারণ করে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা তথা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত মুল্যবোধ। সংবিধানেও তা সংরক্ষিত। রিসেট বাটনে অতীতকে মুছে দেয়ার আসফালনটাও এই জায়গায় দাঁড়ানো।
রিসেট বাটনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করার রাজনীতি যারা শুরু করেছেন, তারা তো মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি বা পরাজিত শক্তিই। তাই মুক্তিযুদ্ধকে মুছে দিতে সংবিধান পরিবর্তন জরুরী, নয়া সংবিধান রচনা করতে হবে, নয়া দল গঠন করতে হবে, হচ্ছেও।
মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বিরোধী এই ধারা প্রতিষ্ঠায় সব খেলাই খেলছে জাময়াতে ইসলামী, মাঠে তারা একক দল এখন। বিএনপি নামক দলের পকেটে এতোদিন তারা ছিল, এখন বিএনপি তাদের পকেটে। চিত্র সম্পূর্ণ বদলে গেছে। তাই, সংবিধান বদল করে হোক বা নতুন দলের মাধ্যমে হোক, একমাত্র জামায়াতে ইসলামীর খেলা-ই বাংলাদেশে চলবে। এই জন্য চাই নতুন সংবিধান। কিন্তু জামায়াতের কাছে প্রশ্ন, দেশের মানুষ কি আঙুল চুষবে?